মুহাম্মদ আবু হেলাল,ঝিনাইগাতী ঃএকবিংশ সভ্যতার চরম সম্মুন্নতির দিকে তাকিয়ে মাঝে মাঝে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই । সভ্যতার এ চরম বিকাশের মূলে রয়েছে যুগ-যুগান্তরে ল¶ কোটি মানুষের শ্রম । বহু মানুষ তাদের বহু দিনের শ্রম দিয়ে তীল তীল করে দান করে গড়ে তুলেছে প্রাসাদ- অট্টালিকা । তারা পাহাড় ভেঙ্গে পথ তৈরী করেছে , নদীর উভয় তটভূমিকে সেতুর বন্ধনে বেঁধেছে । কিন্তু তাদের নাম আজ ইতিহাসের পাতায় নেই । তারই সোনালী উদাহারণ- “যোতীন্দ্র মোহন বাগচী”র ডাক হরকরা কবিতা । শ্রম থেকে শ্রান্তি, শ্রান্তি থেকে মুক্তির আকুলতাই ছিল যেমন কবিতাটির মূল সূর । তেমনী জীবন যুদ্ধে শত ঘাত -প্রতিঘাত তবুও থেমে নেই , শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার ধানশাইল ইউনিয়নের চকপাড়া গ্রামের মৃত মিনুমীরের পুত্র ডাক পিয়ন মহিউদ্দিনের বেচে থাকার যুদ্ধ্। হতাশা , দুঃখ, দূর্দশা ,অভাব, অনটন ,যেন মহিউদ্দিনের পরিবারের নিত্যদিনের সাথী। মহিউদ্দিন(৭৫) ধানশাইল ইউনিয়নের ধানশাইল বাজার শাখা পোষ্ট অফিসের একজন ডাক পিয়ন ছিল। মহিউদ্দিন জানান,১৯৭৬ সনের জুন মাসে মাষ্টার রোলে ডাক পিয়নের কাজে যোগদান করেন এবং সততা ও নিষ্টার সাথে কাজ করে ২০১০ সালের সেপ্টে¤^র মাসে অবসরে আসেন শূন্য হাতে। মহিউদ্দিনের দুই ছেলে, দুই মেয়ে সহ ৬ সদস্যের পরিবার হলেও বড় ছেলে ২ ছেলে বিয়ে করে আলাদা ঘর সংসার করছে। ১ মেয়েকে বিবাহ দেওয়া হয়েছে আরেক মেয়ে বিয়ের যোগ্য। মহিউদ্দিন ছেলে মেয়েদের নিয়ে তার ছিল বুক ভরা আশা ,গভীর ¯^প্ন। ছেলে মেয়েরা পড়ালেখা শেষ করে একদিন চাকুরী করবে। আর তখনি মহিউদ্দিন বেচে থাকার ¯^প্ন সার্থক হবে। কিন্তু মহিউদ্দিন সে আশায় গুড়েবালি। দুই ছেলেকে হাড়ভাঙ্গা খাটুনী খেটে বড় করার পর তাদের ইচেছমত বিয়ে করে আলাদা ঘর সংসার করে আসলেও বাবা মার কোন খোঁজ খবর নেয় না তারা। এর পরেও আশা ছাড়েনি মহিউদ্দিন । তার আশা ও ¯^প্ন দুই মেয়ে বড় হলে তথন হয়তোবা তারা কোথাও কোন চাকুরী করে দুঃখের দিন শেষ করবে। ডাক পিয়নের চাকুরি ছাড়ার পর তার সহায় স¤^ল বলতে তার আর কিছুই ছিলনা। অন্যের বাড়ী- বাড়ী ও বিভিন্ন বাজারে গিয়ে ভিক্ষা করে অতি কষ্টে অনাহারে,অর্ধাহারে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছে। ৬ আগষ্ট মহিউদ্দিন সংসারের খরচ যোগাতে ভিক্ষা করছিল ধানশাইল বাজারের বিভিন্ন দোকানে। এ দৃশ্যটি ছিল বড় করুণ। সে এ প্রতিধির কাছে তার জীবনের অবর্ণনীয় দুঃখ দূর্দশার কথা তুলে ধরেন। এ সময় তার দু’চোখ বেয়ে ছল ছল করে পানি ঝরতে থাকে। তিনি বলেন গত ৬ মাস যাবত বেশির ভাগ সময় সিদ্ধ কচুর পাতা ছাড়া তার ভাগ্যে অন্য কিছু জোটেনি। স্থানীয় জন প্রতিনিধিদের কাছে একটি ভিজিডিও বয়স্ক ভাতার কার্ডসহ সাহায্য সহযোগিতা চেয়ে বহুবার আবেদন নিবেদন করেও কোন ফল হয়নি। বর্তমানে তার পরিবারের সদস্যদের জীবিকা নির্বাহ করা এবং বিবাহ যোগ্য মেয়ের বিয়ের খরচ যোগাতে সমাজের বিত্তবানদের কাছে সাহায্যের হাত বাড়াতে হচেছ। মহিউদ্দিন অন্ধকারের অমানিশায় ঘুরপাক খায় আর ভাবে আমার এ কষ্টের শেষ কোথায়!