জি নিউজ ,অনলাইন ডেস্কঃ বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) তার নতুন প্রধান নির্বাচন করতে যাচ্ছে বুধবার। পদটি সংস্থাটির ভেতর থেকে নাকি বাইরের কারো দ্বারা পূরণ হবে, এটিই এখন গুরুত্ব দিয়ে ভাবছেন অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য অঙ্গনের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলো। এরই মধ্যে মেক্সিকোর হার্মিনিও ব্লাংকো ও ব্রাজিলের রবার্তো আজেভেডোরের নাম চূড়ান্ত তালিকায় উঠে এসেছে। আশা করা হচ্ছে, নির্বাচিত ব্যক্তি বর্তমান প্রধান প্যাসকেল লামির স্থলাভিষিক্ত হয়ে সংস্থাটিকে নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন। খবর গার্ডিয়ানের।
ডব্লিউটিওতে ব্রাজিলের দূত এবং প্রধান ট্রেড নেগোশিয়েটর অ্যাজেভেডো ১৯৯৫ সাল থেকে এর সঙ্গে জড়িত। অন্যদিকে সাবেক মেক্সিকান বাণিজ্যমন্ত্রী ব্লাংকো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নর্থ আমেরিকান ফ্রি ট্রেড এগ্রিমেন্ট প্রণয়নে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১২ বছর ধরে ব্যবসায় নিয়োজিত আছেন তিনি। একটি মেক্সিকান কেমিক্যাল প্রতিষ্ঠান ও ব্যাংকের বোর্ড সদস্য তিনি। পাশাপাশি বিভিন্ন কোম্পানিকে আন্তর্জাতিক ব্যবসা বিষয়ে পরামর্শ দেয়ার ব্যবসাও করছেন।
চলতি বছরের সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহাপরিচালক প্যাসকেল লামির স্থলাভিষিক্ত হওয়ার তালিকায় প্রথমে বিভিন্ন মহাদেশ থেকে মোট নয়জনের নাম ছিল। শেষ পর্যন্ত সম্ভাব্য মহাপরিচালক হিসেবে এ দুজনের নামই টিকে থাকল।
দুজনের একজন সফল রাজনীতিবিদ, অন্যজন খাঁটি কূটনীতিক। অ্যাজেভেডো তুলনামূলক কম বয়সে এ পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি তার কূটনৈতিক দক্ষতার জন্য প্রশংসিত। বিশেষ করে সংস্থাটিতে বিশ্ব বাণিজ্যে মুদ্রাসংক্রান্ত বিষয়গুলোর প্রভাব ও এ বিষয়ে একটি কার্যকর নীতি প্রণয়নের উদ্দেশ্যে আলোচনার সূত্রপাত করাতে পেরেছিলেন তিনি।
মুদ্রানীতি, মুদ্রার মান; এসব নিয়ে বিশ্ব বাণিজ্যে অনেক কথা, অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ চলছে দীর্ঘদিন ধরে। বিশেষ করে চীন তার মুদ্রার মান কমিয়ে রেখে রফতানিকারকদের অতিরিক্ত সুবিধা দিয়ে আসছে, এ অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরেই করে আসছে। আবার কোয়ান্টেটিভ ইজিংয়ের নামে পশ্চিমা সরকারগুলো বড় অঙ্কের আর্থিক সমর্থন দিয়ে অর্থনীতিকে কৃত্রিমভাবে চাঙ্গা করে থাকে, এমন কথাও অন্যপক্ষগুলো বলে থাকে। সবচেয়ে বড় বিবাদটি হয়ে আসছে কৃষিতে ভর্তুকি নিয়ে। কৃষি উত্পাদন ও বাণিজ্যে উন্নত দেশগুলোর ভর্তুকি কমানো প্রয়োজন বলে জোর গলায় দাবি জানিয়ে আসছে উন্নয়নশীল ও স্বল্পোন্নত দেশগুলো। তাছাড়া শুল্ক-অশুল্ক বাণিজ্য বাধা নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনাতো নিয়মিতই হয়ে আসছে।
বিশ্ব বাণিজ্য বিশ্লেষকদের মতে, ডব্লিউটিওর মহাপরিচালকের হাতে তুলনামূলক কম নির্বাহী ক্ষমতা থাকে। ১৫৯টি সদস্য দেশকে কী করতে হবে, তা বলে না দিয়েও তাদের মাধ্যমে একটি কার্যকর নীতি প্রণয়ন করে নেয়ার মতো সৃষ্টিশীল হতে হবে নতুন মহাপরিচালককে। আট বছরের মেয়াদকালে মহাপরিচালক প্যাসকেল লামি বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনায় স্থবিরতা কাটাতে বিশেষ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি বলেই মনে করেন অনেক বিশ্লেষক। পক্ষান্তরে, সদস্য দেশগুলোর কাছে বিশ্ব বাণিজ্যের আলোচনায় তাদের অবস্থান ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে সমঝদার হিসেবে আস্থা অর্জন করেছেন আজেভেডো।
ব্লাংকো বলছেন, সরকারগুলোকে বিশ্ব বাণিজ্য আলোচনায় আরো নমনীয় করতে তৃতীয় কোনো পক্ষের বা বিষয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বাণিজ্য স্বার্থ প্রধান হলেও এর বাইরে অনেক বিষয় থাকে, যা সরকারগুলোর আচরণকে প্রভাবিত করে। সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে, মার্কিন বেসরকারি খাতের তাদের সরকারকে বিশ্ব বাণিজ্যসংক্রান্ত আলোচনায় আরো যৌক্তিক ও গঠনমূলক ভূমিকা রাখতে বলা উচিত।
২০০১ সালে দোহায় শুরু হওয়া বাণিজ্যবিষয়ক আলোচনাটি ২০১১ সালে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। এতে ডব্লিউটিওকে আরো ছোট পরিসরে এবং কম কার্যকর নীতি বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে হয়। এর কারণে মার্কিন নেতৃত্বে ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপের (টিপিপি) মতো আঞ্চলিক এবং টিফা-টিকফার মতো দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যচুক্তির ওপর নির্ভরতা বাড়ে দেশগুলোর।
সুইজারল্যান্ডের সেন্ট গ্যালেন বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের অধ্যাপক সাইমন ইভানেত বলেন, দোহার আলোচনা বাস্তবায়নযোগ্য, এমন একটি দৃষ্টিভঙ্গি সব প্রার্থীরই থাকা উচিত যদিও কাজটি এ পদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। তবে তারা তার উদ্যোগ নিয়ে সফল হতে পারেন।
জেনেভার গ্রাজুয়েট ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক রিচার্ড বল্ডউইন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দোহা রাউন্ডের বিষয়বস্তুর ব্যাপারে খুব আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে না। টিপিপির সাফল্য কিংভা ব্যর্থতার বিষয়টি স্পষ্ট হলে হয়তো এ বিষয়ে তারা কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। খুব দ্রুতই তা হচ্ছে না বলে এখন পর্যন্ত মনে হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, নতুন মহাপরিচালকের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জটি হচ্ছে, বিভিন্ন অস্পষ্টতা দূর করে সংস্থাটির সুনাম বাড়ানো ও বাণিজ্য বিরোধ নিষ্পত্তিতে কার্যকর ভূমিকা রাখা। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য হওয়া উচিত একটি কার্যকর বিশ্ব বাণিজ্য কাঠামোর জন্য সর্বসম্মত বিধিব্যবস্থা প্রণয়ন।