বার্তায় তারেক রহমান বলেন, চলমান রাজনীতিতে যেন দেশের অস্তিত্ব ঘিরেই বিভাজন সৃষ্টি হয়েছে। স্বাধীনতা আর সার্বভৌমত্বের যে সংজ্ঞা আমরা চিরকাল জেনে এসেছি, বাংলাদেশের ুদ্র একটি রাজনৈতিক গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে আজ সেই সংজ্ঞাকে বদলে ফেলছে। প্রতিবেশী যে রাষ্ট্রের সাথে আমাদের সম্পর্ক হতে পারে স্বাভাবিক এবং পারস্পরিক মঙ্গল ও সমঝোতাভিত্তিক, সেই সম্পর্ককে ব্যক্তিগত ও সঙ্কীর্ণ স্বার্থে ব্যবহার করে এই গোষ্ঠীটি আজ জনমতকে তাচ্ছিল্য করছে।
তিনি ১৮ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ইতিহাস ও রাজনীতির পালাবদল আমাদেরকে আজ অন্যরকম এক অবস্থানে নিয়ে এসেছে। সাধারণ রাজনৈতিক কর্মী থেকে আজ আমরা পরিণত হয়েছি বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রার সেনানীতে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’ সেøাগানের মর্মার্থ দেশবাসী আজ গভীরভাবে অনুভব করছে। উজ্জ্বল প্রভাতের পূর্বে রাত যেমন গভীর ও অন্ধকার হয়, তেমনি আমাদের ওপর নেমে এসেছে অন্য দেশের তাঁবেদারিতে নিমজ্জিত জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগের গুম, খুন, হামলা, মামলা ও নির্যাতনের স্টিমরোলার। আজ আমাদের লড়াই কোনো সাধারণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নয়; আজ আমাদের লড়াই একটি বন্দী জাতির মুক্তির জন্য এক অশুভ স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে।
তারেক রহমান বলেন, সেই অশুভ গোষ্ঠীই একদিন আমাকে আপনাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে অনেক দূরে নিয়ে গিয়েছিল। অসুস্থতার জন্য আজো আমি সশরীরে আপনাদের মধ্যে উপস্থিত নেই। তবে আমি প্রতিটি মুহূর্তে নিজেকে আপনাদের মধ্যেই অনুভব করি। আপনাদের ওপর আসা আঘাত, আপনাদের ত্যাগ, আপনাদের সংগ্রাম আমাকে সর্বদা আচ্ছন্ন করে রাখে। এখনই সময় সর্বশক্তি দিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার। আর নির্দেশনার জন্য অপো নয়; এখন থেকে ল্য একটাইÑ সব ুদ্র বিভাজন ভুলে স্বৈরাচারী সরকার আর তার প্রহসনের নির্বাচনকে যেকোনো মূল্যে প্রতিহত করতে হবে।
বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, আওয়ামী লীগের সুবিধাভোগী আর অন্ধ সমর্থক ছাড়া প্রতিটি বাংলাদেশী নারী ও পুরুষ আমাদের সাথে রয়েছেন। কেউ সশরীরে আছেন; আর বাকিদের সমর্থন, প্রেরণা ও দোয়া আমাদের সাথে আছে। দেশের মানুষ রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে মুক্তির কামনায় চেয়ে আছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের দিকে। এত বিপুল জনসমর্থিত একটি আন্দোলনের সাফল্য অনিবার্য ইনশা আল্লাহ। প্রয়োজন শুধু এই সংগ্রাম, যা চলে আসছে আমাদের বিপুল ত্যাগ-তিতিা, বহু সহযোদ্ধা ও নিরপরাধ সাধারণ মানুষের প্রাণের মূল্যেÑ সেই সংগ্রাম দেশ ও জাতির স্বার্থে অব্যাহত রাখা।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের পালাবদলেই এক সময়ে আজকের এই জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগ মতায় গিয়েছিল। মতায় যাওয়ার সেই প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হলেও গণতন্ত্রের স্বার্থে আমরা সেই প্রক্রিয়াকে মেনে নিয়ে বিরোধী দলে ছিলাম। কিন্তু গত পাঁচ বছরে দেশের সম্পদের অবিশ্বাস্য লুটপাট, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের লজ্জাজনক বিনাশ, আর রাজনৈতিক-বিরোধী ও সমালোচকদের নিষ্ঠুর দমন-পীড়নের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ প্রমাণ করেছে, তাদের মতা লাভের সেই প্রক্রিয়া প্রকৃতপইে কলঙ্কজনক ছিল।