শিবিরের সভাপতি গ্রেফতার : ভাঙচুর-আগুন

jjjস্টাফ রিপোর্টার, জি নিউজ :ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলওয়ার হোসেনকে গতকাল গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মুক্তির দাবিতে আগামীকাল মঙ্গলবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ছাত্রশিবির। রোববার সন্ধ্যার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই হরতালের ঘোষণা দেয় সংগঠনটি। এর পর থেকেই শিবির রাজধানীতে যানবাহন ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ শুরু করে।

রোববার বিকেলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)শ্যামলীর একটি বাসা থেকে শিবিরের সভাপতি দেলাওয়ার হোসেনকে গ্রেফতার করে । এর পরই বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সোমবার সারা দেশে বিক্ষোভ ও মঙ্গলবারের হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে শিবির। ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান বলেন, সামপ্রতিক হরতাল ও বিভিন্ন সময়ে গাড়ি ভাঙচুর, অগি্নসংযোগ, ককটেল বিস্ফোরণসহ বিভিন্ন নাশকতার অভিযোগ রয়েছে শিবির সভাপতি দেলওয়ার

হোসেনের  বিরুদ্ধে। এসব বিষয়ে দায়ের হওয়া অনেকগুলো মামলার এজাহারভুক্ত আসামিও তিনি। মামলার আসামি হিসেবেই তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ডিবি সূত্র জানায়, শ্যামলী এলাকায় নাশকতার উদ্দেশ্যে শিবিরের নেতা-কর্মীরা জড়ো হচ্ছেন, এমন খবরে দুপুর থেকে অভিযান শুরু করে ডিবি। অভিযান অাঁচ করতে পেরে শিবিরের নেতা-কর্মীরা এলাকা ছাড়েন। একটি মোটরসাইকেলে চড়ে শ্যামলীর এক আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপন করেন দেলওয়ার

হোসেন । বিকেল চারটার দিকে ওই বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি।

গতকাল সন্ধ্যা ছয়টার দিকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ সোমবার দেশব্যাপী বিক্ষোভ ও আগামীকাল মঙ্গলবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করে শিবির। একই বিজ্ঞপ্তিতে সভাপতিকে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়েছেন শিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল জব্বার। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, সভাপতিকে মুক্তি না দিলে সারা দেশে লাগাতার হরতালসহ কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের মাধ্যমে সারা দেশ অচল করে দিয়ে সরকারের পতন ঘটানো হবে। শিবিরের সভাপতিকে গ্রেফতারের নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান। বিবৃতিতে রফিকুল শিবির সভাপতিসহ সামপ্রতিক সময়ে গ্রেফতার জামায়াত-শিবিরের সব নেতা-কর্মীর মুক্তি দাবি করেছেন।

ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় জামায়াত-শিবির দেলোয়ারের গ্রেফতারের প্রতিবাদে গাড়ি ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগ করেছে।

