রোববার সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।
শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ মন্ত্রিসভার সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতারা টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাবেন।
বঙ্গবন্ধুর সমাধি প্রাঙ্গণে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা এবং গ্রন্থমেলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে সোমবার বিকালে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এক সমাবেশের আয়োজন করেছে আওয়ামী লীগ।
দিবসটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা স্মরণ করে এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বলেছেন, “তার অসামান্য অবদানের জন্য আজ এদেশের মানুষের কাছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এক ও অভিন্ন স্বত্বায় পরিণত হয়েছে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ থাকবে।স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন তা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের নতুন প্রজন্মকে সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেছেন, জাতির পিতার হত্যাকারীদের প্রচলিত আদালতে বিচার ও রায় কার্যকর করার মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি আজ কিছুটা হলেও দায়মুক্ত হয়েছে। ফাঁসির আদেশপ্রাপ্ত অবশিষ্ট পলাতক আসামিদের দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকর করার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধী-মানবতাবিরোধীদের বিচারকাজ চলছে এবং আসামিদের বিরুদ্ধে রায় দেওয়া শুরু হয়েছে।
টুঙ্গিপাড়ায় এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নেয়া শেখ মুজিবুর রহমান স্কুলজীবনেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কৈশোরে তার রাজনীতির দীক্ষাগুরু ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে তিনি প্রথমবারের মতো কারাবরণ করেন।
ম্যাট্রিকুলেশন পাসের পর কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে অধ্যয়নকালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হকসহ তৎকালীন প্রথম সারির রাজনৈতিক নেতাদের সান্নিধ্যে আসেন শেখ মুজিব। ওই সময় থেকেই নিজেকে ছাত্র-যুবনেতা হিসেবে রাজনীতির অঙ্গনে প্রতিষ্ঠিত করেন, যোগ দেন আওয়ামী মুসলিম লীগে, যা পরে অসাম্প্রদায়িক চেতনা নিয়ে আওয়ামী লীগ নাম নেয়।
বাঙালির অধিকার আদায়ের আন্দোলনে বারবার কারাগারে যেতে হতে হয়েছে শেখ মুজিবকে। আর আন্দোলন-সংগ্রামে সক্রিয় অংশগ্রহণ তাকে নিয়ে যায় বাঙালির নেতৃত্বে। আওয়ামী লীগ-প্রধান হিসেবে ’৬৬-এ ঐতিহাসিক ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন তিনি, যার পরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় কারারুদ্ধ হতে হয় তাকে।
’৬৯-এর ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ছাত্র-জনতা শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দেয়। ’৭০-এর নির্বাচনে বাঙালি বঙ্গবন্ধুর ছয় দফার পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়। আওয়ামী লীগ পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক দলের ম্যান্ডেট লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালির এ নির্বাচনী বিজয়কে মেনে নেয়নি।
এরপর বঙ্গবন্ধু স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে প্রথমে স্বাধিকার আন্দোলনে রূপ দেন। ’৭১-এর মার্চে শুরু করেন অসহযোগ আন্দোলন। ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) জনসমুদ্রে তার ঘোষণা ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বাঙালিকে স্বাধীনতা আন্দোলনের পথে ধাবিত করে।
’৭১-এর ২৫ মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ শুরু করার পর রাতেই বন্দি হন শেখ মুজিব। তবে তার আগে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান তিনি।
মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে অন্তরীণ থাকলেও তার নামেই যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে বাঙালি। মুক্তিযুদ্ধকালীন মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতিও করা হয় তাকে।
অন্যদিকে স্বাধীনতা ঘোষণা ও বিদ্রোহের অভিযোগ এনে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানে গোপন বিচারের নামে প্রহসন শুরু হয় বঙ্গবন্ধু বিরুদ্ধে।
নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় আসে। এরপর পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তিলাভ করে বঙ্গবন্ধু ’৭২-এর ১০ জানুয়ারি স্বাধীন ভূমিতে পা রাখেন।
সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রের দায়িত্বভার নিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের পুনর্গঠন ও পুনর্বাসনের কাজে আত্মনিয়োগ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু, যদিও ওই সময়ে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র থেমে ছিল না।
আর আওয়ামী লীগের অনেক নেতার কর্মকাণ্ডেরও সমালোচনা ওঠে। আর আন্দোলনের নেতা হিসেবে বঙ্গবন্ধুর যে অভাবনীয় জনপ্রিয়তা ছিল, রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে যে জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে তিনি পারেননি বলে অনেকেরই মত।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে জাতীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেন। গঠন করেন বাকশাল, যার ফলে দেশে অন্য সব রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ হয়, চারটি সংবাদপত্র ছাড়া অন্য সব সংবাদপত্রও বন্ধ করে দেয়া হয়।
তার কিছু দিনের মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট এক দল সেনা কর্মকর্তার অভ্যুত্থানে নিজ বাসভবনে সপরিবারে নিহত হন বঙ্গবন্ধু। যে দেশের স্বাধীনতার জন্য রাজপথ কিংবা কারাগারে যার জীবন কেটেছে, সেই দেশ স্বাধীন হওয়ার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে অবসান ঘটে স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়কের এবং তা বাঙালিরই হাতে।