অনলাইন ডেস্কঃ- ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় দখলদার ইহুদীবাদী ইসরাইলের নৃশংস হামলা ও গণহত্যার বিরুদ্ধে, তাদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিহাদের কোনো বিকল্প আছে বলে আমার মনে হয় না। অবরুদ্ধ গাজার সর্ব সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক কুদস দিবসে রেডিও তেহরানের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে এমন্তব্য করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: আতাউর রহমান মিয়াজী। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা শক্তিগুলোই সন্ত্রাস করছে। অথচ মুসলমানরা তাদের মোকাবেলায় কিছু করলে সেটাকে তারা সন্ত্রাস বলছে। আসল সন্ত্রাসী তারা। পুরো সাক্ষাৎকারটি শোনার জন্য নিচের প্লেয়ারে ক্লিক করুন- রেডিও তেহরান: ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি বর্বর হামলা ও গণহত্যা চলছে। গাজার এই মর্মান্তিক প্রেক্ষাপটে এবারের বিশ্ব কুদস দিবসের তাৎপর্য সম্পর্কে যদি একটু বলেন। ড.আতাউর রহমান মিয়াজী: আপনি আপনার প্রশ্নের মধ্যে ঠিকই বলেছেন যে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় নির্মমভাবে ইসরাইলিদের বর্বর হামলা ও গণহত্যা চলছে। নিঃসন্দেহে এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও মর্মান্তিক। গাজার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে এতটুকুই বললে যথেস্ট বলা হবে না। দেখুন ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনী’র(র.)পক্ষ থেকে ১৯৭৯ সালে বিশ্বজুড়ে কুদস দিবস পালনের আহবান জানানো হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল ফিলিস্তিনের অধিবাসীদের পক্ষে মুসলমানদের মধ্যে সচেতনা বাড়ানো, মুসলমানদের মধ্যে ঐক্য ও সংহতি প্রতিষ্ঠা এবং বায়তুল মোকাদ্দাসকে মুক্ত করা। সেই ১৯৭৯ সাল থেকে কুদস দিবস পালিত হয়ে আসছে এসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে। কিন্তু আজ আমরা ফিলিস্তিনে কি দেখছি! আজ আমরা দেখছি যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ মদদে ইসরাইলি বাহিনী অবরুদ্ধ গাজায় যে বর্বরতম হামলা এবং গণহত্যা চালাচ্ছে তা অত্যন্ত মর্মান্তিক এবং সেখানকার পরিস্থিতি অত্যন্ত নাজুক। আমরা ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় দেখছি শত শত নারী ও শিশুসহ বেসামরিক ফিলিস্তিনীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হচ্ছে, তারা শহীদ হচ্ছেন। এ অবস্থায় আমার কাছে স্পষ্টভাবে যে বিষয়টি প্রতীয়মান হচ্ছে সেটি হচ্ছে- এবারের বিশ্ব কুদস দিবসের তাৎপর্য অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক অনেকগুণ বেশি। আজকের গাজা পরিস্থিতিতে এবং কুদস দিবসে গোটা বিশ্বের মুসলমানরা শুধু যে ফিলিস্তিনীদের ব্যাপারে ঐক্য এবং সংহতি প্রকাশ করবেন এমনটি নয়; তাদেরকে আর্থিকভাবে ও অন্যান্যভাবে সহয়াতা করতে হবে। যেভাবে ইসরাইলকে মোকাবেলা করা প্রয়োজন সেভাবে গাজাতে ফিলিস্তিনিদের পক্ষ অবলম্বন করা উচিত। রেডিও তেহরান: ইরানের ইসলামী বিপ্লবের রূপকার মরহুম ইমাম খোমেনী (র.) এর পক্ষ থেকে এই কুদস দিবস পালনের ডাক দেয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় উদ্দেশ্য ছিল, ফিলিস্তিনিদের ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে সচেতনা বাড়ানো এবং এই ইস্যুতে মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করা। গাজার আজকের পরিস্থিতিতে মরহুম ইমাম খোমেনীর এই লক্ষ্য কতখানি পূরণ হয়েছে বলে আপনি মনে করেন? মুসলমানরা কি ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছে? ড.