তোফায়েল আহমেদ পাপ্পু, শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধিঃ সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের সর্ব উওরের গ্রাম আগনুকালী । চার হাজার লোকের বসবাসকৃত ছোট এই গ্রামটিকে মাত্র সাড়ে ৩ মাসের প্রচেষ্টায় মামুন বিশ্বাস ও ইমন সরকার নামের দুই যুবক বন্য পাখির অভ্যয়াশ্রমে পরিণত করেছে।
দিনরাতের অক্লান্ত পরিশ্রমে তাদের এই সাফল্যে গ্রাম বাসীসহ আশপাশের লোকজন মুগ্ধ হয়ে পড়েছে । ফলে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে গ্রামবাসীরাও তাদেও এই কাজে সহয়োগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে । এ পর্যন্ত এ গ্রামের ২৩৭ টি বৃক্ষে বিশেষ ভাবে তৈরি পাখির বাসযোগ্য ২৩৭ টি মাটির কলস বেঁধে দিয়েছে । ফলে এ গ্রামটি এখন পাখিদের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে । শুধু তাইনয় আশপাশের লিছিমপুর,রায়পাড়া,সিকদার পাড়া,মধ্যপাড়া ,সাতবাড়ীয়া, ভেন্নাগাছি, লক্ষীপুর সহ ১০টি গ্রামকেও এর আওতায় এনে বৃক্ষে কলস সেট করার কাজ চলছে ।
আশা করা হচ্ছে, আগামী ৬ মাসের মধ্যে এই গ্রামগুলিও বন্য পাখির অভ্যয়াশ্রমে পরিণত হবে । বাসযোগ্য বৃক্ষ নিধন, উপযুক্ত খ্যাদ্য সংকট, ক্ষেতে খামারে মাত্রাতিরিক্ত রাসায়নিক স্যার ও কিটনাশক ব্যবহার , প্রাকৃতিক দূর্যোগ , অপরিকল্পিত পাকা দালান কোঠা নিমাণ ও শিকারীদের তান্ডবে এ অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির বন্য পাখির সংখ্যা দিন দিন আশংকাজনক হারে হ্রাস পাওয়ায় এ দু’যুবক বিষয়টি দৃষ্টিগোচরে এনে নিজ উদ্যোগে বন্য পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তোলার ব্যতিক্রমী এ কার্যক্রম শুরু করেছে । ইতো মধ্যেই এ কাজে তারা বেশ সফলতাও অর্জন করেছে । সরেজমিন আগনুকালী গ্রাম ঘুরে দেখা যায়,রাস্তার ধারে, পুকুরের পাড়ে, জমির পাশে, বিভিন্ন বাসা বাড়ীর গাছের ডালে ডালে মাটির কলস বাঁধা হয়েছে। এ গ্রামের শাহীন,সুজন,নবী,কামরুল জানান, প্রথম দিকে এদেরকে সবাই পাগল বললেও এখন এ কাজে তারা উৎসাহ দিয়ে নানা ভাবে সহযোগীতা করছে । এ ছাড়া গ্রামের ছোট বড় সবাই এখন পাখি শিকার বাদ দিয়ে পাখির বাসযোগ্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরিতে সহযোগিতা করছে । ফলে সকলের সহযোগীতায় গ্রামটি এখন পাখিদের অভ্যশ্রমে পরিণত হয়েছে ।
এ ব্যাপারে উদ্যোক্তা মামুন বিশ্বাসের সাথে কথা বলে জানাযায়, ইতোমধ্যেই তারা বন্য পাখি সংরক্ষণ,প্রজনন ও নিরাপদ বাসস্থান গড়ে তোলার লক্ষ্যে ’দি বার্ড সেফটি হাউজ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলেছে । এ সংগঠনের সদস্য ও কর্মী সুজন, কামরুল, নবী, শাহীন সহ অনেকই জানান , তারা এ কাজে এলাকাবাসীর ব্যাপক সাড়া পাচ্ছেন। ফলে তাদের এ কাজে