অনলাইন ডেস্ক:- মালয়েশিয়া : থাইল্যান্ডের বন্দীশিবিরগুলোতে রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণ করত মানবপাচারকারীরা। সম্প্রতি মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম বারনামাকে এ তথ্য জানিয়েছেন বন্দীশিবির থেকে উদ্ধার হওয়া এক রোহিঙ্গা নারী ও তার স্বামী।
পাদাংবেসারের এক বন্দীশিবিরে শিশু সন্তানসহ আটদিন আটকা ছিলেন ২৪ বছর বয়সী নূর খাইদা আবদুল শুকুর।
নূর খাইদা বলেন, ‘প্রতি রাতে প্রহরীরা দুই–তিনজন সুন্দরী রোহিঙ্গা নারীকে বন্দীশিবির থেকে বের করে গোপন স্থানে নিয়ে যেত।’
তিনি আরও বলেন, ‘দুই যুবতী গণধর্ষণের শিকার হওয়ার পর গর্ভবতী হয়ে পড়ে।’ তিনি জানান, কামবাসনা পূরণে বন্দীশিবির থেকে অনেক দিনের জন্য নারীদের উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
নূর খাইদা বলেন, ‘প্রহরীরা নিয়ে যাওয়ার পর তাদের (রোহিঙ্গা নারী) দুই–তিনদিন দেখা যেত না। তারা বন্দীশিবিরে ফিরে আসার পর আমি তাদের কিছুই জিজ্ঞাসা করিনি। কারণ আমি জানি তাদের সাথে কি ঘটেছে। তাদের মুখায়ব দেখেই তা বুঝে যেতাম।’
আটকা থাকা বাসিন্দাদের কারও নিজেদের মধ্যে কথা বলার অনুমতি ছিল না। পরস্পর কথা বললে শারীরিক নির্যাতনের ঝুঁকি ছিল বলেও জানান নূর খাইদা।
তিনি বলেন, ‘গত বছর আমাকে যে শিবিরে আটকে রাখা হয়েছিল সেখানে ১৫ জন রোহিঙ্গা নারী প্রহরীদের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচজনের ছোট বাচ্চা থাকায় প্রহরীরা তাদেরকে গণধর্ষণ করেনি। আমিও তাদের একজন। হয়ত বাচ্চা থাকায় আমরা রেহাই পেয়েছি। তারপরও আমি প্রতিদিন দোয়া করেছি যেন ধর্ষণের শিকার না হই।’
মিয়ানমারের মংডু থেকে স্বামীকে অনুসরণ করে সন্তান নিয়ে আন্দামান সাগর হয়ে মালয়েশিয়া আসেন নূর খাইদা। এর কয়েক মাস আগে তার স্বামী নুরুল আমিন নবী হোসেন (২৫) মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে থাইল্যান্ডের রানংয়ে পৌঁছান।
নূর খাইদা জানতেন না তার স্বামী মানবপাচারকারীদের হাতে বন্দী হয়ে পার্লিসের ওয়াং ক্যালিয়েন বন্দীশিবিরে আটকা রয়েছেন। সেখান থেকে পালানোর আগে নুরুল ২২ দিন বুকিত ওয়াং বার্মা শিবিরে আটকা ছিলেন। নুরুল এখন আলোর সেতার এলাকায় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করছেন।
নুরুল আমিন জানান, অপেক্ষাকৃত উন্নত জীবন–যাপনের ইচ্ছা তাকে এবং তার পরিবারকে মৃত্যুর খেলায় নামিয়েছে।
নুরুলও বন্দীশিবিরে রোহিঙ্গা নারীদের ধর্ষণের বেদনাদায়ক ঘটনার বর্ণনা দেন। তিনি বলেন, ‘ওয়াং ক্যালিয়েনের বন্দীশিবিরে রোহিঙ্গা নারীরা ধর্ষিত হয়েছেন। রাতের বেলায় প্রহরীরা নারীদের বন্দীশিবির থেকে বের করে নিকটবর্তী কোনো স্থানে নিয়ে যেত।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নারীদের আর্তনাদ ও কান্না শুনতাম। তাদের যে স্থানে ধর্ষণ করা হতো সেটা আমাদের বন্দীশিবিরের অনেক কাছেই। কিন্তু রাত হওয়ার কারণে আমরা তা দেখতে পেতাম না।’
সম্প্রতি থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় মানবপাচারকারীদের ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি বন্দীশিবিরের সন্ধান পাওয়া গেছে। সেখানে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিম ও বাংলাদেশীদের আটকে রেখে নির্যাতন চালানো হতো।খবরঃওয়েবসাইট, মিয়ানমারেরও নিপীড়নের শিকার হওয়া রোহিঙ্গা মুসলিমদের সাম্প্রতিককালের সবচেয়ে নির্যাতিত জাতিগোষ্ঠী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে জাতিসংঘ।