শুধু মেয়েরা…

লাইফস্টাইল ডেস্ক:- বরাবরের মত আমি এবারো জানি যে এই লেখার পর অনেকেই আমাকে গালাগাল দিতে তেড়ে আসবেন। তবে এবার গাল বকবেন মেয়েরা। কারণ আমি আজ যা লিখতে যাচ্ছি, সেটা অনেক মেয়েরই পছন্দ হবে না। তবুও অনেকদিন যাবত ভেবেছি, ভেবেচিন্তে মনে হয়েছে যে কথাগুলো লিখে ফেলাটাই সবচাইতে উচিত কাজ হবে। আমার মনে কিছু প্রশ্ন আছে, সেই প্রশ্নগুলোর জবাব হয়তো কেউ দিতে পারবেন।
যারা নিয়মিত পাঠক, তাঁরা হয়তো লক্ষ্য করেছেন যে “প্রিয় সম্পর্ক” নামে আমাদের একটি নতুন বিভাগ চালু হয়েছে, যে বিভাগে যে কেউ নিজের সমস্যা লিখে পাঠাতে পারেন। চাইলে গোপন রাখতে পারেন নিজের নাম পরিচয়। হয়তো এটাও লক্ষ্য করেছেন যে এই বিভাগে পরামর্শ গুলো সাধারণত আমি দিয়ে থাকি।
আমার কাজটি এক্ষেত্রে সহজ, যদি কেউ আমাকে উদ্দেশ্য করে পেজে প্রশ্ন পাঠান, সেই প্রশ্নটি আমাকে পাঠিয়ে দেয়া হয়। আমি একজন বন্ধু হিসাবে নিজের মতামতটুকু দিই। কখনো ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে দিই, কখনো আইনজীবীর, কখনো কেবলই স্রেফ আমার ব্যক্তিগত মতামত। যারা প্রশ্ন করেন, তাঁদের নাম পরিচয় আমি কখনোই জানতে পারি না। অত্যন্ত সতর্কতার সাথে পাঠকের প্রাইভেসি রক্ষা করা হয়।
যাই হোক, এই প্রিয় সম্পর্ক বিভাগের কারণেই হোক বা যে কারণেই হোক, কিছু মানুষের ধারণা হয়ে গেছে যে আমি “মুশকিলে আসান” টাইপ কেউ একজন বা আমি সব প্রশ্নের জবাব জানি। ফলে আমার ফেসবুক আইডির ইনবক্স, আমার ই মেইল ইত্তাদিতেও প্রচুর প্রশ্ন আসে। আমি চেষ্টা করি কিছু কিছু জবাব দেয়ার, বলাই বাহুল্য যে সময়ের কারণে পেরে উঠি না। আমার আজকের এই লেখা সেই “ইনবক্স” প্রসঙ্গে…
সত্যি কথা বলতে কি, এখন যা লিখব সেটা আমার নিজেরই বিশ্বাস হয় না। মনে হয় কোথাও একটা ভুল হয়েছে। কিন্তু সত্য এটাই যে, ইনবক্সে যেসব প্রশ্ন আমি পাই তার ৭০ ভাগ হচ্ছে বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক বিষয়ে। আরও খোলাসা করে বললে- কোন পিল খেলে মোটা হবে না বা কীভাবে বুঝবে গর্ভ ধারণ হয়নি? গর্ভধারণ করে ফেলেছে, এখন গর্ভপাত কীভাবে করাবে? মা বাবার চোখ এড়িয়ে প্রেমিকের সাথে দেখা করার উপায় কী? রুম ডেট কোথায় কোথায় করা যায় ইত্যাদি।
আর সবচাইতে বেশী যে প্রশ্ন আসে সেটা হচ্ছে সতীত্ব ও হাইমেনের ব্যাপারে। সর্বাধিক কমন প্রশ্ন, বিয়ের পর কি স্বামী বুঝবে যে আগে যৌন সম্পর্ক হয়েছিল? হাইমেন ছিঁড়ে গেলে কি সেটা জোড়া দেয়া যায়? যৌন সম্পর্ক ছাড়া হাইমেন আর কী কী ভাবে ছিঁড়তে পারে বা স্বামীকে আর কী কী যুক্তি দেয়া যেতে পারে?
