অনলাইন ডেস্ক:- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হরতাল-অবরোধে নাশকতাকারীদের কঠোরহস্তে দমনের যে নির্দেশ দিয়েছেন তার কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী।
“যেকোনো উপায়ে দমন করুন, দায়িত্ব আমার” পুলিশের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এই বক্তব্য সম্পর্কে গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করে রিজভী আহমেদ বলেন, “যে কোনো উপায়ে দমনের পরিণতি কী তাহলে আরো অনেক লাশ খালে-বিলে-নদীতে ভেসে উঠবে? যৌথবাহিনী কর্তৃক চলবে গ্রামের পর গ্রামে তাণ্ডব দাহন, বিরোধী দলের আরো অসংখ্য নেতা-কর্মীদের হত্যার পর বলা হবে বন্দুকযুদ্ধের কাহিনী?”
গতকাল বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য বর্তমান সংকটকে আরও গভীর ও উপসংহারহীন করে তুলবে।”
তিনি বলেন, “বিরোধী দলের অস্তিত্ব রেখে কখনোই নাৎসী শাসন বজায় রাখা যায় না। তাই বাংলাদেশি নাজিরা বিরোধী দল, বিরোধী মত, সরকারকে সমালোচনা করার অধিকার যা সংবিধান ও বহুদলীয় গণতন্ত্রে স্বীকৃত-সেটিকে উচ্ছেদ করার চূড়ান্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উঠেপড়ে লেগেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।”
তিনি আরো বলেন, “জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য তাদেরকে হাইপার প্রপাগান্ডার ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। এই প্রপাগান্ডা একতরফা বিরোধী দলের বিরুদ্ধে।”
এ ব্যাপারে বিরোধী দলের পাল্টা বক্তব্যের সুযোগ থাকে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, “বিরোধীদলের পক্ষে কোনো গণমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশিত হলে সেই সংবাদ মাধ্যমটির মৃত্যু ঘটবে অথবা কোনো রকমে টিকে থাকলেও সেখানে সরকারি বুলি আওড়াতে বাধ্য করা হবে। আর বিরোধী দলের কথা বলার সুযোগ দূরে থাক তাদের বক্তব্য রাখার সব জায়গা কেড়ে নেয়া হয়।”
রিজভী আহমেদ বলেন, “পেট্রল বোমা ছুড়ে নিরীহ মানুষকে অগ্নিদগ্ধ করা শুধু অমানবিকই নয়, যারা এগুলির সাথে যুক্ত তারা পাশবিক বিবেকের অমানুষ। কিন্তু এ অপকর্মের দায় চাপানো হচ্ছে বিরোধী দলের ওপর। কারণ সরকারি শক্তির নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যম। তাদের হুকুমেই গণমাধ্যমে ঢালাও প্রচার চালানো হচ্ছে বিরোধী দলের বিরুদ্ধে। যেখানে বিএনপি চেয়ারপারসন ও ২০ দলীয় জোট নেতা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নিজ কার্যালয়ে অবরুদ্ধ, দলের মহাসচিবসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী কারাগারে, প্রায় লক্ষাধিক নেতা-কর্মী মিথ্যা মামলা কাঁধে নিয়ে বাড়ি ছাড়া, প্রায় প্রতিদিন সারাদেশে অসংখ্য নেতা-কর্মীদের বাসায় গিয়ে চলছে যৌথবাহিনীর তাণ্ডব, চলছে ক্রসফায়ারের নামে বিরোধী জোটের নেতা-কর্মীদের হত্যা, সেই রকম ভয়-আতঙ্ক ও উৎকন্ঠার মধ্যে নেতা-কর্মীরা জীবন বাঁচাবে না গাড়িতে আগুন অথবা পেট্রল বোমা ছুড়বে?”
রিজভী আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গোয়েন্দা বাহিনীর বন্দুক যুদ্ধের আষাঢ়ে গল্প বানানো হলেও খিলগাঁও এর ছাত্রদল নেতা নুরুজ্জামান জনি, নড়াইল পৌরসভার কাউন্সিলর ইমরুল কায়েস, কানসাটের ছাত্রদল নেতা মতিয়ার রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ছাত্রশিবির নেতা আসাদুজ্জামান তুহিনসহ জোটের আরো বেশ কিছু নিষ্ঠাবান কর্মীকে এরই মধ্যে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এরা কি নাশকতা করতে গিয়ে হাতে নাতে ধরা পড়েছে? এদের প্রায় সবাইকে নিজ বাড়ি কিংবা আত্মীয়স্বজনের বাসা থেকে যৌথবাহিনী, গোয়েন্দা পুলিশ বা র্যাব তুলে নিয়ে গিয়ে হত্যা করেছে। অথচ এদের মায়ের আহাজারি, পরিবারের কান্না কেনো গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত হয় না? এরা কি বাংলাদেশের মানুষ নয়? এত আদম সন্তানের লাশ, এত কান্নার রোল কেনো গণমাধ্যম আড়াল করে রাখছে?”
তিনি বলেন, “সারাদেশে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর বাড়ি ঘরে যৌথবাহিনীর তাণ্ডব, মহিলাদের সাথে দুর্ব্যবহার ও গালাগাল, কাঙ্ক্ষিত লোককে না পেয়ে শিশু সন্তানকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি, এমনকি খুঁজতে যাওয়া ব্যক্তিকে না পেয়ে বাবা অথবা ছোট কিংবা বড় ভাইকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের তালিকা ধরে ধরে পাড়া মহল্লায় অভিযান চলছে।”
রিজভী আহমেদ হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, মিথ্যা মামলা দায়ের করে আর আটকের হুমকি দিয়েও যেমন পুত্রশোকে কাতর বেগম জিয়াকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দৃঢ় সংকল্প থেকে বিন্দুমাত্র টলানো যায়নি তেমনি সরকারের হুমকির বিরুদ্ধে মানুষের প্রত্যয়, দৃঢ়তা ও অঙ্গীকার আরো বেশি শক্তিশালী হয়েছে চলমান আন্দোলনকে অব্যাহত রেখে বিজয়ের পথে ধাবিত করতে।
বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ বলেন, “গণবিচ্ছিন্ন কোনো রাজনৈতিক দল বা সরকার জনমতকে উপেক্ষা করে জোর করে ক্ষমতা দখলে রাখলে তখন তারা গণদুশমন-এ পরিণত হয়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর আওয়ামী মহাজোট সরকার জনআতঙ্কে ভুগছে। নিজ দেশের বিরোধী কণ্ঠগুলোকে স্তব্ধ করে দিয়ে, অস্ত্রের ভাষা ব্যবহার করে অবৈধ ক্ষমতাকে আগলে রাখতে চাচ্ছে। ওরা জানে তাদের সাথে জনগণ নেই, ওদের একমাত্র ভরসা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, তাই ওই সংস্থাগুলোতে নিজেদের লোক ঢুকিয়ে জনগণের মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছে।