জেলার তালা উপজেলার শাহাপুর গ্রামের চাষী আব্দুর রশিদ জানান, প্রায় ৭ থেকে ৮ বছর যাবত তিনি অন্যান্য সবজির পাশাপাশি কচরমুখি চাষ করে আসছেন। তবে অন্যসব সবজির তুলনায় কচুরমুখিতে লাভ বেশি হওয়ায় প্রতি বছরে তিনি আগ্রহের সাথেই চাষ করে থাকেন। তিনি এবছর প্রায় আড়াই বিঘা জমিতে কচুরমুখি চাষ করেছেন। জমি চাষ, মজুর খরচ ও সার কীটনাশক দিয়ে তার প্রতি বিঘাতে ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা উৎপাদন খরচ হয়েছে। আর প্রতি বিঘাতে প্রায় ৯০ থেকে ৯৫ মণ কচু উৎপাদন হয়। যা বাজারে বিক্রি হয় কমপক্ষে ৯০ হাজার টাকা। তিনি বলেন, বাজারে এখন মুখি কচুরমুখি পাইকারী দর যাচ্ছে ১ হাজার টাকার উপরে। আগামী ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে তার ক্ষেতের কচরমুখি উত্তোলন করা যাবে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বেতলা গ্রামের কচুরমুখি চাষী আব্দুল জব্বার জানান, গত কয়েক বছর ধরে তিনি কচুরমুখি চাষ করে আসছেন। গত বার এক বিঘা জমিতে চাষ করলেও এবার তিনি দেড় বিঘা জমিতে কচুরমুখি চাষ করেছেন। তবে এবার তিনি গতবারের চেয়ে কিছুটা আগাম রোপন করেছিলেন। তিনি জানান, ইতোমধ্যে তার ক্ষেতের প্রায় অর্ধেক মুখি উত্তোলন করা হয়েছে। বিঘাতে ৮০ থেকে ৮৫ মণ পর্যন্ত কচু উৎপাদন হবে বলে তিনি আশা করছেন। এ পর্যন্ত ৬৫ মণ কচুরমুখি বিক্রি করেছেন তিনি। তাছাড়া এখনো পর্যন্ত ক্ষেতে যে পরিমান কচু রয়েছে তা প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ মণ হতে পারে। কৃষক আব্দুল জলিল এপর্যন্ত প্রায় ৭০ হাজার টাকার কচুরমুখি বিক্রি করেছেন। বর্তমান দর যদি এভাবে থাকে তাহলে আরো ৬৫ থেকে ৭০ হাজার টাকার মুখি বিক্রি হবে। তিনি আরও জানান, উৎপাদন খরচ তুলে এবার তার দেড় বিঘা জমির কচু চাষে অন্তত্ব ১ লাখ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা লাভ হবে।
জেলা সদরের সুলতানপুর বড় বাজারের কাচামাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. রওশন আলী জানান, গ্রীষ্মকালিন সবজি হিসেবে মুখির চাষ ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে যা উৎপাদন হয় তাতে জেলার চাহিদা মেটে না। ফলে জেলার বাইরে থেকেও কচুরমুখি আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হয়। বর্তমানে কচুরমুখির পাইকারী দর প্রতি মণ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। রমজানে কিছুটা দাম বেড়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
এদিকে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, সাতক্ষীরার সাতটি উপজেলাতেই চলতি মৌসুমে কচুরমুখি চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে তালা, সাতক্ষীরা সদর ও কলারোয়া উপজেলায় বেশি পরিমানে কচুরমুখির চাষ হয়েছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সোলায়মান আলী জানান, গ্রীষ্মকালিন সবজি হিসেবে কচুরমুখি চাষ খুবই লাভজনক একটি ফসল। তিনি বলেন, এতো কম সময়ে অন্য কোনো সবজিতে এতো ভালো উৎপাদন হয় না। তাছাড়া এটি চাষে কোনো ঝুঁকি নেই। ফলে সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা এ ফসলটি বাণিজ্যিকভাবে চাষ করতে ঝুকে পড়েছে। ফলে এজেলায় কচুচাষিদের একটা সুদিন আসছে বলে তিনি মনে করেন।
কাজী নাসির উদ্দীন , সাতক্ষীরা