অবাক হলেন? আমিও অবাক হই, বলা যায় হতভম্ব হয়ে যাই। যখনই এমন কোন প্রশ্ন পাই, আমি সেই মেয়েটির আইডি ঘুরে দেখি। অনেকেই নিজের বয়স প্রশ্নের সাথেই লেখেন। যারা লেখেন না, তাঁদের বয়স আইডি ঘুরে জানার চেষ্টা করি। আর হতভম্ব হয়ে যাই যখন দেখি বেশিরভাগ মেয়ের বয়সই ১৫/১৬ থেকে ২১/২২ এর মাঝে। অর্থাৎ হয় নেহাতই কিশোরী কিংবা সদ্য তরুণী! ২৭/২৮ বছরের তরুনীদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত আমি এমন প্রশ্ন পেয়েছি বলে মনে পড়ছে না।
বিষয়টি আমার মনে একটা শক্ত নাড়া দিয়েছে। এখনকার জেনারেশন সম্পর্কে আমার ধারণা অনেকটাই বদলে দিয়েছে। সেই সাথে তৈরি করেছে অসংখ্য প্রশ্ন। সম্পর্কের যে সংজ্ঞাটা আমরা জানতাম, সেটা কি বদলে গিয়েছে? আজকাল যৌন সম্পর্ক কি এতটাই ডাল ভাত যে ১৫/১৬ বছরের কিশোরীরাও গর্ভ নিরধোক পিলের খোঁজখবর জানে? যৌনতা জিনিসটা ভালোবাসায় কবে থেকে এত প্রয়োজনীয় হলো যে ভালোবাসা কী জিনিস বুঝে ওঠার আগেই গর্ভপাত করাতে হয়?
একটা ১৫/১৬ বছরের কিশোরীকে কেন এখনই ভাবতে হবে যে স্বামীর কাছে হাইমেন ছিঁড়ে যাওয়ার ব্যাখ্যা সে কী দেবে?… সবচাইতে বড় প্রশ্ন- আমাদের ছেলেমেয়েগুলিকে বড় করতে গিয়ে আমরা কি বিশাল কোন ভুল করে ফেলেছি? ভুল না করে থাকলে অবস্থা এতটা করুণ কেন হবে?
প্রশ্নগুলোর কোন উত্তর আমার জানা নেই। তবে নিজের একটা তিক্ত অভিজ্ঞতা জানিয়ে লেখাটা শেষ করে দিব। কিছুদিন আগের কথা, ইনবক্সে একটি বিশাল চিঠি পেলাম। বিশাল চিঠির সারমর্ম অনেকটা এই রকম যে মেয়েটির আগামী বছর এস এস সি পরীক্ষা। বয় ফ্রেন্ডের সাথে সম্পর্ক ২ বছরের। নিয়মিত যৌন সম্পর্ক আছে। মেয়েটির ধারণা হচ্ছে সে প্রেগন্যান্ট। হোম টেস্ট করিয়েছে, রেজাল্ট পজিটিভ। বয় ফ্রেন্ডকে জানিয়েছে, ছেলে ব্রেক আপ করে ফেলেছে। পিল খেতো, প্রেমিকই কিনে দিয়েছিল। কীভাবে যে গর্ভধারণ হয়ে গেলো নিজেই বুঝতে পারছে না। এখন মেয়ের ভাষ্য হচ্ছে, আব্বা আম্মা তাঁকে খুন করে ফেলবে। সে জানতে চায় গর্ভপাত করাতে স্বামী থাকা লাগে কিনা। খরচ কেমন হয়। কোথায় করালে ভালো হয়। কেউ কি বুঝে ফেলবে কিনা যে সে গর্ভপাত করিয়েছে…
চিঠি পড়ে আমি আক্ষরিক অর্থেই কিছুক্ষণের জন্য “হ্যাং” হয়ে গেলাম। তারপর যেটা বলার, সেটাই জবাব দিলাম। বললাম মাকে জানাও, মা ব্যবস্থা করবেন যা করাই। বলাই বাহুল্য যে মেয়ে কিছুতেই রাজি না। সে নানান রকমের কথাবার্তা। আমি জিজ্ঞেস করলাম, প্রেম করছো ভালো কথা, সেক্সের প্রয়োজন কী ছিল? মেয়ের জবাবটি ছিল এই রকম-“ভালবাসলে সেক্স করলে ক্ষতি কী? ও বলেছে সেক্স না করলে সম্পর্ক ব্রেকাপ করে দিবে। সেক্স করছি না মানে আমি ওকে বিশ্বাস করছি না!”… আমি বললাম, তাহলে এখন যে ব্রেকাপ করে ফেলল, এটার মানে কী?
