ছবি-নিউ ইয়র্ক টাইমসের সৌজন্যে
অনলাইন ডেস্ক :- আমেরিকান ড্রিমস? সত্যিই কি মার্কিন দেশের ঝাঁ চকচকে কার্পেটের নীচটাও একই ভাবে স্বপ্ন বপন করে? না। করে না বোধহয়। তৃতীয় বিশ্বের আনাচ কানাচ থেকে স্বপ্ন অন্বেষণে আসা কত শত মেয়ে এই অন্ধকারের তলায় চাপা পড়ে যাচ্ছে তার হিসাব কী সত্যিই কেউ রাখে? ইন্দোনেশিয়ার বছর ২৫-এর শান্দ্রা ওয়োরুন্থ, শিক্ষিত এই সিংগল মাদার দেশে ব্যাঙ্কের চাকরি হারিয়ে ছিলেন হঠাৎ করেই। সংবাদপত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি কাজের বিজ্ঞাপন দেখে আবেদন পাঠান কাজের খোঁজে। মোটা মাইনের চাকরির উত্তরও পেয়ে যান চটজলদি। ইচ্ছাছিল স্বপ্নের দেশে ছ`মাস কাটিয়ে ফিরে আসবেন দেশে। উপার্জন করা অর্থে নিশ্চিত করবেন ছোট্ট মেয়ের ভবিষ্যত। সেই আশাতেই চড়ে বসেছিলেন আমেরিকার বিমানে। কিন্তু জন এফ কেনেডি বিমানবন্দরে নামার পড়েই বদলে গেল সবটুকু। তাঁর নিয়োগকর্তাদের যাঁরা শান্দ্রাকে বিমানবন্দরে নিতে এসেছিল গাড়িতে ওঠার পরেই বদলে গেল তাদের চেহারাটা। শান্দ্রার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হল নিউইয়র্কের পতিতাপল্লীর অন্ধকারে। আর তারপর? তারপরের কাহিনীটা শুধু রোজ রাতে হাত বদলানোর। ইচ্ছার বিরুদ্ধে একেরপর এক পুরুষের শয্যা সঙ্গিনী হতে বাধ্য হলেন শান্দ্রা। প্রাণের ভয়ে। নিরুপায় হয়ে।না। শান্দ্রা একা নন। তৃতীয় বিশ্বের মূলত এশিয়া আর আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে শত শত মেয়ে জমা হন মার্কিনি মিথ্যে স্বপ্নের অন্ধকূপে। যৌন ক্রীতদাসে পরিণত করা হয় তাঁদের। মাঝে মাঝে আমেরিকার বাইরেও বিভিন্ন দেশে পাচার করা হয় তাঁদের। অমানবিক যৌন হিংসার কবলে নিজেদের মানুষ বলে ভাবতেই ভুলে যায় অনেকে। পড়ে থাকে শুধু শরীর আর সেই শরীরের বিশেষ কিছু অংশ।২৫ বছরের শান্দ্রাই বয়সে এই মেয়েদের মধ্যে সব থেকে বড়। বেশির ভাগই সদ্য কিশোরী। এই কিশোরীদের মধ্যে অনেকে এতটাই ছোট যারা হয়ত ভাবতেই শেখেনি নারী হিসাবে তাদের ভিন্ন সত্ত্বা। বুঝতে শেখেনি স্তন, যোনির `অন্য` গুরুত্ব। শান্দ্রার বর্ণনায় নিউইয়র্কের বিভিন্ন ক্যাসিনোতে সারি বেঁধে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় এই মেয়েদের। ক্রেতারা এক রাতের জন্য বেছে নেয় তাদের পছন্দমত কিশোরীকে।তবে শুধু মেয়েরাই নয়। যৌন ক্রীতদাস হিসাবে `দুঃস্বপ্নের` মার্কিন মুলুকে পাচার হয় পুরুষরাও। ছাড়া পায় না শিশুরাও।ঘষা কাঁচের গাড়িতে এক ক্যাসিনো থেকে আর এক ক্যাসিনো, এক পতিতা পল্লী থেকে অপর পতিতা পল্লীতে ঠিকানা বদলায়।ইচ্ছাবিরুদ্ধ যৌন সঙ্গী বা সঙ্গিনী হওয়া ছাড়া বাইরের জগতের সঙ্গে সম্পর্ক থাকে না কারোরই। দিন-রাত, সব টুকুই ঢাকা শুধু নিকষ অন্ধকারে। সময়ের হিসাব টুকুই কষতে ভুলে যান বেশিরভাগ। দু`তলা এক হোটেলের শৈচালয়ের জানলা দিয়ে লাফ মেরেছিল শান্দ্রা। সঙ্গে পেয়েছিল আরও এক মেয়েকে। কী অদ্ভুতভাবে যেন বেঁচেও যায় তারা। তারপর বহু কষ্টে নিজেদের বাঁচিয়ে কোনও রকমে জন সমক্ষে তুলে ধরেছেন শান্দ্রা। গলা তুলেছেন সেই সব মেয়েদের জন্য যাদের আমেরিকান ড্রিম হারিয়ে গেছে পতিতাপল্লীর ঘুপচি গলির বাঁকে।শান্দ্রা পেরেছেন। পালিয়ে আসতে। কিন্তু যাঁরা পাড়লেন না। যাদের স্বত্ত্বাটুকু যৌনক্রীতদাসের আবরণে আচ্ছন্ন হয়ে আছে, যাঁরা প্রতিদিন একটু একটু করে নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছেন, তাঁদের খোঁজ কেউ রাখে না। তাঁদের স্বপ্নের কবরের উপর শুধু ধূসর মাটি জমা পড়ে। আর আমেরিকান ড্রিমস আরও গভীরে, আরও অতলে অবরুদ্ধ মৃত্যুর সঙ্গে সখ্যতা পাতায়। সূত্র-জি নিউজ. তাঃ-০৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪।