সাতক্ষীরা প্রতিনিধি,জি নিউজঃ বৃটিশ আমলে তৈরি লাবনী সিনেমা হল আর ¯^াধীনতার পরপরই তৈরি লাবণী মার্কেট। পরিকল্পিত কোন নকসা এবং অনুমোদন ছাড়াই গড়ে উঠা সিনেমা হলটির বয়স শত বছরেরও বেশি সময় পার করেছে। একই সাথে চার দশকের অধিক সময় পার করেছে লাবণী মার্কেট। ফলে দুটোরই অবস্থা এখন ভংগুর। যেকোন সময় লাবণী সিনেমা হল, মার্কেট ও জেলা সাংস্কৃতিক পরিষদ ধ্বসে পড়ে বর্তমান সময়ে দেশে সবচেয়ে আলোচিত সাভার ট্রাজেডির মত মর্মাšি—ক ঘটনার আশংকা করছেন শহরের বিজ্ঞজনরা। ইতোমধ্যে প্রশাসনের প¶ থেকে এগুলোর পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়েছে। ভেঙ্গে পরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলার চেষ্টায় বাধ সেজেছে কথিত একটি প্রভাবশালি মহল। ফলে যেকোন মুহুর্তে ঘটে যাওয়া সাভার ট্রাজেডির মত এখানের ¶তিগ্র¯—দের দায়ভার কে নেবে? কথিত কুচক্রি ওই মহলটি না মার্কেটের সভাপতি জেলা প্রশাসক ড. মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। এ প্রশ্ন এখন সচেতন সাতক্ষীরাবাসীর।
খোজ খবর নিয়ে জানাগেছে, বৃটিশ আমলের ১৯১১ সালে গড়ে উঠে লাবনি সিনেমা হল। ইটের গাথনি, লোহা আর কাঠের ফ্রেম এবং টিনের ছাউনি দিয়ে নির্মিত এহলটি। এরপর বৃটিশ পার করে পাকি¯—ান আমল শেষ হয়ে ১৯৭১ সালে রক্ত¶য়ী যুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্ম নেয় বাংলাদেশ। ¯^াধীনতার পরপরই ৭৩-৭৪ সালে গড়ে উঠে লাবনি মার্কেট। তৎকালিন সময়ে কোন প্রকার পান পরিকল্পনা ছাড়াই গড়ে তোলা হয় মার্কেটটি। শুর“তেই যারা এমার্কেটে ভাড়াটিয়া হিসেবে ব্যবসা শুর“ করেন তাদের মাসিক ভাড়া ছিল ৭৫ থেকে ১০০ টাকা। অভিযোগ রয়েছে, প্রথম এবং মুল এসম¯— ভাড়াটিয়াদের খাতা কলমে ১০ হাজার টাকার অগ্রিম দেখিয়ে ডিড করে দেওয়া হয়। জেলা সাংস্কৃতিক পরিষদ নামের এসংগঠনটির তৎকালিন সময়ে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন কামর“ল ইসলাম ফার“ক। একই সংগঠনের সভাপতি হিসেবে পদাধিকার বলে জেলা প্রশাসক। ২৯ শতক জমির উপর গড়ে উঠা লাবনি মার্কেট ও সিনেমা হলের ৩৩টি ঘর দেখভাল করার দায়িত্ব পড়ে জেলা সাংস্কৃতিক পরিষদের উপর।
সংশিষ্ট সূত্র জানায়, সাংস্কৃতিক পরিষদের তৎকালিন সাধারণ সম্পাদক কামর“ল ইসলাম ফার“ক ৩৩টি ঘরের মধ্যে নিজের দুই ছেলের নামে দুটি ও স্ত্রীর নামে ১টি মোট ৩টি দোকান তার পরিবারের নামে বরাদ্ধ নেন। বাকি দোকানগুলো অন্যান্যরা ব্যবসা করছেন। দীর্ঘ একটি সময় কামর“ল ইসলাম ফার“কের তত্ত¡াধানে থাকে জেলা শহরের বৃহৎ এ প্রতিষ্ঠানটি। এরপর বিগত ২০০৭ সালে সাংস্কৃতিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন হেনরি সরদার। তিনি দায়িত্ব পাওয়ার পর খোজ নিয়ে দেখেন দীর্ঘ এসময়ে প্রতিষ্ঠানটির কোন মুলধন নেই। এক পর্যায়ে ২০১০ সালের ৩০ জুন পর্যš— সকল ব্যবসায়ীদের নামে মার্কেটের উপরের ঘর ৩০০ টাকা ও নীচের ঘর ৫০০ টাকা করে ভাড়া বাড়িয়ে নতুন চুক্তিপত্র করেন। একই সময়ে লাবনি সিনেমা হলের মালিকের কাছে ভাড়ার টাকা পাওনা হয় প্রায় ৫ লাখ টাকা। নতুন করে চুক্তিপত্র অনুযায়ী জুন ২০১০ এ ব্যবসায়ীদের চুক্তির সময়সীমা শেষ হওয়ায় জেলা সাংস্কৃতিক পরিষদ উক্ত মার্কেট নতুনভাবে নির্মানের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। সে মোতাবেক বিগত ১০ সালের মার্চ মাসে দোকান ছাড়তে ব্যবসায়ীদের নোটিশ দেন জেলা সাংস্কৃতিক পরিষদ। ওই বছরের জুন মাসে স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদার আহবান করা হয়। অনেকেই অংশ গ্রহণ করেন এই টেÊারে।
এরই মধ্যে বিগত ২০১১ সালের ১৫ জুলাই সাত¶ীরা গণপূর্ত বিভাগ-১ এর উপসহকারি প্রকৌশলী এ.কে.এম ইসমাইল ও শেখ ইকবাল হোসেন লাবনি হলসহ মার্কেটটি সরেজমিন তদš— করে ২৫ জুলাই তদš— প্রতিবেদন দাখিল করেন। প্রতিবেদনের সারসং¶েপে বলা হয়, “বর্ণিত ভবনটি ১৯১১ সালে নির্মিত এবং টিন সেড ভবনটিসহ দোকানগুলো সম্পূর্ণ ভাবে সংস্কার ও মেরামত অনুপযোগি এবং যেকোন সময় বড় ধরণের কোন দূর্ঘটনা ঘটতে পারে। জরাজীর্ণ ও ঝুকিপূর্ণ ভবনটি কোন ভাবে বর্তমানে ব্যবহার উপযোগি নয় বলে পরিদর্শন কারিরা প্রতিবেদন দাখিল করেন”। প্রতিবেদন অনুযায়ী গণপূর্ত বিভাগ সাতক্ষীরার নির্বাহী প্রকৌশলী নিশিত রঞ্জন পাল ঝুকিপূর্ণ ভবন ব্যবহার না করার জন্য পরামর্শ প্রদান করা হল” মর্মে গত ২৮ জুলাই ২০১১ এক প্রতিবেদনে মতামত প্রদান করেন।
জেলা সাংস্কৃতিক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হেনরি সরদার গনমাধ্যমকে জানান, সুলতানপুর গ্রামের ঠিকাদার মুসফিকুর রহমান জেলা সাংস্কৃতিক পরিষদকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে নিজ খরজে ভবন ভেঙ্গে নেয়ার চুক্তিপত্রে আবদ্ধ হন। ঠিক ওই বছরের একই সময়ে কথিত একটি মহল মার্কেটটি সংস্কারে বাধা হয়ে আহুত টেÊারের বির“দ্ধে মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনের একটি বেঞ্চে রিট পিটিশন দাখিল করেন ভূইফোঁড় সংগঠন দরবার হল নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সাধারণ সম্পাদক এড. আকবার হোসেন। বাদীর দায়েরকৃত রিট পিটিশনের শুনানি শেষে বিগত ২০১১ সালে প্রাচীনতম প্রতিষ্ঠান লাবনি সিনেমা হল ভাংতে আহুত টেÊারের বিষয়ে মহামন্য হাইকোর্টকে অবহিত করতে ৬ সপ্তাহের সময় দিয়ে টেÊারের কার্যক্রম বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন জেলা সংস্কৃতিক পরিষদকে। জবাব দাখিলের পর এক দফা শুনানি শেষে আরও ৪ সপ্তাহ সময়সীমা বৃদ্ধি করেন উচ্চ আদালত। আদালতের এনির্দেশ অনুযায়ী বিগত ২০১২ সালের ফেব্র“য়ারী মাসে উপরোক্ত আদেশের সময় সীমা শেষ হয়েছে। অন্যান্য মামলা গুলো ভাড়া প্রাপ্তি সংক্রাš—। ফলে সিনেমা হলসহ মার্কেট টি ভাংতে এখন আর কোন বাধা নেই।
