শরীরে যন্ত্র ঢুকিয়ে চিকিৎসা

অনলাইন ডেস্ক:- হলিউডের একটি ছবিতে এক বিজ্ঞানী ভুল করে তার সন্তানদের আকারে ছোট করে অন্যের শরীরের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন৷ আজ মানুষ না হলেও মিনি-মেশিন শরীরে প্রবেশ করানো সম্ভব হয়ে উঠেছে৷ চিকিৎসাশাস্ত্রের জন্য এটা সুখবর বৈকি৷
মানুষের শরীরের মধ্যে ওষুধ পরিবহন করতে হলে তার আধারকে অত্যন্ত ছোট হতে হবে৷ তাছাড়া সেটিকে স্বাধীনভাবে শরীরের মধ্যে চলাফেরা করতে হবে, যাতে সেটি টিউমারের মতো কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে৷
জার্মানির স্টুটগার্ট শহরে মাক্স-প্লাংক ইনস্টিটিউটে এক আন্তর্জাতিক গবেষক দল সেই অসাধ্য সাধন করেছেন৷ তারা অতি ক্ষুদ্র ও মোবাইল আধার সৃষ্টি করেছেন, যা মানুষের শরীরের তরলে- এমনকি নির্দিষ্ট কোষের মধ্যেও প্রয়োগ করা সম্ভব৷
অধ্যাপক পেয়ার ফিশার বলেন, ‘‘এর বিশেষত্ব হলো, এগুলো অত্যন্ত ক্ষুদ্র কাঠামো৷ কখনো সেগুলো মাত্র কয়েক’শ পরমাণুর সমান৷ এতোই ছোট, যে সেগুলো শরীরের টিস্যুর মধ্যে চালান করে ভালো করে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব৷”
এই ‘ক্ষুদ্র সাঁতারু’ নৌকার মতো বৈঠা দিয়ে ধীরে ধীরে শরীরের তরলের মধ্যে এগিয়ে চলে৷ তবে শরীরের তরল পদার্থের বিশেষত্ব রয়েছে৷ অবস্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে তাদের ঘনত্ব বদলে যায়৷ গতি যত বেশি হয়, তরল তত পাতলা ও তার রেজিস্টেন্স তত কম হয়৷ ‘ক্ষুদ্র সাঁতারু’-র আধার যদি দ্রুত খুলে যায় এবং ধীরে বন্ধ হয়, তখন সে তরলের মধ্যে এগিয়ে চলে৷
আরো ছোট হওয়ায় ব্যবহারিক দিক থেকে এগিয়ে রয়েছে ন্যানো-স্ক্রু৷ এর আয়তন একটি চুলের তুলনায় কয়েক হাজার গুণ কম৷ এমন স্ক্রু তৈরি করতে গবেষকদের নতুন পথে অগ্রসর হতে হয়েছে৷ ঘুরতে থাকা একটি প্লেটের মধ্যে ন্যানো স্ক্রু গজিয়ে ওঠে৷
একমাত্র মাইক্রোস্কোপের নিচেই তাদের নড়াচড়া দেখা যায়৷ এমন ন্যানো-প্রপেলার এক চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে সত্যি এগিয়ে যায়৷ সেটিকে চালাতে বিজ্ঞানীরা কয়েকটি জায়গায় ধাতুও ব্যবহার করেছেন৷
মাক্স-প্লাংক ইনস্টিটিউটের ডেবোরা ওয়াকার বলেন, ‘‘স্ক্রুটি আসলে কাচ দিয়ে তৈরি৷ কাঠামোর মধ্যে নিকেলের ছোট্ট একটি অংশ বসিয়েছি৷ সেটি আবার চৌম্বক গুণসম্পন্ন৷ তার উপর চৌম্বক ক্ষেত্রে স্ক্রু-টিকে ঘোরানো হয়, যাতে সেটি যে কোনো স্ক্রুর মতো ঘুরে-ঘুরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে৷”
এই স্ক্রু এতো ছোট যে, নীতিগতভাবে সেটিকে মানুষের কোষের মধ্যেও প্রয়োগ করা সম্ভব৷ তবে এখনো সেটিকে কোষের মধ্যে প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া আবিষ্কার হয়নি৷ তবে টিস্যু বা তন্তুর মধ্যে তার প্রয়োগের সম্ভাবনা অনেক বেশি৷ যেমন চোখের মধ্যে৷
অধ্যাপক পেয়ার ফিশার বলেন, ‘‘চোখের ভিট্রেয়াস বডির মধ্য দিয়ে রেটিনা পর্যন্ত পৌঁছাতে ন্যানো প্রপেলার ব্যবহার একটা প্রয়োগ হতে পারে৷ সেই ন্যানো প্রপেলার সাথে ওষুধ বা এজেন্ট নিয়ে এসে যথাস্থানে প্রয়োগ করতে পারে৷ আর ভালো ব্যাপার হলো, কাজের শেষে ন্যানো প্রপেলার আবার একই পথ দিয়ে স্ক্রু-র মতো ফিরে যেতে পারে৷”
শরীরের মধ্যে মিনি-মেশিনের চলাফেরা আর কল্পবিজ্ঞান নেই৷ কমপক্ষে গবেষণাগারে তা বাস্তব হয়ে উঠেছে৷ সূত্র : ডয়চে ভেল

Exit mobile version