পাকিস্তানে ধর্ষকদের শাস্তি হয় না

dw 12অনলাইন ডেস্কঃ- পাকিস্তানে প্রতি বছর বাড়ছে ধর্ষণের ঘটনা৷ সামাজিক প্রতিবন্ধকতা, নারীদের মত প্রকাশের অধিকার না থাকা এবং যর্থার্থ বিচার না হওয়ায় নারীর ওপর এই সহিংসতা বেড়েই চলেছে বলে মনে করছে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন৷ খুব বেশি দিন নয়, ২৪ জানুয়ারির ঘটনা৷ পাকিস্তানের মধ্যাঞ্চলে অবস্থিত রাদিওয়ালি গ্রামে পঞ্চায়েতের নির্দেশে গণধর্ষিতা হন ফজলান বিবি৷ ৩৫ বছর বয়সি ফজলান বিবির কোনো অপরাধ ছিল না৷ অপরাধী তাঁর ভাই, যিনি একজন বিবাহিত নারীর সাথে প্রেম করেছিলেন৷ এর শাস্তি হিসেবে পঞ্চায়েতে ফজলান বিবিকে গণধর্ষণের নির্দেশ দেন উপজাতীয় নেতারা৷তবে এক্ষেত্রে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে৷ সমাজ কর্মীদের অভিযোগ, ভাইয়ের প্রেমিকার আত্মীয়দের দ্বারা ধর্ষিতা হয়েছেন ফজলান বিবি৷ পুলিশ অবশ্য এ দাবির সঙ্গে একমত নয়৷ স্থানীয় পুলিশ প্রধান শহীদ রমজান জানান, ‘‘পঞ্চায়েতের নির্দেশের পর বিবিকে একটি মাটির ঘরে নিয়ে নগ্ন করা হয়েছিল, কিন্তু এরপর আর কিছু ঘটেনি৷ ঘটনার তদন্ত করে যাচ্ছি, কিন্তু এখনও পর্যন্ত ধর্ষণের ঘটনা প্রমাণিত হয়নি৷ এমনকি বিবিও ধর্ষণের কথা অস্বীকার করেছেন৷” অন্যদিকে, পাকিস্তানের নারী আন্দোলনের অন্যতম পুরধা মুখতারান মাই জানান, তিনি নানা মানুষের কাছ থেকে শুনেছেন যে ফজলান বিবির শ্লীলতাহানি হয়েছে৷ গত সপ্তাহে ফজলান বিবির সাথে দেখা করতে যান তিনি৷ বাড়ির কাছে পৌঁছানোর পর ৩০ জন ব্যক্তি তাঁকে জোর করে ফিরে যেতে বাধ্য করে৷পাকিস্তানের নির্যাতিত নারীর প্রতীক মুখতারান মাই ২০০২ সালে গণধর্ষণের শিকার হন৷ তিনিও একই কারণে ধর্ষিতা হয়েছিলেন৷ তাঁর গণধর্ষণ মামলার রায়ে ছয় আসামীর মধ্যে পাঁচজনকে খালাস করে পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট৷ বর্তমানে মাই সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার পাকিস্তানের নারীদের সহায়তার জন্য একটি সংস্থা পরিচালনা করেন৷ কিন্তু উপজাতীয় নেতাদের রোষের মুখে বহুবার পড়েছেন তিনি৷ই দুটি ঘটনা থেকেই প্রমাণ হয় পাকিস্তানে প্রথাগত বিধি-বিধান, পুলিশের আচরণ ও বিচার ব্যবস্থা নারীদের ওপর কতটা জুলুম করছে৷ ঘটনার পর ফজলান বিবি বা তাঁর কোনো আত্মীয় আইনের আশ্রয় নেননি৷ ঘটনাটি নিয়ে স্থানীয় পত্রিকায় লেখালেখি এবং বিভিন্ন মানবাধিকার ও নারী অধিকার সংগঠনের প্রতিবাদে এক সপ্তাহ পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে৷নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন, এ সব গ্রামের নারীদের অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, সামাজিক নানা প্রথার মধ্য দিয়ে যেতে যেতে তাঁরা সহিংসতা ও নির্যাতনকে নিজেদের জীবনের একটা অংশ হিসেবে মেনে নিয়েছেন, এমনকি ধর্ষিত হলেও তা মেনে নিচ্ছেন তাঁরা৷ কেননা যাঁরাই আইন আদালতের আশ্রয় নেন, সুবিচারের আশায় তাঁদের বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়৷গত বছরের ডিসেম্বরে পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বালিঘুর রেহমান পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষে এ ধরনের একটি বিষয় উপস্থাপন করেন৷ যেখানে বলা হয় রাজধানী ইসলামাবাদে গত পাঁচ বছরে ১০৩টি ধর্ষণের মামলা দায়ের হয়েছে, কিন্তু এতে একজনকেও শাস্তি দেয়া হয়নি৷ এসময় বিরোধী দলের সেনেটররা প্রতিবাদ জানিয়ে ‘ওয়াক আউট’ করেন৷ কিন্তু তিনি এই শাস্তি বাস্তবায়নের অঙ্গীকার করলেও এরপর এ বিষয়ে আর কোনো অগ্রগতি হয়েছে বলে শোনা যায়নি৷ ‘সাহিল’ নামে একটি নারী নির্যাতন বিরোধী সংগঠনের প্রোগ্রাম অফিসার আতা মহীউদ্দীন বললেন, এ সব সামাজিক প্রতিবন্ধকতা এবং বিচারের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে নারীদের ধর্ষণ, নির্যাতন ও সহিংসতার ঘটনা বেড়েই চলেছে৷ তাদের একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ১৯৯৬ সালের চেয়ে বর্তমানে ধর্ষণের হার বেড়েছে ৭.৬ ভাগ৷ অপর এক সংগঠন ‘আওরাত’ ফাউন্ডেশন বলছে, ২০১২ সালে পাকিস্তানে ধর্ষণ ও গণ ধর্ষণের ৮২২টি ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে৷নারী অধিকার কর্মী সারাহ জামান জানান, পুলিশ ও আদালতের জিজ্ঞাসাবাদের ভয়ে ৭০ ভাগ ধর্ষণের ঘটনা নথিভুক্ত হয় না৷ কেননা ধর্ষণের ঘটনায় দণ্ড প্রদানের ঘটনা বিরল, মাত্র ২ শতাংশ৷ মুখতারান বাই বলেন, ‘‘ধর্ষণ এমন একটি ঘটনা যার বেদনা সারা জীবন বয়ে চলতে হয়, কিন্তু তারপরও যদি ধর্ষকদের শাস্তি হয়, তবে কিছুটা হলেও শান্তি পাওয়া যায়৷ খবর DW.DE

 

 

 

 

 

 

Exit mobile version