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশজুড়ে আজ চলছে এক গভীর রাজনৈতিক সঙ্কট। জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগের ওপর বিুব্ধ হয়ে আছে দেশের মানুষ। জনসমর্থন ও আত্মবিশ্বাস শূন্যের কোঠায় পৌঁছানো আওয়ামী লীগ সরকার গণমানুষের আশা-আকাক্সাকে তাদের হীন রাজনৈতিক স্বার্থের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে। রাষ্ট্র পরিচালনায় ব্যর্থতা, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের গুম-খুন, সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যা, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি, ধর্মপ্রাণ নাগরিকদের গণহত্যা আর দুর্নীতির স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সব অভিযোগের মুখে মানুষ বার বার এ সরকারের ওপর অনাস্থার কথা জানিয়ে দিয়েছে। স্থানীয় নির্বাচনগুলোয় প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও বিএনপি প্রার্থীদের ব্যাপক বিজয়ের মধ্য দিয়ে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অবস্থানÑ দু’টিকেই দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
তারেক রহমান বলেন, পুরো দেশ যেন আজ একটি কারাগার, যেখানে জানমালের নিরাপত্তা নেই; আছে কেবল ভীতি ও আতঙ্ক। নিরপে নির্বাচনে অপমানজনক পরাজয় আর গণহত্যা-নৈরাজ্য-দুর্নীতি-অপশাসন সৃষ্টির দায়ে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর ভয় থেকেই কি শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের এই অবস্থান? দেশবাসীর চাওয়া-পাওয়া, তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা, এসবের কি কোনোই মূল্য নেই? আওয়ামী লীগ কি আবারো চূড়ান্তভাবে সেই বাকশালে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেÑ যেখানে ভিন্ন মত, ভিন্ন আদর্শ আর সমালোচনাকে রাষ্ট্রযন্ত্র দ্বারা হত্যা করা হতো?
তিনি বলেন, বাকশালের পরিণতি সম্পর্কে আমরা সবাই জানি। সেই সময়ে তলাবিহীন ঝুঁড়িতে পরিণত হওয়া এ দেশের জন্য, এ দেশের মানুষের জন্য, এমনকি আওয়ামী লীগের জন্যও তা ভালো ফল বয়ে আনেনি। আমাদের সবার রাজনীতি যেহেতু দেশের কল্যাণার্থেই হওয়া উচিত, তাই মানুষকে সাথে নিয়ে উজ্জ্বল সম্ভাবনার দিকে যাত্রা না করে কেন আমরা আবার সেই অরাজক অতীতে সেই কালেই ফিরে যাব?
বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান এই ভিডিও বার্তায় বলেন, ২০০৬ সালে সংবিধান অনুযায়ী বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে আওয়ামী লীগ মানেনি। অভিযোগ করা হয়েছিল যে, তিনি বিএনপিপন্থী। অথচ আজ শেখ হাসিনা যে নিজেকে নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান বলে দাবি করছেন, তিনি কেবল অনিরপেই নন, খোদ আওয়ামী লীগের প্রধান। কোন ভরসায়, কিসের ভিত্তিতে কোন দল শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে?
তিনি বলেন, সংবিধান তো ঐশী বাণী নয় যে, এটিকে পরিবর্তন করা যাবে না। দেশের প্রতিটি মানুষের মতো আমিও প্রশ্ন করতে চাইÑ সংবিধানের জন্য জনগণ, নাকি জনগণের জন্য সংবিধান? জনগণের আশা-আকাক্সার প্রতিফলন ঘটাতে এ পর্যন্ত ১৫ বার আমাদের সংবিধান সংশোধিত হয়েছে। এমনকি পাশের দেশের সংবিধানে যদি ৯৮ বার সংশোধন হয়ে থাকতে পারে, তাহলে জনগণের চাওয়া অনুযায়ী, দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে আমরা কেন ষোড়শ সংশোধনী করতে পারব না? খবর অনলাইনের তাঃ- ৫ জানুয়ারি ২০১৩