মেয়েটা জবাব দিতে পারল না। তার কাছে আসলে জবাবও নেই। আমি তাঁকে গর্ভপাত করানো সম্পর্কে কিছু বলতে পারলাম না দেখে আচ্ছা মত দুটো কথা শুনিয়ে ব্লক করে দিল। তার সবচাইতে ভদ্র কথাগুলো ছিল- একটা প্রশ্নের জবাব দিতে পারি না, তাহলে “…”-এর পরামর্শ দিতে আসছি কেন ইত্যাদি ইত্যাদি।
মেয়েটি নিজেও জানে না কি ভীষণভাবে নিজেকেই ঠকাচ্ছে সে। মা বাবাকে তো ঠকাচ্ছে অবশ্যই। যৌন সম্পর্ক করছি না মানে বিশ্বাস করছি না, ভালবাসছি না… এটা কোন যুক্তি হলো!
পরিশিষ্ট
কিছুদিন আগে একজন পাঠক আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্কের ব্যাপারে আমি এত রি অ্যাক্ট কেন করি। মানুষ যেমন প্রেম করে ধোঁকা খেতে পারে, বিয়ে করেও তো খেতে পারে। বিয়ের পর যৌন সম্পর্ক করলেই যে সম্পর্ক টিকবে, সেটা তো না। তাছাড়া দুজন মানুষ যখন পরস্পরের সম্মতিতে প্রেম করে যৌন সম্পর্ক করে, সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি কেন এমনভাবে রি অ্যাক্ট করি যে বিষয়টি অন্যায় হয়ে গেছে?
সত্যি কথা বলতে কি, দুজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষ যখন সুস্থ মস্তিষ্কে ঠাণ্ডা মাথায় নিজের জীবনের সিদ্ধান্ত নেন, তখন সেখানে আমার বলার কিছু নেই। থাকা উচিতও না। আমি রি অ্যাক্ট করি তখন, যখন দেখি একটা অপরিণত বয়সের কিশোরী যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে এখন একটা সমস্যায় আটকে গেছে। কিংবা কোন তরুনীকে গর্ভপাত করাতে হচ্ছে গোপনে। কিংবা কাউকে এটা ভাবতে হচ্ছে যে স্বামী যদি বুঝে ফেলে বিয়ের আগে যৌন সম্পর্ক হয়েছিল! আমি সবচাইতে বেশী রি অ্যাক্ট করি তখন, যখন দেখি যে যৌন সম্পর্ককে ভালোবাসার প্রমাণ হিসাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। বা প্রেমের সম্পর্ক করা হচ্ছে কেবলই যৌন সম্পর্কের জন্য।
ভালোবাসায় যৌনতা আসে, তবে সেটা ভালোবাসার আগে নয় কোনভাবেই। যৌন সম্পর্ক করে যদি ভালোবাসার প্রমাণ দিতে হয়, সেটা আর যাই হোক ভালোবাসা নয়। দুটি মানুষ যদি পরস্পরকে ভালো বেসেই থাকেন, তাহলে নিশ্চয়ই একসাথে ঘর বাঁধার স্বপ্নও দেখেন? যদি তাই হবে, তাহলে কী ক্ষতি হয় কয়েকটা দিন একটু সবুর করলে? ক্ষতি কিছু হয় না, কিন্তু কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যা অবশ্যই এড়িয়ে যাওয়া যায়।
আমি ব্যাকডেটেড? হবে হয়তো। এখন কেউ চাইলে সেকেলে হবার জন্য আমাকে গাল বকতে পারেন। পৃথিবী বদলে যাচ্ছে। সেকেলে মানুষেরা আজকাল বড় বেমানান এই গতিশীল পৃথিবীতে…সূত্র:(রুমানা বৈশাখী. প্রিয়.কম)

Exit mobile version