মস্তিষ্কের চাপ কমাতে কৃত্রিম কোমা

dw s7স্বাস্থ্য ডেস্ক:-  ফর্মুলা ওয়ানের জীবন্ত কিংবদন্তি মিশায়েল শুমাখার মস্তিষ্কে আঘাত পেয়ে কোমায় আছেন গত এক মাস যাবত৷ ফ্রেঞ্চ আল্পসে স্কি করতে গিয়ে মাথায় ভয়ংকর আঘাত পান তিনি৷ তবে এখন তাঁকে সেই ‘গভীর ঘুম’ থেকে জাগিয়ে তোলার প্রক্রিয়ায় চলছে৷ ফ্রান্সের গ্রেনবেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন শুমাখারকে যে ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছিল, সেটা বন্ধ করা হয়েছে যাতে ধীরে ধীরে তিনি জেগে ওঠেন৷ সংবাদমাধ্যমে এ কথা প্রকাশ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন শুমির হাজারো ভক্ত৷ তবে এতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন শুমাখারের ম্যানেজার সাবিনে কেম৷ তাই প্রশ্ন উঠেছে কৃত্রিম কোমার প্রক্রিয়াটিকে নিয়ে৷প্রশ্ন হলো: কী এই কৃত্রিম কোমা?- কৃত্রিম কোমায় আছেন শুমাখার-=অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে দীর্ঘ সময়ের জন্য ঘুম পাড়িয়ে রাখাকে কৃত্রিম কোমা বলা হয়৷ মারাত্মক দুর্ঘটনা বা কঠিন কোনো অপারেশনের পর, ডাক্তাররা নিরাময় প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করার জন্য দীর্ঘস্থায়ী ঘুমে পাঠিয়ে দেন রোগীকে৷মস্তিষ্কে আঘাত লাগা মারাত্মক হতে পারে- অনেক সময় ভীষণভাবে হোঁচট খেলে বা পড়ে গেলে মস্তিষ্কে প্রচণ্ড লাগতে পারে, ফুলেও যেতে পারে৷ হাঁটু কিংবা হাতে চোট লাগলে  ফোলাটা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে৷ কিন্তু মস্তিষ্ক হাড় দিয়ে ঘেরা৷ তাই এর ভেতরে চাপটাও বেশি হয়৷ এই অবস্থা জীবন বিপন্নকারী৷ এমনটা হলে চাপ কমানোটা অত্যন্ত জরুরি৷ এ জন্য রোগীর দেহের তাপ ৩২ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস নামানো হয়৷ এতে শরীরের মেটাবলিজম প্রক্রিয়ায় চাপ কমে৷ অক্সিজেনের ব্যবহার কম হয়৷ এই সব করা না হলে স্নায়ুকোষ মরে যেতে পারে এবং স্থায়ী ক্ষতিও হতে পারে৷বিশ্রাম নিতে দেওয়া হয়-এই সময় শরীরকে যতদূর সম্ভব বিশ্রাম নিতে দেওয়া হয়৷ নিবিড় পর্যবেক্ষণে থাকলে শরীর অনেক কাজ করা থেকে অব্যাহতি পায়৷ নিশ্বাস-প্রশ্বাসের দায়িত্ব নেয় একটি যন্ত্র৷ হার্টবিট ও উচ্চরক্তচাপের দিকে সর্বদা লক্ষ্য রাখা হয়৷ রোগীকে স্টমাক টিউব কিংবা সেলাইন দিয়ে খাওয়ানো হয়৷স্ট্রোকের কবলে পড়তে পারে যে কেউস্ট্রোক বিপজ্জনক-মস্তিষ্কের রক্ত চলাচলে ব্যাঘাতের কারণে এই রোগ যে কোনো সময় যে কারও হতে পারে একেবারে হঠাৎ করেই৷ স্ট্রোক হলে বাকশক্তি, দৃষ্টিশক্তিও হারিয়ে যেতে পারে৷ শরীরের যে-কোনো অংশ অসাড়ও হতে পারে৷ সারাজীবন হয়তো বা হুইলচেয়ারে চলতে হতে পারে৷ তবে এটা নির্ভর করে মস্তিষ্কের কোন অংশে স্ট্রোক হয়েছে বা আঘাতটা কত বেশি তার ওপর৷

স্ট্রোকের কবলে পড়তে পারে যে কেউ

স্ট্রোকের লক্ষণ ঝুঁকি

মাথা ঘুরানো, হাটতে অসুবিধা হওয়া, চোখে ঘোলাটে দেখা এসব অসুবিধা দেখা দেয় স্ট্রোক হওয়ার আগে৷ ডায়াবেটিস, অতিরিক্ত মোটা, উচ্চরক্তচাপ, ধূমপান, মদ্যপান, স্ট্রেস ইত্যাদি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়৷

স্ট্রোকের কবলে পড়তে পারে যে কেউ

একেবারেই দেরি নয়

যে-কোনো জায়গায় যে-কোনো সময় মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে৷ তখন দেরি না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে তা না হলে হয়তো দেরি হয়ে যেতে পারে৷