আতাউর রহমান মিয়াজী: আপনার প্রশ্নের মধ্যে দুটি অংশ। প্রথম অংশে যে কথা আপনি জানতে চেয়েছেন তাহলো ইমাম খোমেনীর কুদস দিবস ডাকের লক্ষ্য এবং গাজার বর্তমান পরিস্থিতিতে তার আহবান কতখানি পূরণ হয়েছে। ইমাম খোমেনী (র.) ছিলেন একজন মুজাদ্দিদ। একজন ধর্মীয় আধ্যাত্মিক নেতা। তিনি যে বিশ্ব কিুদস দিবসের ডাক দিয়েছিলেন তা ব্যর্থ হয় নি। তবে কোনো কোনো বিষয়ের সফলতা কখনও কখনও তাৎক্ষণিক আসে আবার কোনো বিষয়ের সফলতা একটু দেরিতে আসে। ফলে ইমাম খোমেনীর আহবান একেবারে নিষ্ফল বলার কোনো যুক্তি বা কারণ নেই।আমরা জানি যে বেশ আগে লেবাননে হিজবুল্লাহ’র সাথে ৩৩ দিনের যুদ্ধে ইসরাইল পরাজিত হয়েছিল। এর আগে হামাসের সাথে ২২ দিনের যুদ্ধেও কার্যত পরাজিতই হয়েছিল ইসরাইল। বর্তমানেও ইসরাইলের বিরুদ্ধে হামাস শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। আশা করা যাচ্ছে মুসলিম বিশ্ব যদি তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসে তাহলে এ যুদ্ধেও তারা বিজয়ী হবে। আর এগুলো হচ্ছে ইমাম খোমেনী (র.)’র সেই আহবানেরই আংশিক ফলশ্রুতি। সুতরাং হিজবুল্লাহ ও হামাসের বর্তমান অবস্থান দেখে আমি মনে করছি ইমাম খোমেনীর ফিলিস্তিনী নীতিরই সুস্পষ্ট প্রতিফলন এবং বহিঃপ্রকাশ। আপনার প্রশ্নের দ্বিতীয়াংশে ছিল- মুসলিমরা কি ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছে? এর উত্তরে এককথায় আমি বলব না। সত্যিকারার্থে মুসলিমরা সেভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পেরেছে বলে আমার কাছে মনে হয় না। মুসলিমরা পুরোমাত্রায় ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে অবরুদ্ধ গাজায় করুণতম, মর্মান্তিক এবং নির্মম গণহত্যা চালাতে পারতো না ইহুদীবাদী দখলদার ইসরাইল। আরো আগেই এধরণের প্রেক্ষাপট থেকে মুসলিমদের উত্তরণ ঘটার কথা ছিল। রেডিও তেহরান: অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলের নৃশংসতম হামলা ও নিরীহ মানুষ হত্যা প্রসঙ্গে আরব নেতারা, জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা বিশ্ব নীরব। ফিলিস্তিনে মানবতার বিরুদ্ধে ইসরাইলের অপরাধযজ্ঞের ব্যাপারে তাদের এই ন্যাক্কারজনক ভূমিকা কেন? ড.আতাউর রহমান মিয়াজী: আমি এ ব্যাপারে স্পষ্টত দুটো কারণ উল্লেখ করতে চাই। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন প্রসিদ্ধ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন নব্বইয়ের দশকে ‘সভ্যতার সংঘাত’ (clash of civilizations) তত্ত্বের জন্ম দেন। হান্টিংটনের সাড়াজাগানো তত্ত্বসম্বলিত বইটির মূল বিষয়টি এরকম যে, একবিংশ শতাব্দীতে দুটো শক্তি বিশ্বে থাকবে। একটি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্ব আর অপরটি হচ্ছে ইসলাম। তবে ইসলামের বিজয় অবধারিত ফলে ইসলামের বিজয়কে ঠেকাতে হলে যতদ্রুত সম্ভব পশ্চিমা বিশ্ব ইসলামের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হবে। তাদের মূল লক্ষ্য হলো ইসলামকে উৎখাত করা। ইসলামের বিজয়%