রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান আর নেই

ঢাকা প্রতিনিধি , জি নিউজ:নিয়তির কাছে হার মানলেন জননেতা রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান। গতকাল বাংলাদেশ সময় বিকাল ৪টা ৪৭ মিনিটে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহি … রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৮৫ বছর। ৯ মার্চ অসুস্থ হয়ে সিঙ্গাপুর নিয়ে যাওয়ার পর থেকেই দেশবাসী তার আরোগ্য কামনায় দোয়া করছিলেন। সবার মধ্যেই ছিল মহামান্য রাষ্ট্রপতির শারীরিক অবস্থা নিয়ে যত শঙ্কা। গতকাল বিকালে ঢাকায় রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান আর নেই- এই সংবাদ আসার সঙ্গে সঙ্গেই সারা দেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আর দলমত নির্বিশেষে নেমে আসে গভীর শোকের ছায়া।
ভাষাসৈনিক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বাংলাদেশের সংবিধানের অন্যতম রচয়িতা, সমকালীন রাজনীতির শুদ্ধতম পুরুষ জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত না হওয়া পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন। রাষ্ট্রপতির মৃত্যুতে আজ থেকে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির মরদেহ বিশেষ উড়োজাহাজে করে সিঙ্গাপুর থেকে আজ দুপুর ১২টায় দেশে আনা হচ্ছে।

দায়িত্ব নেওয়ার চার বছরের মাথায় জীবনাবসান ঘটল গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ১৯তম এই রাষ্ট্রপতির। এর আগে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালনকালে অসুস্থতার জন্য তিনি কয়েকবার হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। গত ডিসেম্বর মাসেও যুক্তরাজ্যে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়। তার মৃত্যুর খবরে সারা দেশে শোকের ছায়া নেমে আসে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও তার নিজেরসহ রাজনৈতিক অঙ্গনের এই অভিভাবক ব্যক্তিত্বের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর খবর শোনার পর প্রধানমন্ত্রী শোকে কাতর হয়ে পড়েন বলে জানা গেছে। তিনি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

স্পিকার আবদুল হামিদ, বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ বিভিন্ন মহল গভীর শোক প্রকাশ করেছেন দীর্ঘ এই রাজনীতিকের মৃত্যুতে। বিশ্বমিডিয়ার অনলাইন সংস্করণে রাষ্ট্রপতির মৃত্যুর খবর গুরুত্ব সহকারে প্রচার করা হয়।

বঙ্গভবন সূত্র জানায়, শ্বাসকষ্টজনিত কারণে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান গত ৯ মার্চ রাতে ঢাকা সেনানিবাসের সম্মিলিত সামরিক (সিএমএইচ) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে পরদিন রাতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হয়। ১১ মার্চ সকালে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। ১০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল রাষ্ট্রপতি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

জিল্লুর রহমানকে সিঙ্গাপুরে নেওয়ার পর সংবিধান অনুযায়ী স্পিকার আবদুল হামিদ ১৪ মার্চ থেকেই রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করছেন।

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় জিল্লুর রহমান তার স্ত্রী, মহিলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভানেত্রী আইভি রহমানকে হারান। তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। নবম জাতীয় সংসদে জিল্লুর রহমান প্রথমে সংসদ উপনেতা নির্বাচিত হন। পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেয়। তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০০৯ সালে বাংলাদেশের ১৯তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি শপথ গ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।

তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক : জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে আগামী তিন দিন রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্রপতির দায়িত্বে থাকা স্পিকার আবদুল হামিদ রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন। আজ থেকে এই শোক পালন করা হবে।

মরদেহ আসবে আজ : আজ দেশে আসছে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মরদেহ। সদ্যপ্রয়াত রাষ্ট্রপতির মরদেহবাহী বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ উড়োজাহাজ দুপুর ১২টায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে। বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রপতির মরদেহ গ্রহণ করবেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা তার সঙ্গে থাকবেন।

আগামীকাল শুক্রবার বাদ জুমা জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে প্রথম এবং বিকাল ৪টায় জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

বেলা ১২টায় মরদেহ আসছে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Exit mobile version