স্ট্রোকের কবলে পড়তে পারে যে কেউ

জার্মানিতে স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা

প্রতি বছর জার্মানিতে ২৬০,০০০ মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে৷ মৃত্যুর কারণ হিসাবে স্ট্রোক রয়েছে তৃতীয় স্থানে৷ সারা বিশ্বেই স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলছে৷

স্ট্রোকের কবলে পড়তে পারে যে কেউ

গবেষণা

আর সে কারণেই স্ট্রোক নিয়ে গবেষণা জরুরি হয়ে পড়েছে৷ জার্মানিতে গত ২০ বছরে স্ট্রোক থেরাপি বেশ শক্তিশালী হয়েছে, বলেন হামবুর্গের আসক্লেপিয়োস ক্লিনিকের প্রফেসর ইওয়াখিম রোটার৷ স্ট্রোকে আক্রান্ত পুরুষদের গড় বয়স ৭০৷ মেয়েদের ৭৫৷ শিশু কিশোররাও স্ট্রোকের কবলে পড়তে পারে৷

স্ট্রোকের কবলে পড়তে পারে যে কেউ

শিশুরাও এর বাইরে নয়

জার্মানিতে প্রতিবছর ৩০০ শিশু আক্রান্ত হয় স্ট্রোকে৷ এর মধ্যে এক তৃতীয়াংশ আবার নবজাতক শিশু৷ এমনকি মাতৃগর্ভেও আক্রান্ত হতে পারে বাচ্চা৷ ‘অটোইমিউন’ বা বংশগত কারণে এমনটি হতে পারে৷ বাচ্চাদের বেলায় অনেক সময় কয়েক মাস বা কয়েক বছর পর মস্তিষ্কের ক্ষতিটা বোঝা যায়৷

স্ট্রোকের কবলে পড়তে পারে যে কেউ

নিয়মমতো চলতে হবে

স্ট্রোক হলে মানুষ এক নিমিষে অথর্ব হয়ে যেতে পারে৷ তাদের হতে হয় পরের উপর নির্ভরশীল৷ খাওয়া দাওয়া বুঝে শুনে করতে হয়৷ করতে হয় নিয়মিত ব্যায়াম৷ এড়িয়ে চলতে হয় বাড়তি স্ট্রেস৷ কারণ যদি কারও দ্বিতীয়বার স্ট্রোক হয় তাহলে পরিণতি মারাত্মক হতে পারে৷ কাজেই প্রথমবার স্ট্রোক হওয়ার পর থেকে সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়৷ নিয়মিত ব্লাডপ্রেশার মাপা প্রয়োজন এবং হাসিখুশি থাকাটাও জরুরি৷

কৃত্রিম কোমার মাধ্যমে কঠিন আঘাতের ফলে হওয়া ‘স্ট্রেস’ থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকে রোগী৷ দীর্ঘস্থায়ী অ্যানেস্থিয়ার ফলে ভুক্তভোগীদের ব্যথার অনুভূতি হয় না৷ কারণ ওষুধ দিয়ে ব্যথা-বেদনার অনুভূতি অপসারিত করা হয়৷রোগীকে কতদিন কৃত্রিম কোমায় রাখা দরকার, তা নির্ভর করে আঘাত কতটা গুরুতর তার ওপর৷ কারো কারো ক্ষেত্রে কয়েকদিনেই সঙিন অবস্থাটা পার করা যায়৷ আবার কোনো কোনো রোগীকে কয়েক সপ্তাহ অচেতন অবস্থায় নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে দিতে হয়৷পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও থাকে অন্যদিকে অচেতন অবস্থা দীর্ঘায়িত হতে থাকলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়৷ থ্রম্বোসিস বা রক্তনালীতে রক্ত জমাট বেঁধে যেতে পারে৷ ফুসফুসের সংক্রমণ, কার্ডিওভাসকুলারের সমস্যা, পেশি ও ইমিউন সিস্টেমে দুর্বলতা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে৷ এজন্য রোগীকে প্রয়োজনের বেশি অচেতন অবস্থায় রাখতে চান না চিকিৎসকরা৷ মস্তিষ্কের চাপ তেমন সংকটপূর্ণ না হলে রোগীকে কৃত্রিম কোমা থেকে জাগিয়ে তোলা হয়৷ অ্যানেস্থেসিয়া ও ব্যথার ওষুধ ধীরে ধীরে কমিয়ে দেওয়া হয়৷ আর শরীরও ধীরে ধীরে নিশ্বাস-প্রশ্বাসের মতো কার্যক্রম নিজের হাতে তুলে নেয়৷রোগীরা অবশ্য এতদিন পর জেগে উঠে অনেক কিছুই স্মরণ করতে পারেন না৷ অনেক সময় বিভ্রান্ত ও আক্রমণাত্মকও হয়ে ওঠেন তাঁরা৷ স্থায়ীভাবে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়েছে কিনা, সেটা নির্ধারণ করা যায় রোগী কৃত্রিম কোমা থেকে জেগে উঠলে৷ সূত্র- DW.DE

 

Exit mobile version