মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে

ঢাকা প্রতিনিধি, জি নিউজ :   বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জিকে দেশের অন্যতম সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা প্রদান করা হয়েছে গতকাল     । বঙ্গভবনে এক ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে ভারতের রাষ্ট্রপতির হাতে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ ক্রেস্ট তুলে দিয়ে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বলেন, ‘১৯৭১ সালে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে মানবতা ও ন্যায়ের প্রতি আপনার সমর্থন আমাদেরকে উৎসাহিত ও অসীম সাহসী করেছে।’ রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান যখন প্রণব মুখার্জির হাতে ক্রেস্ট তুলে দেন তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বঙ্গভবনের দরবার হলে উপস্থিত  প্রায় ২শ’ গণমান্য ব্যক্তিবর্গ দাঁড়িয়ে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন।

রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে প্রণব মুখার্জির সমর্থন আমাদের জাতির ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। জাতি কৃতজ্ঞতার সঙ্গে চিরকাল তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করবে। তিনি বলেন, আজকের এই স্বীকৃতি শুধু আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে আপনার অবদানের জন্য নয়, এটি গোটা জাতির পক্ষ থেকে আপনার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতারও প্রতীক। বাংলাদেশ দ্রুত অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে ।

ভারতের রাষ্ট্রপতির অব্যাহত সমর্থন ও সহযোগিতা কামনা করেন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান । প্রণব মুখার্জি বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতীয় ভাই-বোনদের অবদানের কথা স্মরণ করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানান।

তিনি বলেন, এখানে দাঁড়িয়ে ১৯৭১ সালের সেই দিনগুলোর কথা আমি স্মরণ করছি। তখন আমার বয়স ছিল ৩৬ বছর। সেসময় বাংলাদেশের জনগণ যখন স্বাধীনতা যুদ্ধে লিপ্ত তখন আমি একজন এমপি ছিলাম।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রণব মুখার্জিকে বাংলাদেশের একজন প্রকৃত বন্ধু হিসাবে বর্ণনা করে বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমরা যখন যুদ্ধে লিপ্ত তখন তিনি বিভিন্ন মহলের সকল প্রতিবন্ধকতাকে উপেক্ষা করে আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন আদায়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।  আমাদের স্বাধীনতা অর্জন ত্বরান্বিত করতে ভারতের সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

প্রণব মুখার্জির এই সফরের ফলে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান ভ্রাতৃপ্রতিম সম্পর্ক আরো জোরদার হবে বলে প্রধানমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে প্রণব মুখার্জির উপর সম্মাননা পত্র পাঠ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ যৌথভাবে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি বলেছেন, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের প্রত্যয়, মুক্ত জ্ঞান, ভয়হীন চিত্র ও মর্যাদাবোধে দৃপ্ত উন্নত শির বাংলাদেশের ভবিষ্যতকে সমুজ্জ্বল করবে। তিনি বলেন, এতে আমার কোন দ্বিধা ও সংকোচ নেই। আমি তাদের অভিনন্দন জানাই।

প্রণব মুখার্জি বলেন, শিক্ষা ও নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার এক বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে বিদ্যালয়গামী ছাত্রীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তাদের বিনামূল্যে পাঠপুস্তক বিতরণ, ছাত্রীদের জন্য বৃত্তি প্রদান, মেয়েদের জন্য বিনা বেতনে দশম শ্রেনী পর্যন্ত শিক্ষাদানের ব্যবস্থা ও প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামুলক এবং শিক্ষাক্ষেত্রে এমন সুদুর প্রসারী উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে অভিনন্দন। মঙ্গলবার দুপুরে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে অবস্থিত ভারেতশ্বরী হোমসের ছাত্রীদের নান্দনিক শারীরিক কসরত প্রদর্শন শেষে এক সংক্ষিপ্ত আলোচনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, স্থানীয় সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেন, ভারতের হাইকমিশনার পংকজ শরণ, টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের প্রশাসক ফজলুর রহমান ফারুক, জেলা প্রশাসক আনিছুর রহমান মিঞা প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিব প্রসাদ সাহা।

তিনি আরো বলেন, সুস্থ ও নিরাপদ সমাজ গঠনের জন্য নারী শিক্ষা একটি অপরিহার্য পূর্ব শর্ত। এ কাজটি যেকোন সরকারের পক্ষে একা করা সম্ভব নয়। এ জন্যে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে।

রাষ্ট্রপতিকে বহন করা হেলিকপ্টারটি দুইটা ত্রিশ মিনিটে মির্জাপুর কুমুদিনী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মাঠে অবতরণ করে। এ সময় তাঁকে স্বাগত জানান কুমুদিনী কল্যাণ সংস্থার ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাজিব প্রসাদ সাহা ও ট্রাস্টি স্বপ্না সাহা। প্রণব মূখার্জির স্মৃতি ধরে রাখার জন্য কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে কুমুদিনী হাসপাতালের স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা নির্মাণ করে দেবে ভারত সরকার। তার ফলকও উম্মোচন করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি। ভারতের রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে কুমুদিনী পরিবারের সকল প্রতিষ্ঠান ও কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসীর মাঝে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

Exit mobile version