শিশুদের কীভাবে শাকসবজি খেতে উৎসাহিত করা যায়

জি নিউজ ডেস্কঃ- বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার মতে দিনে অন্তত পাঁচবার শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া উচিত৷ উদ্ভিজ্জ খাদ্যে অল্প পরিমাণে ক্যালোরি থাকে৷ অন্য দিকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, ফাইবার ইত্যাদি থাকে৷ এসব আমাদের শরীরের জন্য জরুরি৷ শিশুকে শাকসবজি খাওয়াতে মা-বাবাকে অনবরত চেষ্টা করে যেতে হবে৷ তবে জোরাজুরি করা কখনই ঠিক হবে না৷লন্ডন ইউনিভার্সিটি কলেজের একটি সমীক্ষার ফলাফলে জানা গিয়েছে, পাঁচবারই যথেষ্ট নয়, দিনে অন্তত সাতবার শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়া প্রয়োজন৷ গবেষকরা জানিয়েছেন উদ্ভিদজাত উপাদান উচ্চরক্তচাপ, হার্টের অসুখ, স্ট্রোক ইত্যাদির ঝুঁকি কমায়৷ এর ফলে মৃত্যুর ঝুঁকিও অনেক কমে যায়৷তবে প্রশ্ন জাগে সাতবার ফল ও সবজি খাওয়া বাস্তবসম্মত? অনেকে তো কাজের চাপে দুপুরের খাওয়ার সময়ই পায় না৷ জার্মান পুষ্টি সোসাইটির আনচে ডাল বলেন, এখানে কতবার এ সব খাওয়া উচিত সেটা বিবেচ্য বিষয় নয়, আসল কথা হলো এর পরিমাণ৷যত বেশি ততই ভালো-বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, দৈনিক ৪০০ গ্রাম তরিতরকারি ও ২৫০ গ্রাম ফলমূল খাওয়া উচিত৷ শাকসবজি ফলের চেয়েও স্বাস্থ্যকর, কেননা এতে চিনির পরিমাণ কম থাকে৷এক্ষেত্রে বৈচিত্র্যেরও প্রয়োজন রয়েছে৷ অর্থাৎ খাদ্যতালিকায় নানারকমের সবজি ও ফল থাকা উচিত৷ এজন্য সারা দিনব্যাপী ৪০০ গ্রাম তরিতরকারি ছোট ছোট পরিমাণে ভাগ করে খাওয়া প্রয়োজন৷ কেউ দুপুরে শাকসবজির সাথে সালাদ খেলে দুই ভাগ খাওয়া হয়ে যায়৷ যত বেশি ততই ভালো৷ যে কোনো সময়ে৷বাচ্চারা তরিতরকারি ও ফলমূল খেতে চায় না৷ ‘‘চার থেকে ছয় বছর বয়সি বাচ্চাদের ২০০ গ্রাম সবজি ও ২০০ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন”, বলেন ডাল৷ কিন্তু মা-বাবার পক্ষে বাচ্চাদের এইসব ভিটামিনসমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়ানো সহজ নয়৷ শাকসবজি স্বাস্থ্যকর ও মৃত্যুর ঝুঁকি কমায়, এ সব তথ্য চার বছর বয়সিকে বোঝানো সহজ নয়৷ সে তো ফ্রেঞ্চ ফ্রাই ও চকলেটই খেতে চাইবে৷ ‘‘শাকসবজিতে ততটা শক্তি নেই৷ বাচ্চারা শক্তিসমৃদ্ধ খাবার পছন্দ করতে শেখে, যা তাদের বেড়ে ওঠার জন্য জরুরি৷ এছাড়া কিছু তরিতরকারিতে এক ধরনের তিতা স্বাদ থাকে৷ আমাদের প্রথমে এই স্বাদ পছন্দ করতে শিখতে হবে”, বলেন সিলভি ইসানশো৷ ছয়টি ইউরোপীয় দেশের উদ্যোগে গঠিত ১১টি গবেষণা ইন্সটিটিউটের একটি প্রজেক্ট হাবেঈট-এর সমন্বায়ক তিনি৷ এই প্রকল্পের গবেষকরা পরীক্ষা করে জানতে চেয়েছেন কীভাবে ছয় মাস থেকে ছয় বছর বয়সি বাচ্চাদের শাকসবজি খাওয়ানো শেখানো যায়৷ তাঁদের ফলাফলে জানা গেছে, এটা অক্লান্ত চেষ্টা-সম্ভব৷মা-বাবার অনবরত চেষ্টা করে যেতে হবে৷ বলা যায় নাছোরবান্দার মতো৷ শিশুকে বার বার তরকারি খেতে দিতে হবে৷ কাজটা করতে হবে অটল ধৈর্য নিয়ে৷ বাচ্চা হয়ত প্রথম দিকে তা খেতে চাইবে না৷ এমনকি আগে যা খেতে পছন্দ করতো, তাও প্রত্যাখ্যান করতে পারে৷ ‘‘মা-বাবাকে অপেক্ষা করতে হবে এবং চেষ্টা করে যেতে হবে৷ তবে জোরাজুরি করা কখনই ঠিক হবে না৷” এমনটাই মনে করেন সিলভি ইসানশো৷সব রকমের তরিকারি যে খেতে হবে এমন কোনো কথা নেই৷ মানুষের রুচি ও গন্ধের অনুভূতিতে পার্থক্য থাকতেই পারে৷ ‘‘কোনো বাচ্চা নির্দিষ্ট কোনো সবজি পছন্দ না করলে তাকে অন্য কোনো তরকারি দেওয়া যেতে পারে৷” মনে করেন হাবেঈট-এর গবেষকরা৷ চেষ্টা করতে হবে শিশুকে নতুন নতুন আচেনা শাকসবজি খাওয়াতে৷ একই খাবার খেতে খেতে একঘেয়েও লাগতে পারে৷ স্থানীয় সুপার মার্কেটে নতুন ধরনের শাকসবজি না পাওয়া গেলে রান্নাবান্নায় বৈচিত্র্য আনা যেতে পারে৷ পরিবেশন করা যেতে পারে ভর্তা বা বেক করে৷ সস, পনির বা অন্য কিছুর সাথে মিলিয়েও বাচ্চাকে খেতে দেওয়া যায়৷অনেক সময় প্রয়োজন-তবে এ জন্য অনেক সময় প্রয়োজন৷ মা-বাবা দু’জনেই পেশাজীবী হলে রান্নাবান্নায় মন দেওয়ার মতো সময় পাওয়া যায় না৷ তার ওপর আর্থিক দিকটাও বিবেচ্য বিষয়৷ আর্থিক অনটন থাকলে স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপন করা সহজ নয়৷ফরাসি ও মার্কিন গবেষকরা ২০০৪ সালে এক গবেষণায় জানতে পেরেছেন।এ প্রতিবেদনটি ডিডাব্লিউ এর, তৈলাক্ত ও শর্করাযুক্ত অস্বাস্থ্যকর খাবার স্বাস্থ্যকর খাবারের চেয়ে সস্তা৷ অতিরিক্ত ১০০ গ্রাম ফল ও সবজি কিনতে হলে প্রতিদিন ১৮ থেকে ২৯ ইউরো-সেন্ট খরচ বেশি পড়বে৷

Exit mobile version