আর্ন্তজাতিক ডেস্ক:- ভারতের ছত্তিসগড়ে জন্মনিয়ন্ত্রণ শিবিরে বন্ধ্যাকরণের অস্ত্রোপচারের পর ১১ নারীর মৃত্যুর ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী রমন সিং ও স্বাস্থ্যমন্ত্রী অমর আগারওয়ালের পদত্যাগের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাজ্যজুড়ে বনধ ডেকেছে কংগ্রেস।ছত্তিশগড়ের বিলাসপুরে সরকারি জন্মনিয়ন্ত্রণ শিবিরে অস্ত্রোপচারের পর মঙ্গলবার পর্যন্ত ১১ নারীর মৃত্যু হয়। গুরুতর অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরো অর্ধশতাধিক নারী। ঘটনার জের ধরে এরইমধ্যে কর্তব্যরত ৪ চিকিৎসককে বরখাস্ত ও স্বাস্থ্য পরিসেবা সংক্রান্ত এক পরিচালককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। মিয়ানমার সফররত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। মর্মান্তিক এ ঘটনার খবর পেয়েই ফোনে মুখ্যমন্ত্রী রমন সিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাঁর উদ্বেগের কথা জানান প্রধানমন্ত্রী।এদিকে, কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধীও এক বিবৃতিতে, চিকিৎসায় গাফিলতি ও ভুল পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচারের কারণে মৃত্যুতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান।প্রসঙ্গত, বিলাসপুর শহরতলির পেন্ডারি গ্রামে বন্ধ্যাকরণের অস্ত্রোপচার শিবিরের আয়োজন করা হয় গত শনিবার। শিবিরটি হয়েছিল এই গ্রামের বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র নেমিচাঁদ জৈন ক্যান্সার অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারে। ৮৩ জন মহিলা বন্ধ্যাকরণের অস্ত্রোপচার করান ওই দিন। অস্ত্রোপচারের পর তাঁদের ভেতর ৬০ জনেরই নানা জটিল উপসর্গ দেখা দেয়। বিলাসপুরের কয়েকটি হাসপাতালে তাঁদের ভর্তি করান আত্মীয়স্বজন ও গ্রামের মানুষজন। সোমবার মারা যান ২৬ বছর বয়সী জানকী বাই, ২৭ বছর বয়সী দীপ্তি যাদব। সোমবার রাতে মারা গেছেন রেখা নির্মলকার, নেমবাই সূর্যবংশী, ফুলবাই, চন্দ্রাবাই, রঞ্জিতা ও অন্য এক মহিলা। এদের সবার বয়স ২২ থেকে ৩২-এর মধ্যে। মঙ্গলবার সারা দিনে মারা গেছেন আরও ৩ জন।এ সব খবর আজ ছড়িয়ে পড়তেই রাজ্য জুড়ে হইহই পড়ে যায়। দিল্লিতেও এ নিয়ে শোরগোল পড়ে। সি পি এম নেত্রী বৃন্দা কারাত বলেছেন, চিকিৎসায় গাফিলতির এ এক চূড়ান্ত নজির। গোটা রাজ্যের সরকার ও প্রশাসনের ওপরই এর দায় বর্তায়। কংগ্রেস নেতা অজিত যোগী বলেছেন, রাজ্য সরকারের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার প্রমাণ এ ঘটনা। এদিকে, ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়ার পরই মুখ্যমন্ত্রী রমন সিং বিলাসপুরের চিফ মেডিক্যাল অফিসার কে কে ভাঙ্গে, ল্যাপটোস্কোপিক সার্জেন ডা. আর কে গুপ্তা, জন্ম নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের রাজ্য আহ্বায়ক ডা. কে সি ওরাওঁ ও তখতপুরের ব্লক মেডিক্যাল অফিসার ডা. প্রমোদ তিওয়ারিকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। বন্ধ্যাকরণের অস্ত্রোপচার যিনি করেছিলেন, সেই ডাক্তার ও এই স্বাস্থ্যক্যাম্পের পরিচালক ডা. আর কে গুপ্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে এফ আই আর করার নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী রমন সিং। প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী মৃত মহিলাদের পরিবারপিছু ২ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ক্ষতিপূরণের টাকা বাড়িয়ে তিনি জানিয়েছেন, দেয়া হবে ৪ লাখ টাকা। অসুস্হদের চিকিৎসায় দেয়া হবে মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকা। পুরো ঘটনার উচ্চপর্যায়ের তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।খবর:রেডিও তেহরান, উল্লেখ্য, বিলাসপুর ২০১১ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর ছত্তিশগড়ে ছানি অপারেশনের শিবিরে অস্ত্রোপচার করিয়ে একটি চোখের দৃষ্টি হারিয়েছিলেন ৪৪ জন।