মিশরে কায়রোর রামসেস স্কয়ারে দিনভর সংঘর্ষে অন্তত ৬০জন নিহত

অনলাইন ডেস্ক, জি নিউজঃ-কায়রোর রামসেস স্কয়ারে একজন আহত বিক্ষোভকারীকে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ,মিশরের রাজধানী কায়রোসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে নতুন সংঘর্ষের খবর আসছে। কায়রোসহ বিভিন্ন জায়গায় অন্তত ৬০জন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। কায়রোর কেন্দ্রস্থলে রামসেস স্কয়ারে সমবেত হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর উপর পুলিশ গুলি এবং টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করেছে । বিবিসির মধ্যপ্রাচ্য সম্পাদক জেরেমি বোয়েন রামসেস স্কয়ার থেকে বলেন, এলাকায় একটি পুলিশ থানায় আক্রমণ করা হয়, এবং সেখান থেকেই সংঘর্ষের সূত্রপাত। স্কয়ারে টিয়ার গ্যাস এবং স্বয়ংক্রিয় রাইফেলের গুলি চালানো হয়, এবং পাশে একটি মসজিদ থেকে জেরেমি বোয়েন প্রচুর সংখ্যক আহত লোককে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসতে দেখতে পান। অন্যানা সংবাদদাতার বলেন, নীল নদের তীরে অবস্থিত গার্ডেন সিটি থেকে গুলির আওয়াজ পাওয়া গেছে, আর নদের তীরে ফোর সিজনস্‌ হোটেল থেকে ধোঁয়া উঠতে দেখা গেছে। বুধবার কায়রোসহ অন্যান্য শহরে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোরসির সমর্থকদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে প্রায় ৭০০জন নিহত হবার প্রতিবাদে মুসলিম ব্রাদারহুড দেশব্যপী বিক্ষোভের আহ্বান করে। মিশরের মুসলিম ব্রাদারহুড দলের ডাকা ‘ক্ষোভ দিবসে’ কায়রোর বিভিন্ন এলাকায় হাজার হাজার সমর্থক বিক্ষোভ শুরু করেছে।”আরো সহিংসতা এবং প্রাণহানী না ঘঠিয়ে কী করে এই সংকট থেকে তারা বের হবে, তা বোঝা যাচ্ছে না। জেরেমি বোয়েন- জরুরী আইনের নিষেধাজ্ঞা অগ্রাহ্য করে শুক্রবার জুম্মার নামাযের পর থেকেই তারা বিভিন্ন মসজিদ থেকে রাস্তায় নেমে পরেন। তবে কায়রো কেন্দ্রস্থলে রামসেস স্কয়ারে যে সমাবেশ করার পরিকল্পনা ব্রাদারহুড ঘোষণা করেছিলো, তা নস্যাৎ করার লক্ষে মিশরের সামরিক-সমর্থিত সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনী রামসেস স্কয়ারে ঢোকার সব রাস্তায় ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। একই সাথে তারা ২০১১ সালের ‘আরব স্প্রিং’ খ্যাত তাহরির স্কয়ারও পথচারীদের জন্য বন্ধ করে দিয়েছে। রামসেস স্কয়ারে বিবিসির সংবাদদাতা পরিস্থিতিকে উত্তেজনাপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন। স্কয়ারে অবস্থিত ফাতেহ মসজিদে শত শত ব্রাদারহুড সমর্থক জুম্মার নামাজের জন্য সমবেত হয়। এর পর তাদের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, ক্ষোভের মিছিল রে করার কথা। তাজা -গুলি বিক্ষোভকারীদের মূল স্লোগান হচ্ছে, ‘’জনগণ এই সামরিক অভ্যুত্থানকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়’। অভ্যুত্থান বলতে এখানে জুলাই মাসের ৩ তারিখে প্রেসিডেন্ট মোরসির বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানকে বোঝাচ্ছে। নিজের জীবন এবং সরকারি ভবন রক্ষার্থে তাজা গুলি ব্যবহার করার জন্য পুলিশকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে। শহরের বিভিন্ন জায়গায় সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া গাড়ি মোতায়েন করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। অন্যদিকে, প্রেসিডেন্ট মোরসির বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনীর পদক্ষেপের পেছনে যে সংগঠনের ব্যাপক গণসমাবেশ সব চেয়ে বেশি অবদান রেখেছে বলে বলা হয়, সেই তামারদ সংগঠন ব্রাদারহুডের বিপক্ষে গণসমাবেশের ডাক দিয়েছে। একই সাথে, সারা দেশে জনগণকে মহল্লায় মহল্লায় প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়েছে, বিশেষ করে খ্রিষ্টানদের গির্জা রক্ষা করার জন্য। গত কয়েক দিনে মিশরের বিভিন্ন জায়গায় দেশের কপটিক খ্রিষ্টান সম্প্রদায়কে লক্ষ্য করে হামলা হয়েছে। বলা হচ্ছে, এইসব হামলার পেছনে রয়েছে ইসলামপন্থীরা, যারা কপটিক খ্রিষ্টানদের সামরিক অভ্যুত্থান সমর্থন করার জন্য দায়ী করে। মিশরের একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বলছে, বুধবার এবং বৃহস্পতিবার ২৫টি গির্জা এবং খ্রিষ্টানদের মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি বাড়ি-ঘর এবং ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয়। জুলাই মাসের ৩ তারিখ থেকে প্রেসিডেন্ট মোরসির পুনর্বহাল দাবী করে মুসলিম ব্রাদারহুড এবং তার মিত্র সংগঠনগুলো কায়রো দু’টি জায়গায় বিশাল অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে আসছিলো। কিন্তু বুধবার রাবা আল-আদাউইয়া মসজিদের সামনে এবং কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে নেহাদা স্কয়ারে অবস্থিত সমাবেশগুলো ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ব্যাপক শক্তি প্রয়োগ করে। মিশরের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসেব মতে, বুধবারের সংঘর্ষে সারা দেশে অন্ততপক্ষে ৬৩৮জন মারা গেছেন। এ খবর বিবিসি বাংলার /জি নিউজ বিডি ডট নেট/ শনিবার, ১৭ অগাষ্ট, ২০১৩

Exit mobile version