ভারতের কাছ থেকে পানির হিস্যা আদায়ে সংগ্রামের বিকল্প নেই-তুহিন মালিক

tohinজি নিউজ ডেস্কঃ- ভারতের সঙ্গে আমাদের গঙ্গা ও তিস্তাসহ বিভিন্ন নদীর পানি প্রবাহ নিয়ে একটা সমঝোতা রয়েছে। ১৯৭৪ সালেও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পানি চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে তারপর আজ প্রায় ৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো সরকারের সময় কিন্তু ভারত তার কথা রাখতে পারেনি। ন্যায্য পানির যে হিস্যা বাংলাদেশের পাওয়ার কথা তা ভারতের কোনো সরকারই কোনো সময় দেয়নি। তিস্তার পানির ন্যায্য হিস্যা প্রসঙ্গে রেডিও তেহরানের সঙ্গে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে একথা বলেন সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইন বিশেষজ্ঞ ড. তুহিন মালিক। তিনি বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে ভারতকে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছে। ভারতকে ট্রানজিট, করিডোর সবই দিয়েছে। বিনিময়ে তিস্তার পানির যে ন্যায্য হিস্যা আমাদের রয়েছে সেটি বলার পরও আমাদেরকে দেয়া হয়নি। ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জুজুর ভয় দেখিয়ে আমাদেরকে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপন করা হল ,রেডিও তেহরান: তিস্তা নদীর উজানে বাঁধ দিয়ে ভারত একতরফা পানি প্রত্যাহারের কারণে তিস্তা ব্যারেজ হুমকির মুখে পড়েছে। পানির অভাবে বাংলাদেশের ভয়াবহ অর্থনৈতিক ক্ষতি হচ্ছে এবং তিন কোটি মানুষের জীবন জীবিকা বিপন্ন হচ্ছে বলে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। তো এ বিষয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের জরুরি ভিত্তিতে কথা বলার প্রয়োজন আছে কি-না? ড. তুহিন মালিক: মূলত যে বিষয়টি আপনি প্রশ্নের মধ্যে বললেন- অভিন্ন আন্তরাষ্ট্রীয় পানি প্রবাহ, এটি কিন্তু কোনো রাষ্ট্রের একক সম্পদ নয়। মানব সভ্যতার বিকাশ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত পানি নিয়ে পৃথিবীতে অনেক যুদ্ধ বিগ্রহ হয়েছে। যার ফলশ্রুতিতে আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থায় জাতিসংঘের জন্মের পর থেকে পানি প্রবাহ নিয়ে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক কগনেন্ট এবং ট্রিটিস হয়েছে। জাতিসংঘের আওতায় আঞ্চলিক ডকুমেন্টস এবং অ্যারেজমেন্টের ভিত্তিতে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে পানি বন্টনের বিষয়টি এখন আন্তর্জাতিক আইনের একটি বড় বিষয় হিসেবে পরিগণিত হয়েছে। পানি বন্টনের ব্যাপারটি শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক আইনের বিষয় তা নয়; এরসাথে ১৯৪৮ সালে সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা পত্র, ১৯৪৫ সালে জাতিংসঘ চার্টার এবং প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতার ভিত্তিতে পানি প্রবাহের বন্টনগুলো নির্ধারিত হচ্ছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই ভারতের সঙ্গে আমাদের গঙ্গা ও তিস্তাসহ বিভিন্ন নদীর পানি প্রবাহ নিয়ে একটা সমঝোতা রয়েছে। ১৯৭৪ সালেও বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পানি চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে তারপর আজ প্রায় ৪০ বছর পেরিয়ে গেলেও কোনো সরকারের সময় কিন্তু ভারত তার কথা রাখতে পারেনি। ন্যায্য পানির যে হিস্যা বাংলাদেশের পাওয়ার কথা তা ভারতের কোনো সরকারই কোনো সময় দেয়নি। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে বাংলাদেশের বর্তমান সরকার প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতকে সবকিছু উজাড় করে দিয়েছে। বাংলাদেশের আঞ্চলিক নিরাপত্তা থেকে শুরু করে বিমানবন্দরের দায়িত্ব প্রাপ্ত হয়েছেন ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ । ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র’ এখান থেকে পাকিস্তানী গোয়েন্দা আইএসআইকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এতবড় সুযোগ সুবিধা, ট্রানজিট, করিডোর সবই আমরা দিলাম ভারতকে। বিনিময়ে তিস্তার পানির যে ন্যায্য হিস্যা আমাদের রয়েছে সেটি বলার পরও আমাদেরকে দেয়া হয়নি। ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির জুজুর ভয় দেখিয়ে আমাদেরকে সে অধিকার থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীকে দোষ দেয়া হচ্ছে। আসলে এটি তাদের রাজনীতির একটা অংশ। ভারত তাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বাহনা দিয়ে বাংলাদেশের ষোলো কোটি মানুষকে তাদের ন্যায্য পানির অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। রেডিও তেহরান: আপনি জানেন যে, তিস্তার পানি নিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি সরগরম হয়ে উঠেছে। পরিবেশবাদীরা এ ব্যাপারে লাগাতার আন্দোলন করে আসছেন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো। ২২ এপ্রিল বিএনপি লংমার্চের ডাক দিয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, লংমার্চের কর্মসূচি দিয়ে বিএনপি আসলে রাজনীতির মাঠ গরম করতে চায়। তো দেশের অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলনকে রাজনৈতিক বলে উড়িয়ে দেয়া যায় কিনা? ড. তুহিন মালিক: দেখুন আপনি প্রশ্নের মধ্যে যে কথাগুলো বললেন সেটিইতো এদেশের রাজনীতি হওয়ার কথা। একটি গণতান্ত্রিক দেশে যেখানে আমরা আড়াই লক্ষ লোক নিয়ে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে বিশ্ব রেকর্ড করলাম কিন্তু এরচেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এদেশের মানুষের পানির ন্যায্য অধিকার পাওয়া। যদি রাজনৈতিক দল পানি অধিকারের দাবিতে লংমার্চ করে তবে তাতো জনগণেরই প্রত্যাশার অংশ; জনগণের ক্ষোভের অংশ। কোনো রাজনৈতিক দল যদি জনগণের এই প্রত্যাশার সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো অবস্থানে যায় তাহলে জনগণের সাথে সেই রাজনৈতিক দলের বড় ধরণের একটা বিচ্যুতি ঘটে গেছে বা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কারণ যেখানে দেশের পানির ন্যায্য হিস্যার বিষয়টি রয়েছে সেখানে কি আওয়ামী লীগ, কি বিএনপি, কি জাতীয় পার্টি বা কি জামায়াতে ইসলামী প্রত্যেকেই কিন্তু হয় এ ব্যাপারে সুবিধাভোগী হবে কিংবা এ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটি আমাদের জাতীয় ইস্যু এবং জাতীয় ঐক্যমতের বিষয়। কিন্তু আমাদের রাজনীতিবিদরা বিশেষ করে বর্তমান সরকার যেভাবে প্রতিবেশী ভারত তোষণ করে যাচ্ছে; এবং সবকিছু উজাড় করে দিয়েছে সেক্ষেত্রে একটা সময় হয়তো খুব শিগগিরি আসবে যখন জনগণ সরকারের এইসব সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। কোনো একটি দলের আশীর্বাদের জন্য কোনো একটি দেশকে যদি সাপোর্ট করি এবং সবকিছু উজাড় করে দেই বিনিময়ে দেশ না পেয়ে যদি দল সবকিছু পেয়ে যায় তাহলে তা হবে দেশের জন্য ভয়াবহ। আর এখন দেশের মানুষের মধ্যে বোধহয় সেই বোধোদয় হয়েছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের সঙ্গে ভারতের বর্তমান সরকারের যে দাম্পত্য সম্পর্ক রয়েছে তার একটা ভয়াবহ দিক আপনারা দেখেছেন এবারের টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে। সম্প্রতি বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত ‘টি টোয়েন্টি’ বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের মানুষের চরম ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বাংলাদেশের মানুষ ভারতকে সমর্থন দেয়নি। ভারত পরাজিত হওয়াও তারা খুশি হয়েছে। এককথায় ভারতকে বাংলাদেশের মানুষ চরম ঘৃণার চোখে দেখেছে। আর এটি ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এবং রাষ্ট্রকে বোঝা দরকার। একটি প্রতিবেশী বন্ধু রাষ্ট্রের প্রতি কি পরিমাণ জুলুম চালালে, কতোটা নিগ্রহ করলে বা ক্ষতি করলে সেদেশের মানুষ এভাবে ঘৃণার চোখে দেখতে পারে! তো আমার মনে হয় যে ভারতের এই আত্মোপলব্ধি খুব বেশি প্রয়োজন। কারণ তার নিজের ভালোর জন্য এবং সুস্থতার জন্য প্রতিবেশীকে ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে। রেডিও তেহরান: বিএনপি লংমার্চের মাধ্যমে তিস্তার পানি আদায়ে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে চায়। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক ফোরামে অভিযোগের দাবি তুলেছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম বলেছেন, বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক ফোরামে যাবার কোনো চিন্তা সরকারের নেই এবং তাতে কোনো লাভ হবে না। প্রশ্ন হচ্ছে- সরকারের পক্ষ থেকে এই হতাশার কারণ কি? ড. তুহিন মালিক: দেখুন সরকারের পক্ষে এটা হতাশা না, আসলে যাদের বিরুদ্ধে সরকারের আন্তর্জাতিক অঙ্গনে যাওয়ার কথা-সরকারের সেই শক্তি, সামর্থ্য, সাহস এবং যোগ্যতা কোনোটাই নেই। কারণ সরকার নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছে। গত পাঁচই জানুয়ারির নির্বাচনে ভারত-বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশকে চ্যালেঞ্জ করে উলঙ্গভাবে সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশে একটি অসভ্য, অগণতান্ত্রিক এবং অবৈধ সরকারকে প্রতিষ্ঠা করেছে। ভারত এটি তার নিজের দেশে কোনোভাবেই কল্পনা করতে পারে না। বাংলাদেশের পাঁচই জানুয়ারির নির্বাচনের সময় মূলত আন্দোলনটা ছিল সাধারণ মানুষের। আন্দোলনটা বিএনপির ছিল বল্লে ভুল হবে। মানুষ চাচ্ছিল তাদের ভোটটা যাতে তারা নির্ভয়ে এবং নিরপেক্ষভাবে দেয়ার অধিকার পায়। আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না সেটা প্রমাণিত হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনের সময়ও মানুষ বুঝতে পেরেছে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া তাদের ভোট দেয়ার অধিকার অর্জিত হবে না। এ বিষয়টি আবারও প্রমাণিত হয়েছে। তবে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হচ্ছে বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার না থাকলেও তত্ত্বাবধায়ক রাষ্ট্রের দ্বার পাঁচই জানুয়ারির নির্বাচন হলো। যে তত্ত্বাবধায়ক রাষ্ট্র এদেশে নির্বাচন করে দিল সেই দেশের বা সেই রাষ্ট্রের দালালদের পক্ষে তো কখনই সম্ভব না মাথা উচুঁ করে এবং মেরুদণ্ড সোজা করে সেই রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে অভিযোগ করা। তাদের সেই সাহস, শক্তি, ক্ষমতা বা মেধা কোনোটাই নেই। এটি বড় দুঃখজনক যে আমাদের জাতীয় ঐক্যের জায়গাটা ব্যক্তি স্বার্থে এবং দলের স্বার্থে একেবারে শেষ করে দিয়েছি। রেডিও তেহরান: বাংলাদেশের সরকার বলছে, দ্বিপক্ষীয়ভাবেই ভারতের সঙ্গে তিস্তা নিয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তো দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে কি তিস্তার পানি পাওয়া যাবে বলে আপনি মনে করেন? ড. তুহিন মালিক: দেখুন ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় আজ পর্যন্ত আমরা কিছুই পেলাম না। আজ যদি বাংলাদেশ একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হতো; আসলে আমি সেই অর্থে বলছি না বা আমার দেশকে খাটো করছি না। আমি ওই অর্থে বলছি- আজকে যদি আমাদের একটি পারমাণবিক বোমা থাকত কিম্বা পারমাণবিক বোমার মতো একটা নেতৃত্ব থাকত কিম্বা পারমাণবিক বোমার মতো শক্তিশালী জাতীয় ঐক্য থাকত তাহলে —–। এবং আমাদের নামমাত্র লোক দেখানো কিম্বা গিনেস বুকে রেকর্ড করার মতো চেতনা না থেকে যদি আসলেই আমাদের দেশপ্রেমের চেতনা থাকত তাহলে ভারত এধরণের দুঃসাহস কোনো দিন দেখাতে পারত না। শুধু ভারত না; আমাদের রাষ্ট্রের যারা নিয়ন্ত্রক,রাজনীতিবিদ কিম্বা যারা সরকার পরিচালনা করছেন তারা জনগণের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলার দুঃসাহস কোনো দিন দেখাতে পারত না। আমাদের দুর্ভাগ্য যে একটা লম্পট প্রতিবেশীর কারণে আজকে ফেলানীর মতো লাশ সীমান্তের কাঁটাতারে ঝুলে থাকে অথচ তার বিচার চাওয়ার কোনো যোগ্যতা বা অধিকার আমাদের নেই। আজকে ‘গুণ্ডে’ ছবির মাধ্যমে আমাদের স্বাধীনতাকে বিকৃত করে বলা হচ্ছে এটা পাক-ভারত যুদ্ধ ছিল এবং সেই যুদ্ধে ভারত জিতেছে। আর ভারতের দয়ার ভিত্তিতে বাংলাদেশ তৈরী হয়েছে। আমাদের মন্ত্রণালয়গুলো থেকে শুরু করে সবার মুখে ভারত কুলুপ এটেঁ দিয়েছে। এখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কোনো সুযোগ নেই; এখানে তাদের চেতনা জাগে না। তো মূল বিষয়টা হচ্ছে যে, আমাদের জাতীয়তাবোধকে যদি আমরা সামনে নিয়ে আসতে না পারি; এবং দলমত নির্বিশেষে জাতির স্বার্থে সবাই যদি এক কাতারে না দাঁড়াতে পারি তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের জাতির আরো খারাপ সময় অপেক্ষা করছে বলে আমি মনে করি। জনগণের এসবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার সময় এসে গেছে বলে আমার মনে হয়। ভারতকে আমরা সৎ প্রতিবেশী বা বন্ধু প্রতিবেশী হিসেবে মেনে নিয়েছি কিন্তু আমার ভাত, ভোট, জীবন, পানি, সম্পদ, ট্রানজিট, রাস্তাসহ আমার সবকিছু বিকিয়ে দিয়ে কী আমি বন্ধুত্বের সম্পর্ক রাখব! নাকি আমরা আত্মমর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার এবং নিজের অধিকারের সংগ্রাম নিয়ে বেঁচে থাকব? এই সিদ্ধান্ত আমাদের রাজনীতিবিদদেরও নিতে হবে এবং জনগণকেও নিতে হবে। রেডিও তেহরান: ভারত অনেকটা স্পষ্ট করে বলেছে, এই মুহূর্তে তিস্তার পানি চুক্তি হচ্ছে না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুরোধ উপেক্ষা করে ভারত একথা বলেছে। তো সামগ্রিকভাবে তিস্তার পানি সমস্যার পরিণতি আসলে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে বলে আপনি মনে করেন? ড. তুহিন মালিক: দেখুন তিস্তার পানি বন্টন চুক্তিটা যতোটা না দুই দেশের বিষয় তারচেয়ে বেশি হয়ে গেছে পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় সরকার এবং ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে একটা কৃত্রিম বিবাদের বিষয়। তারা নিজেরাই কৃত্রিম একটা সংকট তেরী করে রেখেছে বাংলাদেশকে ধোঁকা দেয়ার জন্য। যদি আমরা ধরেও নেই যে নির্বাচনে সেখানে সরকার পরিবর্তন ঘটবে; তো সেখানে যে দলই ক্ষমতায় আসুক না কেন তাতে আমাদের খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না। আমরা পত্রপত্রিকায় দেখছি একটা কোয়ালিশন সরকার হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর সেই কোয়ালিশনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা অবস্থান থাকবে। মমতা ব্যানার্জী যেভাবে বাংলাদেশ বিদ্বেষী আচরণ করেছে বিশেষ করে তিস্তার পানি বন্টনের ক্ষেত্রে যতোটা রক্ষণশীল সেটা এবং ভারতের নির্বাচনকে বিবেচনায় রেখে বড় সুখবর বোধহয় বাংলাদেশের ভাগ্যে নেই! ফলে আমাদের এভাবে হাত পা জড়ো করে ভিক্ষা চাওয়ার চেয়ে অধিকার আদায়ের জন্য এদেশের মানুষকে লড়াই-সংগ্রাম করতে হবে। তবে সেটা অবশ্যই অস্ত্র দিয়ে নয়; আমি সেই সংগ্রামের কথা বলছি না। আমরা আমাদের আত্মোপলব্ধি, আত্মমর্যাদা এবং জাতীয় ঐক্য নিয়ে আমাদের ন্যায্য হিস্যা ও ন্যায্য অধিকার আদায় করব। আর এটি শুধু দেশের মধ্যেই নয় দেশের বাইরেও আমরা অর্জন করব। বাঙালী জাতি মুক্তিযুদ্ধ করেছে। সেই যুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ লোক শহীদ হয়েছে। এমনি এমনিতেই এ দেশ স্বাধীন হয়নি। যে জাতির ত্রিশলক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হতে পারে; নিজেদের জীবন উৎসর্গ করতে পারে তাদের জন্য মমতা ব্যানার্জী কিংবা নরেন্দ্র মোদী খুব বড় কোনো বিষয় নয়। আবারও বলছি আমাদের আত্মোপলব্ধি শাণিত করতে এবং নিজের অধিকার নিজেকেই ছিনিয়ে আনতে হবে। এর কোনো বিকল্প আছে বলে আমি মনে করি না। যতই রাজনীতি করা হোক বা যতই ধোঁকাবাজি করা হোক এটা শুধুমাত্র সময়ক্ষেপণ। আমরা শক্তি দেখালেই তখন তারা আমাদের ন্যায্য হিস্যা ফিরিয়ে দেবে, আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দেবে। আর আমরা যদি নিজেদের অবজ্ঞা করি তারাও আমাদেরকে অবজ্ঞা করবে। ফলে আমাদের নিজেদেরকে শক্তি অর্জন করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই। এ প্রতিবেদনটি রেডিও তেহরান ।

Exit mobile version