প্রকাশ্যে স্কুলছাত্রীকে মারধর ও যৌন নিপীড়নকারী, সেই বখাটে গ্রেফতার

অনলাইন ডেস্ক:- হবিগঞ্জ জেলা শহরে প্রকাশ্যে এক স্কুলছাত্রীকে মারধর ও যৌন নিপীড়নের দায়ে বখাটে কিশোর রুহুল আমিন রাহুলকে আটক করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার দুপুরে জেলা যুবলীগ সভাপতি আতাউর রহমান সেলিমের নেতৃত্বে এলাকাবাসী বখাটে রুহুলকে শহরতলির রিচি এলাকা থেকে আটক করে। পরে তাকে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ওসি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন। এছাড়া তিনি জানান, বখাটে রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে স্কুলছাত্রীর বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনে মামলা করা হয়েছে ।
স্থানীয় লোকজন জানান, রুহুল আমিন হবিগঞ্জ শহরের রাজনগর এলাকায় মামার বাসায় থেকে নবম শ্রেণিতে পড়াশোনা করে। তাকে না পেয়ে পুলিশ আজ শুক্রবার সকালে রুহুল আমিনের মামি মার্জিয়া বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এ অবস্থায় স্বজনরা মুরুব্বিদের মাধ্যমে রুহুল আমিনকে ধরে থানায় নিয়ে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেন। পরে মার্জিয়া বেগমকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, হবিগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়ের (জুনিয়র স্কুল) নবম শ্রেণির ছাত্র রাহুল হবিগঞ্জ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রিটিকে প্রেমের প্রস্তাব দিলে সে তা প্রত্যাখ্যান করে। তা সত্ত্বেও বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করত রাহুল। বিষয়টি জানতে পেরে কিছুদিন আগে মেয়েটির এক নিকটাত্মীয় তাকে চড়-থাপ্পড় মারেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ২৬ আগস্ট বিদ্যালয় ছুটির পর বাসায় যাওয়ার পথে ওই ছাত্রীকে চড়-থাপ্পড় মারে বখাটে রাহুল। এসময় সে মেয়েটির যে স্বজন তাকে পিটিয়েছেন তার হাত-পা কেটে ছাত্রীটির কাছে পাঠানোর হুমকি দেয়।
এ ঘটনার ভিডিওচিত্র ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় জেলাসহ সারা দেশে নিন্দার ঝড় বয়ে যায়। ছেলেটিকে আটক করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে। এর পরপরই সরব হয়ে ওঠে প্রশাসন। গতরাত থেকেই অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেফতারে অভিযান শুরু করে তারা। অবশেষে আজ দুপুরে তাকে গ্রেফতারের পর থানা হাজতে রাখা হয়।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক সাবিনা আলম শুক্রবার বলেন, “বিষয়টি অত্যন্ত অমানবিক। প্রশাসন বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। তিনি বলেন, ঘটনাটি ঘটার সাথে সাথে কেউ আমাদেরকে জানায়নি। ফেসবুকে ভিডিওটি ছড়িয়ে যাওয়ার পর বিষয়টি আমাদের নজরে আসলে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেই।”
তিনি জানান, “ভবিষ্যতে যাতে এ ধরণের কোন ঘটনা আর না ঘটে সেজন্য স্কুল শুরু ও ছুটির সময় স্কুলের শিক্ষক অথবা পুলিশ সদস্যকে স্কুলের আশেপাশে রাখার ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া কোন শিক্ষার্থীর প্রতি এ ধরণের কোন ঘটনা ঘটে গেলে যাতে সাথে সাথে প্রশাসনকে জানানো হয়, সে বিষয়েও সচেতনতা তৈরি করা হবে।“
উত্ত্যক্তের শিকার মেয়েটির বাবা বলেন, ‘আমার মেয়েকে একই এলাকার রুহুল আমিন (১৫) দীর্ঘদিন ধরে উত্ত্যক্ত করে আসছিল। এ নিয়ে কয়েকবার রুহুল আমিনের পরিবারের কাছে নালিশ দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি।’
ভিডিওতে দেখা যায়, স্কুলের পোশাক পরা কয়েকজন ছাত্রী রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। হঠাৎ একটি ছেলে এক ছাত্রীর বাহুতে হাত দিয়ে তার পথ রোধ করে দাঁড়ায়। এর পর ছেলেটি মেয়েকে গালাগাল করতে করতে তার গালে বেশ কয়েকটি চড় মারে। ভিডিওচিত্রের শেষের দিকে দেখা যায়, ছেলেটি মেয়েটিকে মারধরের হুমকি দিতে দিতে চলে যাচ্ছে।

এ সময় ছেলেটির এক বন্ধু মোবাইল ফোনে এ দৃশ্য ধারণ করে।এর পর তা ফেসবুকে আপলোড করে। ভিডিওচিত্রটি আপলোড করার পর দেশজুড়ে তা চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে।

Exit mobile version