শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথম টি-২০- শেষ বলে হেরে গেল বাংলাদেশ

স্পোর্টস ডেস্কঃ-  জেতার জন্য শেষ বলে ৩ রান দরকার। এ অবস্থায় থুসারা পেরেরার বল খেলতে প্রস্তুত ৫৮ রানে অপরাজিত ব্যাটসম্যান এনামুল হক। পঞ্চম বলের পর প্রায় পাঁচ মিনিট সময় অপচয় করে যে বলটি পেরেরা করলেন সেটি ছিল হাই ফুলটস। অন-ফিল্ড আম্পায়ররা বলটিকে ‘নো-বল’ না ডাকায় থার্ড আম্পায়ারের পক্ষে এটিকে কোনোভাবেই ‘নো’ বলা সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় বলটিকে সজোরে আঘাত করলেন এনামুল। কিন্তু বাউন্ডারির দিকে যাওয়ার পরিবর্তে বল চলে গেল সোজা আকাশের দিকে। মাটিতে নেমে আসলে সেটিকে তালুবন্দি করলেন পেরেরাই। ফলে ১৬৯ রান তাড়া করতে নেমে মাত্র ২ রানে হেরে গেল বাংলাদেশ। স্বাগতিকরা রান তাড়া করতে নেমে অভিজ্ঞ দলের মতোই শুরু করে। ওপেনার তামিম কাঁধের ব্যথা নিয়েই ব্যাট করেন। আরেক ওপেনার শামসুর রহমানের সঙ্গে জুটি বেঁধে স্কোর ৫২ পর্যন্ত টেনে নিলেন। ৪ ওভারে দলের রান ২৮, তামিম ৮ রানে আর শামসুর ২০ রানে। পরের ওভারেই তামিম উপর্যুপরি বাউন্ডারি হাঁকাতে শুরু করেন। পাশে থাকা শামসুর ২২ রানে মেন্ডিসের বলে ফিরতি ক্যাচ দিলে গ্যালারিতে শঙ্কা নেমে আসে। এই বুঝি আসা-যাওয়ার পর্ব শুরু হল। কিন্তু সেটা হতে দিলেন না তামিম আর এনামুল হক। এ প্রতিবেদনেটি রেডিও তেহরানর,তবে বেশি দূর যাওয়া হলো না তামিমের ৩০ রানে পেরেরার বলে ম্যাথুসের হাতে বন্দি হলেন। ২ উইকেটে স্কোর ৬৪। যেখানে লঙ্কানা ৫০ রান করেছে ২৮ বলে সেখানে বাংলাদেশ দলীয় ৫০ পূর্ণ করতে ব্যয় করেছে ৩৬ বল। তৃতীয় জুটিতে সাকিব-এনামুল জুটি শত রানের কোটা পার করিয়ে দেয়। এনানুল ২৭ আর সাকিব ২১ রানে। জয় থেকে বাংলাদেশ ৬৭ রান দূরে। হাতে অবশিষ্ট ছিল ৮ উইকেট আর ৪৩ বল। ওভার প্রতি দরকার ৯.৪২ রান! কঠিন তবে অসম্ভব নয়।কিন্তু মারকুটে ভূমিকায় সাকিব ২৬ রান করে বোল্ড হলেন কুলাসেকারার বলে। ক্রিজে তখন এনামুলের সঙ্গী নাসির হোসেন। এনামুল ২৮ রানে ব্যাট করছেন। আর ১৫ ওভার শেষ হয় ৩ উইকেটে ১১৭ রানে। ৩০ বলে ৫২ রান! বোলার মেন্ডিসকে ফিল্ডারের মাথার উপর দিয়ে হাত স্পর্শ করে ছক্কা মেরে নাসির দূরত্ব কমানোর চেষ্টা করেন। শেষ দিকে যে হিসাবটা কঠিন হবে বোঝা যাচ্ছিল। হাত খুলে মারা ছাড়া এনামুল-নাসিরের সামনে কোনো পথ ছিল না। সেটা করলেন দুই ব্যাটসম্যান। যথারীতি নাসির ১৩ বলে ১৬ রান করে মালিঙ্গার বলে থিসারা পেরেরার হাতে ক্যাচ দিলেন। আর এরপর অভিষেক ঘটা মিথুন ইনিংস শুরু করা আগেই বল পুশ করে ক্যাচ তুলে দিলে বাংলাদেশ শিবিরের জয়ের আশাটা ফিকে হয়ে যায়। ৫ উইকেটে ১৩৪ রান। এবার এনামুলের সঙ্গী ফরহাদ রেজা। তবে ওভারপ্রতি রান রেটের হিসাব বলছে প্রায় অসম্ভব কাজ। কারণ ওভার প্রতি দরকার ১২ রানের বেশি। ১৮.