ক্ষমতায় থাকতে বা আসতে হলে ১৩ দফা মানতে হবে

ঢাকা প্রতিনিধি, জি নিউজ ঃ হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেছেন, ১৩ দফা দাবিতে তাঁদের আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক আন্দোলন নয়। কিন্তু ক্ষমতায় থাকতে হলে এসব দাবি মেনেই থাকতে হবে, ক্ষমতায় যেতে হলে এসব দাবি মেনেই যেতে হবে।
আজ শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে হেফাজতের মহাসমাবেশে শাহ আহমদ শফী লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন। আহমদ শফীর পক্ষে তাঁর ছেলে ও হেফাজতে ইসলামের প্রচার সম্পাদক আনাছ মাদানী বক্তব্য পড়ে শুনান।
আহমদ শফীর বক্তব্যে সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলা হয়, আন্দোলন দমানোর চেষ্টা করা হলে পরিণতি হবে ভয়াবহ। সরকারকে ইসলামবিরোধী আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, সারা দেশে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দাবি মানা না হলে আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হবে। ইসলামবিরোধী সরকারের পরিণতি হবে নমরুদ, আবু লাহাবদের চেয়েও ভয়াবহ। হেফাজতের আমিরের বক্তব্যে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘বাতিল জাগরণ’ স্তিমিত করার জন্য জীবন বাজি রেখে ‘শহীদ’ হওয়ার প্রস্তুত থাকতে হবে।
আহমদ শফীর বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, জঙ্গিবাদ দমনের নামে ইসলাম নির্মূলের জন্য বিদেশিদের এই দেশে আনার পাঁয়তারা চলছে। ‘নাস্তিক’দের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তি করলে ত্বরিত ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু যারা আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করছে, তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
শাহ আহমদ শফীর বক্তব্যে আরও অভিযোগ করা হয়, মুসলমানদের সভ্যতা ধ্বংস করে দেশে ‘বেলেল্লাপনা’ আমদানি করা হচ্ছে। মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালন ও মূর্তি স্থাপনের মাধ্যমে দেশকে ‘অগ্নিপূজারি’ ‘মূর্তিপূজারিদের’ দেশে পরিণত করা হচ্ছে।
হেফাজতে ইসলামের ডাকা মহাসমাবেশ আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে শুরু হয়। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে মহাসমাবেশের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
মহাসমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলামের ঢাকা মহানগর আমির ও কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির আল্লামা নূর হোসাইন কাশেমী। হেফাজতে ইসলামের আমির হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক শাহ আহমদ শফী বেলা পৌনে তিনটার দিকে সমাবেশস্থলে পৌঁছান। এ সময় সেখানে উপস্থিত হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা তাঁকে স্বাগত জানান। মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে বানানো মঞ্চে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন।
সমাবেশের ঘোষণাপত্রে হেফাজতের ১৩ দফা তুলে ধরা হয়। মুফতি ফয়জুল্লাহ ঘোষণাপত্র পড়েন।
সংগঠনের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী বলেন, ‘হেফাজতে ইসলামের এই আন্দোলন সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক আন্দোলন। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আবার সংঘর্ষও নেই।’
এর আগে হেফাজতে ইসলামের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য দেন। তাঁরা কথিত ‘নাস্তিকদের’ শাস্তি দাবি করেন। বক্তারা অভিযোগ করেন, বর্তমান সরকার ‘নাস্তিকদের’ পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রমাণ করেছে তারা মুসলমানদের সরকার নয়। তারা ‘নাস্তিকদের’ সরকার।
ভোর থেকেই রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে জড়ো হতে থাকেন হেফাজতে ইসলামের নেতা-কর্মীরা।
মহাসমাবেশে আসা লোকদের অবস্থান শাপলা চত্বর থেকে দক্ষিণ দিকে আর কে মিশন সড়ক (ইত্তেফাক মোড়), পশ্চিম দিকে দৈনিক বাংলা মোড় ও অন্যদিকে আরামবাগ মোড় ছাড়িয়ে যায়।
পুলিশের মতিঝিল অঞ্চলের জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার তারেক আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, লংমার্চ ও মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে মতিঝিল এলাকায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আশপাশের এলাকায়ও পুলিশ মোতায়েন ছাড়াও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দায়িত্ব পালন করে।

Exit mobile version