আরো উৎসাহ উদ্দীপনা বেড়ে গেছে । তারা আরো বলেন, এখন থেকেই বন্যপাখিদের প্রতি যতœবান না হলে ভবিষ্যতে পরিবেশবান্ধব দেশীয় অনেক প্রজাতির পাখি বিলুপ্ত হয়ে যাবে । ইতি মধ্যেই আমাদের দেশ থেকে ৪১ প্রজাতির দেশীয় পাখি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি কর্তৃক প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী বিলুপ্ত পাখি গুলো হলো ,বাদা তিতির,মেটে তিতির,দেশি ময়ুর,সবুজ ময়ুর,বাদি হাঁস,গোলাপি হাঁস,ছোট নাটাবটের,দেশি মেটেধনেশ,মেটে মালকোআ,মেটেমাথা টিয়া, বাংলা ডাহর,পাতি ডাহর,দেশি সারস,পাতি সারস,ডেমোজিল সারস,খয়রা ঝিল্লি,ধলা শকুন,হিমালয়ী গৃধিনী,সর“ঠুঁটি শকুন, কালা শকুন,রাজ শকুন,ধলাপেট বক,কালা কা¯ে—চরা,বড়ধলা গগণবেড়,চিতিঠুঁটি গগণবেড়,রাঙা মানিকজোড়,ধলাগলা মানিকজোড়,কালাগলা মানিকজোড়,বড় মদনটাক,ল্যাঞ্জা মোটাঠুটি,দাগিলেজ গাছআঁচড়া,লালতলা প্রিনা,শতদাগি ঘাসপাখি, বাদা ছাতারে, লালমুখ দাগিডানা, কালাবুক টিয়াঠুঁটি, তিলাবুক টিয়াঠুঁটি, লাললেজ মৌটুসি, লম্বাঠোঁট তুলিকা, গেছো তুলিকা ।কালো তিতর, জলার তিতর, কাটময়ূও, বোচাহাঁস সহ ৪৭ প্রজাতির দেশীয় পাখি ইতিমধ্যেই হারিয়ে যেতে বসেছে । এখনই সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা না হলে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে তা হারিয়ে যাবে ।
’দি বার্ড সেফটি হাউজ’ এর উদ্যোক্তা মামুন বিশ্বাস বলেন, শুধুমাত্র আমরা পাখি শিকার থেকে অন্যকে বিরত থাকলে অসংখ্যা বন্যপাখি রক্ষা পাবে । এতে পরিবেশ ও প্রকৃতির ভারসম্য রক্ষা পাবে । যেমন বিভিন্ন ধরনের পাখি বিভিন্ন পোকা মাকড় খায়, কোন কোন পাখি সাপ ধরে খায়, কোন পাখি ইঁদুর ধরে খায়, কোন কোন পাখি উইপোকা ধরে খায়, কেউ মশা ধরে খায় । এতে পরিবেশ ও প্রকৃতির ভারসম্য রক্ষা পায় । তা না হলে একদিন আমরা অথবা আমাদের প্রজন্মরাই পাবে তার বিরূপ প্রতিদান। পাখিরাই হল আমাদের প্রকৃত বন্ধু। এরাই আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশকে বাঁচিয়ে রেখেছে। প্রাকৃতিক পরিবেশ বেঁচে থাকলে আমরাও বেঁচে থাকবো। পৃথিবীও বেচে থাকবে র্দীঘ যুগ পর্যন্ত । এ ভাবনা থেকেই বৃক্ষে কলসি স্থাপন প্রক্রিয়া শুরু হয় ।প্রথমে মামুন তার নিজ বাড়ির গাছে পাচটি কলস বাঁধেন। কিছু দিন যেতেই এসব কলসে আশ্রয় নেয় শালিক পাখি। মামুন আর ইমন অবাক হয়ে দেখতে থাকেন পাখিদের ঘর-সংসার, বংশবৃদ্ধি । নিজেদের সাফল্যে মুগ্ধ হন এ দুইজন। এর শুরু হয় গ্রামে কলস লাগানোর কাজ । এছাড়া গ্রামের বিভিন্ন স্থানে জনসচেতন মুলক পোষ্টার ও ব্যানার টানানো হয় । তারা আরো বলেন, সরকারী-বেসরকারী সংস্থার পৃষ্টপোষকা পেলে সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলাকে পাখির অভ্যয়াশ্রম গড়ে তুলতে সক্ষম হবেন ।#