অনলাইন ডেস্ক:- ৫ই জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের বছরপূর্তিতে আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি৷ গত এক বছরে নির্বাচন বয়কটকারী বিএনপি কার্যকর কোনো আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারলেও, বছরপূর্তিতে সরকারকে বড় ধরণের ধাক্কা দিতে চায়৷ আগামী ১৮ই ডিসেম্বর ঢাকায় সর্বদলী ছাত্র কনভেনশনের কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি৷ এই কনভেনশনের মূল সংগঠক হিসেবে কাজ করছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি এবং ১৯৯০-এ এরশাদ বিরোধী ছাত্র-গণআন্দোলনের সর্বদলী ছাত্র ঐক্যের অন্যতম নেতা আমান উল্লাহ আমান৷ তিনি এখন বিএনপি-র যুগ্ম মহাসচিব৷ তিনি সোমবার জানান, ‘‘ঢাকার এই কনভেনশনে বর্তমান এবং ‘৯০-এর ছাত্র নেতারা উপস্থিত থাকবেন৷ সেই কনভেনশনে প্রধান অতিথি হিসেবে সরকার পতনের রূপরেখা ঘোষণা করবেন খালেদা জিয়া৷ এছাড়া পরবর্তী আন্দোলনের দিক নির্দেশনাও দেবেন তিনি৷”জানা গেছে, ৫ই জানুয়ারিকে সামনে রেখে আরো কিছু কর্মসূচি হাতে নিতে যাচ্ছে বিএনপি৷ তারা এর জন্য ইস্যু খুঁজছে৷ বিএনপি-র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এরই মধ্যে বলেছেন সরকার যদি তেল, গ্যাস বা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর চেষ্টা করে, তাহলে লাগাতার কর্মসূচি দেবে বিএনপি৷ আর তার মধ্যে হরতাল অবরোধও থাকতে পারে৷
৫ই জানুয়ারি দেশকে অচল করে দিতে চায় বিএনপি৷ তার আগে এই ডিসেম্বরেই ঢাকা থেকে খুলনা, সিলেট ও চট্টগ্রাম অভিমুখে তিনটি রোডমার্চ কর্মসূচি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷ তবে তার দিন-তারিখ এখনো চূড়ান্ত হয়নি৷ ৫ই জানুয়ারি রাজধানী ঢাকাকে সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে চায় বিএনপি৷ এ জন্য ২০ দলীয় জোটের শরিকদের সঙ্গেও আলাপ-আলোচনা চলছে৷
বিএনপি মনে করছে, ৫ই জানয়ারি যদি কর্মসূচি সফল করা যায়, তাহলে এরপর থেকে নেতা-কর্মীরাই মাঠে নেমে যাবেন৷ সে’জন্য ধারাবাহিক সরকারবিরোধী আন্দোলন কর্মসূচিও তৈরি করা হচ্ছে৷
বিএনপি-র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘বিএনপি এই ডিসেম্বরেই নানা কর্মসূচি দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে৷ ১৮ই ডিসেম্বর ঢাকায় ছাত্র কনভেনশনের আগে, ১৩ই ডিসেম্বর, নারায়ণগঞ্জে মহাসমাবেশের কর্মসূচি দেয়া হয়েছে৷ সেখানে খালেদা জিয়া প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন৷ এর আগে তিনি জেলায় জেলায় সফর করেছেন৷ ৫ই জানুয়ারি আগেই যে কোনো সময় বড় ধরণের কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন খালেদা জিয়া৷”
তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত নেতা-কর্মীদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে৷ সময় এলেই তাঁরা মাঠে নামবনে৷”
শামসুজ্জামান দুদু-র আশঙ্কা, ‘‘পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার খালেদা জিয়াসহ বিএনপি-র শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারে ঝুঁকি নিতে পারে৷ তার আলামতও দেখা যাচ্ছে৷ বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে খালেদা জিয়ার কথিত বৈঠক নিয়ে জল ঘোলা করার চেষ্টা করছে সরকার৷” তাই তিনি দাবি করেন, ‘‘খালেদা জিয়া কোনো সরকারি কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেননি৷ তিনি সাবেক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন৷”
তিনি বলেন, ‘‘কোন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে – তা এবার পরিষ্কার করে বলা আছে৷”
এদিকে সাবেক মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘‘বিএনপি-কে কোনো লাগাতার আন্দোলনের সুযোগ দেয়া হবে না৷ তারা সে সুযোগ পাবে না৷”
তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ সরকারের সঙ্গে দেশের মানুষ আছে৷ আর নেতা-কর্মীরাও ঘরে বসে নেই৷ সময় এলে বোঝা যাবে বিএনপি-র আন্দোলন কোথায় যায়৷”
তাঁর কথায়, ‘‘শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এই সরকারের অবস্থান শক্ত৷ সারা বিশ্বের সঙ্গে আমাদের সরকারের সু-সম্পর্ক রয়েছে৷ তার প্রমাণ – কমনওয়েলথ পার্লমেন্টরি অ্যাসোসিয়েশনে (সিপিএ) এবং ইন্টারন্যাশনাল পার্লমেন্টরি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সভাপতি পদে বাংলাদেশের বর্তমান সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী ও সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়েছেন৷”
তবে বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলার হাতিয়ার বরাবরের মতোই ব্যবহার করা হবে বলে সরকারের দিক থেকে জানা গেছে৷ সোমবার বিএনপি নেতা সাদেক হোসেন খোকার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে৷ খালেদা জিয়া এবং মির্জা ফখরুল সহ অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে মামলাগুলোও গতি পেয়েছে৷ আর ৫ই জানুয়ারির আগেই গত সপ্তাহে ‘সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে খালেদার বৈঠকের’ তদন্ত একটি পর্যায়ে উপনীত হবে৷ পুলিশ এরই মধ্যে অনানুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করেছে৷ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ‘‘সব তথ্য-প্রমাণ আমাদের হাতে আছে৷খবর: ডিডাব্লিউ, এদিকে আওয়ামী লীগও ৫ই জানুয়ারি ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাপক ‘শোডাউন’-এর প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে৷