এরই মধ্যে কথিত দোকান মালিকরা জেলা সাংস্কৃতিক পরিষদের বিপরিতে “দরবার হল” নামের এপ্রতিষ্ঠানের প¶ে এই সংগঠনটিও মার্কেট এবং হলের ভাড়া দাবী করায় কাকে ভাড়া দেয়া হবে মর্মে এড. আকবার হোসেন, দোকানদার এসোসিয়েশনের প¶ে জনৈক মিজানুর রহমান, লাবনি হলের মালিক ঠিকাদার র“হুল আমীনের নিকট থেকে দ্বিতীয় দফায় লিজ নেয়া জনৈক জাদরিদ সদর সহকারি জজ আদালতে পৃথক ৩টি মামলা দায়ের করেন। যার নং ০৩/২০১১ ও ২৪/২০১১ এছাড়াও ৬৩/১১। এসম¯— মামলা এখন শেষ পর্যায়ে এসে দাড়িয়েছে। এঅবস্থায় ঝুলে আছে ওই মার্কেটের ভাড়া কে পাবে! কিন্তু মার্কেট টি ভাংতে এখন আর কোন বাধা নেই এমনটি জানিয়েছেন জেলা সাংস্কৃতিক পরিষদের প¶ের আইনজীবি শফিকুল ইসলাম খোকন। তিনি বলেন, টেÊারের বির“দ্ধে দরবার হলের দায়েরকৃত রিটের পর মহামান্য হাইকোর্ট ডিভিশনের একটি বেঞ্চ ৬ সপ্তাহের মধ্যে আদালতে জবাব দাখিলের নির্দেশ দেন এবং এসময় পর্যš— টেÊারের কার্যক্রম স্থগীত করেন। জবাব দাখিলের পরে সেটির শুনানিঅšে— আরও ৪ সপ্তাহ বৃদ্ধি হয়। নির্ধারিত সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর বাদী প¶ের কোন উদ্যোগ না থাকায় লাবনি হল ও মার্কেট ভাংতে এখন কোন আইনি জটিলতা নেই বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন, মার্কেটটি নিয়ে এপর্যš— মোট ৪টি মামলার উদ্ভব হয়েছে।
এব্যাপারে জেলা সাংস্কৃতিক পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কামর“ল ইসলাম ফার“ক জানান, মার্কেটের নতুন ভবন নির্মানের ল¶ে আহুত টেÊারের বিপ¶ে রিট পিটিশন দায়ের করেন “দরবার হল” প¶ে কে এমন কোন মš—ব্য না করে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে দাবী করে তিনি বলেন মার্কেটটি ভাঙ্গার কোন সুযোগ নেই।
তবে খোড়া অজুহাত প্রত্যাখ্যান করে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক হেনরি সরদার জানান, আদালতের কোন বাধা না থাকলেও সভাপতির দায়িত্বে জেলা প্রশাসক থাকায় তিনি কোন ঝামেলায় যেতে চাননা। ফলে এখনও পড়ে আছে ভঙ্গুর এ মার্কেটটি। তিনি আরও বলেন, ২০০৭ সালে আমি সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে এসে প্রতিষ্ঠানের নামে ১২ লাখ টাকার এফডিআর করেছি। বর্তমানে সাড়ে ১৩ লাখ টাকার ফাÊ রয়েছে। এর আগে আমি তেমন কিছুই পাইনি। এখুনি ভবনটি ভেঙ্গে পড়লে দায়ভার কে নেবে এমন প্রশ্নের জবাবে হেনরি সরদার বলেন, প্রশাসনিক জটিলতা না থাকলেও ঝামেলার কারণে হচ্ছে না। তবে সভাপতি জেলা প্রশাসক ইচ্ছা করলে ১ ঘন্টার মধ্যে জায়গা খালি হয়ে যাওয়া কোন ব্যাপার নয়।
পৌর পিতা এম এ জলিল জানিয়েছে, লাবনি মার্কেট নিয়ে কি সমস্যা আছে আমার জানার বিষয় নয়। জীবনহানির ঘটনা যেখানে বিদ্যমান, সেখানে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে পৌরসভার প¶ থেকে এবং জেলা প্রশাসনের প¶ থেকে ঝুকিপূর্ণ ভবণ নির্ণয় করতে পৃথক পৃথক কমিটি গঠন হয়েছে, তারা সরেজমিনে তদš—কাজ অব্যহত রেখেছেন, প্রতিবেদন অচিরেই হাতে আসবে। এপ্রতিবেদন আসার পর জেলা প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এদিকে সাংস্কৃতিক পরিষদের সভাপতি ড. মুহা. আনোয়ার হোসেন হাওলাদারের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করে মিটিং এ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
কাজী নাসির উদ্দীন, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি/জি নিউজ