৪ ওভারে স্কোর ১৫০। শেষ ৮ বলে দরকার ১৯ রান। আর ৬ বলে দরকার ছিল ১৭ রান। শেষ ওভারে বোলার থিসারা পেরেরা। প্রথম বলে চার, দ্বিতীয় বলে দুই, তৃতীয় বলে রান নিতে গিয়ে ফরহাদ রেজার রান আউটের আবেদন মঞ্জুর। শেষ তিন বল। স্কোর ১৫৮/৬, চতুর্থ বলে আবারও চার, শেষ দুই বলে দরকার ৭ রান! ব্যাটিংয়ে এনামুল। তুলে মারলেন সোজা চার। শেষ বলে দরকার তিন রান! পুরো স্টেডিয়ামে দর্শক দাঁড়িয়ে আছে। পারবে তো! হল না। আনামুল তুলে মারলেও বল মাথার উপর উইকেটেই ছিল। বোলার পেরেরার কোনো কষ্ট হয়নি ক্যাচ লুফে নিতে। যদিও শেষ বলে নো বলের আবেদন হয়েছিল। কিন্তু সেটা টিভি রিপ্লেতে টেকেনি। ২০ ওভারে স্কোর ১৬৭। এনামুল হক বিজয় ৪৫ বলে সাতটি চারের সাহায্যে সর্বোচ্চ ৫৮ রান করে আউট হন।এর আগে লঙ্কানরা ৭ উইকেটে করে ১৬৮ রান। ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজে বিশ্বকাপ টি২০-তে লঙ্কা টস হেরে ব্যাট করতে নেমে সংগ্রহ করেছিল ১৪৭ রান ৫ উইকেটে। আর জিতেছিল ৬৪ রানে। ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার পাল্লেকেলেতে আবারও টস হেরে ব্যাট করে ৫ উইকেটে ১৯৮ রান সংগ্রহ করে আর ম্যাচে জিতে যায় ১৭ রান। সেই সব পরিসংখ্যানটা অজানা থাকার কথা নয় মাশরাফি বাহিনীর। তাই তো শুরু থেকেই আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। ওপেনিং বোলিং করতে এসে মাশরাফি ওভারের শেষ বলে ওপেনার দিলশানকে দলের ৭রানের মাথায় বোল্ড করে সাজঘরের পথ দেখালেন। সেই থেকে বাংলাদেশে দলের বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে অন্যরকম একটি সুরের তালে এগিয়ে চলে। অপর ওপেনার পেরেরা টিকে থাকলেও ওয়ানডাউনে নামা চান্দিমালকে সাকিব ক্যাচ দিতে বাধ্য করলেন।১৫ বলে ১৮ রান করে বিপদের কারণ হয়ে উঠার সংকেত দেয়া চান্দিমাল ফরহাদ রেজার হাতে বন্দি হলেন। এরপর কুশল পেরেরার সঙ্গী হলেন লঙ্কান ব্যাটিং কাণ্ডারি সাঙ্গাকারা। কিন্তু বেশি দূর যাওয়া হল না সাঙ্গাকারার সাকিবের স্পিন যাদুতে। ৬ বলে ১১ রান করা সাঙ্গাকারা তুলে মারলেন। নিশ্চিতই ছিলেন সাঙ্গা বাউন্ডারি হচ্ছে। কিন্তু ফিল্ডার নাসির বেশ দূর থেকে দৌড়ে এসে ঝাঁপ দিলেন আর বল হাতের মুঠোয়। হাফ ছেড়ে বাঁচল বাংলাদেশ। কারণ সাঙ্গাকারা চলে যাবার পর লঙ্কান স্কোর ৩ উইকেটে ৭৭ আর আর ওভার শেষ হয়েছে ৮.১। চতুর্থ উইকেটে পারাসানা অভিষেক ঘটা আরাফত সানীর শিকার হলেন নিজের ৪ রানের মাথায়। আর এরপর টি২০ ক্যারিয়ারে তৃতীয় ফিফটি করে ৬৪ রানে থাকা ওপেনার পেরেরাকে আরাফাতই ফেরত পাঠালেন। দলের স্কোর ৫ উইকেটে ১১৬ রান। শেষ দিকে ম্যাথুস ১১ রানে রান আউট হলেন, বোলার থিসারা পেরেরা ১৯ রানে অপরাজিত থাকলেও কুলাসেকারা ৩১ রানে মাশরাফির ব্যক্তিগত দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হলে নির্ধারিত ২০ ওভারে লঙ্কানদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ১৬৮ রান।আগামী শুক্রবার একই সময়ে একই ভেন্যুতে দু’দলের মধ্যে দ্বিতীয় ও শেষ টি-২০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ঢাকায় ফিরে দু’দল তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ খেলবে। এর আগে দু’দলের মধ্যে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-০তে জিতে নেয় সিংহলিজরা। তাঃ-১৩ ফেব্রুয়ারি২০১৪।

 

Exit mobile version