ঢাকা,  চট্টগ্রাম, লক্ষ্মীপুর ও রংপুরে বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে রাজধানীর ধানমন্ডিতে হরতালের পক্ষে শিবিরের একটি মিছিল বের হয়। সেই মিছিল থেকে একটি প্রাইভেট গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। পরে পুলিশ ধাওয়া দিলে মিছিলকারীরা কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে বাড্ডা-নতুন বাজার সড়কে যানবাহন ভাঙচুর শুরু করেন শিবিরের কর্মীরা। যানজটে থেকে বেশ কিছু গাড়ি ভাঙচুর করা হয় বলে জানিয়েছেন একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী। এ সময় সুবাস্তু নগরভ্যালির সামনে বিআরটিসির নতুন একটি দোতলা বাস পুড়িয়ে দেয়া হয়। বাসটি মোহাম্মদপুর থেকে নতুনবাজার রুটে চলাচল করত। পুলিশের গুলশান বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহনেওয়াজ খালেদ বলেন, ১০/১২ জনের মতো ব্যক্তি সুবাস্তু নজর ভ্যালির সামনে রাখা কিছু মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেছেন ও একটি দোতলা বাসে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। এদিকে ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে জানানো হয়, সন্ধ্যায় ঢাকেশ্বরী মন্দির এলাকায় সেফটি পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। বাসটি মিরপুর থেকে ঢাকেশ্বরী মন্দির পর্যন্ত চলাচল করত। একই সময়ে মাতুয়াইলে মা ও শিশু হাসপাতালের সামনে একসঙ্গে তিনটি বাসে অগি্নসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ জানিয়েছে, শিবিরের কর্মীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, পুরান ঢাকার রায়সাহেব বাজার মোড়ে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবির’ ব্যানার হাতে জজকোর্ট এলাকা থেকে একটি ঝটিকা মিছিল বের হয়। মিছিলটি রায়সাহেব বাজার মোড় এলাকায় এসে সহিংস হয়ে ওঠে। মিছিল থেকে পাঁচটি সিএনজি চালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করা হয়, একটিতে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এ সময় পাঁচটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এদিকে রংপুর প্রতিনিধি জানায়, রংপুর নগরীর ধর্মদাস এলাকা ও মিঠাপুকুৃর উপজেলা সদরে গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৮ টার দিকে শিবির কর্মীরা বাসে আগুন দিয়েছে। এসময় ভাঙচুর করা হয় ২০টি গাড়ি। শিবির কর্মীরা রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। ঘটনার সময় বাস থেকে নামতে গিয়ে ১০ যাত্রী আহত হয়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, শিবির কর্মীরা রাত সাড়ে ৮ টার দিকে রংপুর নগরীর ধর্মদাস এলাকায় রংপুর-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করে। এসময় তারা একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়। ভাঙচুর করে ১২টি গাড়ি। ঘটনার সময় প্রাণ ভয়ে বাস থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে ১০ যাত্রী আহত হয়। অন্যদিকে রাতে রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলা সদরের বাজারসহ আশে পাশের এলাকায় পর পর ১০টি ককটেল বিস্ফোরই ঘটায় শিবির কর্মীরা। তারা ৮টি গাড়ি ভায়চুর করে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এঘটনায় কোতয়ালী থানার অফিসার্স ইনচার্জ সাহাবুদ্দিন খলিফা জানান, খবর পেয়ে পুলিশ ও দমকল কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় পুলিশী টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
মৌলভীবাজার থেকে  আব্দুল হাকিম রাজ জানান শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি দেলাওয়ার হোসেনকে গ্রেফতার ও সিলেটে জামাত নেতাদের বাড়ীতে আগুন দেওয়ার প্রতিবাদে মৌলভীবাজারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শিবিরের শহর শাখার নেতাকর্মীরা।
রবিবার বিকেলে শহরের পুরাতন সিলেট বাসষ্টেন্ড এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে জামাত শিবির কর্মীরা। পরে তারা পশ্চিমবাজার চৌরাস্তায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশ অনুষ্টিত হয়। উক্ত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী ছাত্রশিবির মৌলভীবাজার শহর সভাপতি হাফেজ তাজুল ইসলাম, জেলা সভাপতি দেলোওয়ার হোসেন, শহর সেক্রেটারী ফখরুল ইসলাম, জেলা সেক্রেটারী আল মাহমুদ, শহর সাংগঠনিক সম্পাদক মুর্শেদ আহমদ চৌধুরী, স্কুল কার্যক্রম সম্পাদক ইকবাল আহমদ চৌধুরী, অর্থ সম্পাদক আবু নোমান মুয়িন, শিক্ষা সম্পাদক শাহিন মিয়া প্রমুখ।
বক্তরা বলেন, আটক শিবির সভাপতির ২৪ ঘন্টার মধ্যে মুক্তি দেয়া ও সিলেটে জামাত নেতাদের বাড়ীতে আগুন দেয়ার সাথে জড়িতদের গ্রেফতারের দাবী জানান।

 

জি নিউজ বিডি.নেট/০১-০৪-২০১৩

Exit mobile version