স্বাস্থ্যকর খাবার খান, সুস্থ থাকুন

স্বাস্থ্য ডেস্ক:- আপনি কি শুধু বেঁচে থাকার জন্য যা ইচ্ছে তাই খেয়ে থাকেন? নাকি সুস্থ এবং সুন্দরভাবে বেঁচে থেকে জীবনকে উপভোগ করতে চান? জেনে নিন স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিগুণ সম্পন্ন খাবারের একটি তালিকা।
শরীরের জন্য প্রয়োজন সবকিছুই
প্রতিদিন একই ধরনের খাবার কোনোভাবেই খাওয়া উচিত নয়৷ তাই প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় বিভিন্ন রকমের ভিটামিন, মিনারেল এবং প্রোটিনযুক্ত খাবার রাখুন৷ তাছাড়া খাবারের গুণগত মানটাই বড়, খাবারের
পরিমাণ নয়৷ এই যেমন- প্রোটিন শরীরের ওজন না বাড়িয়ে মানসম্পন্নভাবে শক্তি সরবরাহ করে, যা কোষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়৷
আঁশযুক্ত খাবার
খাবারের তালিকায় যথেষ্ট পরিমাণে আঁশযুক্ত শষ্যদানা রাখুন৷ বিশেষ করে সকালের নাস্তায় সিরিয়ালের সাথে বিভিন্ন শষ্যদানা, গম, ভুট্টা, ফল এবং দই থাকতে পারে৷ এতে ঝটপট পেট ভরে এবং পেট পরিষ্কারও থাকে
অর্থাৎ কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে৷ তবে ফল মানেই আপেল, আঙুর নয়৷ বরং যখন যে ফল পাওয়া যায়, মানে মৌসুমি ফল খান৷ এতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ে৷
তাজা ফল এবং শাক-সবজি
প্রতিদিন খাবারের তালিকায় শিম, মটরশুটি, বরবটির মতো আঁশযুক্ত সবজি ও যথেষ্ট ফল থাকা প্রয়োজন৷ এ সব শরীরে চিনি নিয়ন্ত্রণে যেমন সাহায্য করে, তেমনি হৃদরোগ প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে৷ বাঁধাকপি, ফুলকপি
ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক৷ বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার মতে, দিনে কয়েকবার শাক-সবজি ও ফলমূল খাওয়া উচিত৷ যারা ফলমূল এবং শাক-সবজি বেশি খান, তাঁদের হাঁপানি বা অ্যালার্জির ঝুঁকিও নাকি কম থাকে৷
ফাস্টফুডকে ‘না’ বলুন
দোকানে তৈরি ‘ফাস্টফুড’ বা ‘রেডিমেড’ খাবার একেবারেই খাওয়া উচিত নয়৷ এগুলোতে লুকিয়ে থাকে প্রচুর পরিমাণে চিনি এবং নানা রকম ক্ষতিকারক জিনিস৷ বিজ্ঞানীরা বলছেন, শিশুদের ক্ষেত্রে ফাস্টফুড হাঁপানি
হওয়ার শঙ্কা প্রায় ৪০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়৷ ৩১টি দেশের শিশুদের ওপর এক গবেষণা করে এ তথ্য জানা গেছে৷ তাই ছোটবেলা থেকেই স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করতে হবে৷
ব্রেনের জন্য খাবার
মানুষের মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য প্রয়োজন শর্করা এবং গ্লুকোজ৷ এটা থাকে বিভিন্ন ফল, রুটি, মিষ্টি আলু, নুডলস, মাছ-মাংস, কাঠবাদাম প্রভৃতিতে৷ তাই অল্প পরিমাণে বিভিন্ন ধরনের বাদাম নিয়মিত খাওয়া জরুরি৷ এতে শরীরের প্রয়োজনীয় মৌলিক উপাদানগুলো রয়েছে৷ দেখা গেছে, সপ্তাহে দুই বা তিনদিন বিভিন্ন রকমের বাদাম খেলে হৃদরোগ থেকে দূরে থাকা সম্ভব৷ ডিমের কুসুমও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী৷
