মার্কিন সরকার ও তার দোসররাই বিশ্বে সন্ত্রাসবাদের মূল হোতা

rt usa 2আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ- বিশ্বে সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদনে সন্ত্রাসী দলগুলো গড়ে তোলার ব্যাপারে ওয়াশিংটনের ভূমিকার কথা পুরোপুরি উপেক্ষিত হয়েছে। গতকাল (বুধবার) ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে মার্কিন সরকার।এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০১২ থেকে ২০১৩ সালে বিশ্বে সন্ত্রাসী তৎপরতা ৪০ শতাংশ বেড়েছে এবং গত বছর সারা বিশ্বে সন্ত্রাসীদের ৯ হাজার ৭০০টিরও বেশি হামলায় নিহত হয়েছে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ। এ ছাড়াও এইসব হামলায় আহত হয়েছে ৩২ হাজার ৫০০ জন। আর সন্ত্রাসীরা এই সময়ে পণ-বন্দী করেছে প্রায় তিন হাজার ব্যক্তিকে।মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই প্রতিবেদনে প্রতি বছরের মতই কিছু পুরনো বুলি আওড়ানো হয়েছে এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানসহ মার্কিন আধিপত্যকামীতার সমালোচক দেশগুলোকে কয়েকটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর মদদদাতা বলে দাবি করা ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের মুখপাত্র মারজিয়া আফখাম তার দেশ সম্পর্কে এই মার্কিন অভিযোগের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, ইসলামী এই দেশটি গত তিন দশকে সন্ত্রাসের সবচেয়ে বড় শিকারে পরিণত হয়েছে। ইরানের ইসলামী সরকারের বিরোধী সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর প্রতি মার্কিন সহায়তার কথা তুলে আফখাম বলেন, এইসব সন্ত্রাসীদের হাতে ইরানের শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতাসহ ১৫ হাজার ইরানি নাগরিক শাহাদত বরণ করেছেন। আলকায়দার সন্ত্রাসসহ বিশ্ব সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কথিত যুদ্ধে নিজেকে মহানায়ক বলে দাবি করে আসছে মার্কিন সরকার। কিন্তু আমেরিকার এই জাতীয় প্রতিবেদনে যে মহাসত্যটি কখনও তুলে ধরা হয় না তা হল দেশে দেশে সন্ত্রাসী দল ও গ্রুপ সৃষ্টিতে মার্কিন সরকারের ভূমিকা। মার্কিন সরকার যে বহু দেশে এ ধরনের গ্রুপের মাধ্যমে প্রক্সি ওয়ার বা পরোক্ষভাবে সন্ত্রাসী যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে তা যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির এই যুগে কারো কাছেই অজানা নয়। যেমন, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্য আলকায়দা ও তালেবান সৃষ্টিতে মার্কিন সরকারের ভূমিকার কথা সবাই জানেন। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ সোভিয়েত সেনাদের বিরুদ্ধে মুসলমানদের ব্যবহারের জন্য দেশে দেশে প্রচারণার মহাপরিকল্পনা নিয়েছিল। ব্রেজনস্কি পরিকল্পনা হিসেবে খ্যাত ওই পরিকল্পনার আলোকে আরব যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র দেয়াসহ সব ধরনের সহায়তা দিত মার্কিন সরকার।তালেবানদের বিনামূল্যে অস্ত্র দিত আমেরিকা। আর এই তালেবান হয়ে ওঠে আফগানিস্তানের জনগণসহ প্রতিবেশী কয়েকটি দেশের জন্য বড় ধরনের হুমকি। ইরাকেও মার্কিন সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সাদ্দাম সরকারের পতন ঘটানো হয়। এরপর দেশটিতে ক্ষমতা-শূন্যতার সুযোগে আমেরিকা নানা গোত্রের মধ্যে গড়ে তোলে সশস্ত্র নানা গ্রুপ। মূলত এইসব গ্রুপই বর্তমানে সন্ত্রাসী দল আলকায়দা হিসেবে পরিচিত। আলকায়দা ইরাককে করে তুলেছিল বিশ্বের সবচেয়ে অনিরাপদ দেশ। আমেরিকা ছাড়াও পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে ওয়াশিংটনের সেবাদাস সরকারগুলো ইরাকে তৎপর সন্ত্রাসী দলগুলোকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা দিয়ে এসেছে।আমেরিকা লিবিয়ার গাদ্দাফি সরকারসহ বর্তমান সরকারের বিরোধী কয়েকটি গোষ্ঠীকে বিপুল অস্ত্র দিয়ে কার্যত দেশটির বিরুদ্ধে প্রক্সি ওয়ার চালিয়ে যাচ্ছে। নাম ও পরিচয় এবং কাণ্ডজ্ঞানহীন এইসব গোষ্ঠী দেশটিকে ক্রমেই লিবীয় জনগণের জন্য নিরাপত্তাহীন করে তুলছে।আর সিরিয়া হচ্ছে মার্কিন সরকারের সন্ত্রাস-বান্ধব নীতির সবচেয়ে উর্বর ক্ষেত্র। সেখানে জিহাদের নামে সন্ত্রাসী হামলায় তৎপর বহু সন্ত্রাসী গ্রুপকে অস্ত্র ও অর্থসহ সব ধরনের সহায়তা দিয়েও নিজ লক্ষ্য হাসিলে ব্যর্থ হয়েছে ওয়াশিংটন। হোয়াইট হাউজ ইসরাইল বিরোধী আরব এই দেশটির আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোকে লেলিয়ে দেয়ার পর এখন নিজেই তাদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছে। এইসব সন্ত্রাসী গ্রুপ এখন আলকায়দার সহযোগী হয়ে পড়েছে। এমনকি আলকায়দার কথিত প্রধান নেতা আইমান আল জাওয়াহেরিও এখন আর এইসব সন্ত্রাসী গ্রুপের নিয়ন্ত্রক নন। থলে থেকে বেরিয়ে পড়া দৈত্যের মত এইসব সন্ত্রাসী গ্রুপকে বশে আনা এখন মার্কিন সরকারের জন্য দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। এ প্রতিবেদনতি রেডিও তেহরান এর, আর মূলত মার্কিন সরকারের এই অসহায় ও হতাশ অবস্থাই ফুটে উঠেছে সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত তার বার্ষিক প্রতিবেদনে।

Exit mobile version