দুধ বা দুধের তৈরি খাবার
প্রতিদিন খাবারের তালিকার দুধ রাখা উচিত৷ তবে আজকাল অ্যালার্জির কারণে অনেকেরই সরাসরি দুধ খেতে পারেন না৷ সেক্ষেত্রে দুধের তৈরি অন্যকিছু খাওয়া যেতে পারে৷ দুধে রয়েছে শরীরের জন্য উপকারী
ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থ৷ তাই একে সুসম খাদ্যও বলে৷ এছাড়া সপ্তাহে দু’দিন মাছ-মাংস বা ডিম খেলেই যথেষ্ট৷ সামুদ্রিক মাছে রয়েছে ওমেগা থ্রি চর্বি, যা বার্ধক্য রোধে সহায়তা করে৷
আদা, রসুন, পেঁয়াজের জুড়ি নেই
রান্নায় যতটা সম্ভব কম তেল ব্যবহার করুন৷ আর যদি সম্ভব হয় সরাসরি উদ্ভিজ্জ তেল ব্যবহার করাই ভালো৷ উদ্ভিজ্জ খাদ্যে যেমন অল্প পরিমাণে ক্যালোরি থাকে, তেমনি অন্যদিকে থাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ আর ফাইবার৷ এশীয় রান্নাঘরে আদা, রসুন, পেঁয়াজের ব্যবহার এমনিতেই রয়েছে৷ এই পেঁয়াজ, রসুন, ক্যানসার রোধে সহায়ক৷ আর আদা ব্যাকটেরিয়া মেরে ফেলে পেট পরিষ্কার রাখে৷
পানীয় বেশি, লবণ-চিনি কম
প্রতিদিন কমপক্ষে এক থেকে দুই লিটার পানি পান করা উচিত৷ তবে মিষ্টি মিশ্রিত পানীয় নয়, অর্থাৎ কোলা, ফান্টা বা এ জাতীয় কিছু নয়। উচ্চরক্তচাপ বা ডায়বেটিস এড়িয়ে নিজেকে সুস্থ ও সুন্দর রাখতে লবণ ও চিনি খাওয়ার ক্ষেত্রে পরিমিতিবোধ বজায় রাখুন৷ লক্ষ্য রাখবেন, চিনির ক্ষেত্রে তা যেন হয় প্রকৃতিক উপায়ে তৈরি, অর্থাৎ ব্রাউন চিনি আর লবণ যেন হয় আয়োডিন এবং ফ্লোরাইড যুক্ত৷
ধীরে-সুস্থে চিবিয়ে খান
খাবার তাড়াহুড়ো করে খেলে বেশি খাওয়ার ভয় থাকে৷ এতে ওজন বাড়ে এবং তা হজমেও ব্যাঘাত ঘটায়৷ তাই খাবার ধীরে ধীরে চিবিয়ে খান৷ এতে অর্ধেক হজম হয়ে যায়৷ তাছাড়া আপনি কী খাচ্ছেন, কেন খাচ্ছেন
– তা বুঝে শুনে খান, অর্থাৎ খাবার উপভোগ করুন৷ আপনি যা খাবেন, ঠিক সেরকমই ‘বোধ’ করবেন অর্থাৎ আপনার ‘পারফরমেন্স’ নির্ভর করবে আপনার খাওয়ার ওপর৷ আর চেহারাতেও তার প্রমাণ ফুটে উঠবে৷
হাঁটুন
প্রতিদিন ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা হাঁটুন৷ এতে হাত-পা চলাচলের পাশাপাশি মুক্ত বাতাসও সেবন হবে, যা ‘ফিট’ থাকতে বিশাল ভূমিকা পালন করে৷ হাঁটার সময় কেউ পাশে থাকলে ভালো, না হলে একাই কিছুক্ষণ হেঁটে আসুন৷ খবর : ডয়চে ভেল, ফিরে এসে দেখবেন শরীর এবং মন – দুটোই কেমন ফুরফুরে লাগছে! হাঁটাহাটি বা ব্যায়াম শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও বিশেষভাবে সাহায্য করে৷

Exit mobile version