ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে সারাদেশে ২৬ জনের মৃত্যু

অনলাইন ডেস্কঃ- ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং গত সোমবার (২৪ অক্টোবর) মধ্যরাতে বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানার ফলে বাংলাদেশের ৯টি জেলায় কমপক্ষে ২৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
গত সোমবার সকাল থেকে কুমিল্লা, নড়াইল, সিরাজগঞ্জ, ভোলা, বরগুনা, মুন্সিগঞ্জ, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও গোপালগঞ্জে থেকে ইউএনবি সংবাদদাতাদের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানা গেছে।
চট্টগ্রামে সোমবার রাতে বঙ্গোপসাগরে ড্রেজার ডুবে নিখোঁজ হওয়া আট শ্রমিকের লাশ মঙ্গলবার মিরসরাই উপকূলে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
নিহতদের মধ্যে পাঁচজন হলেন- মাহমুদ মোল্লা, আলামিন, ইমাম মোল্লা, আবুল বাশার ও তারেক। তারা সবাই পটুয়াখালী জেলার বাসিন্দা।
বালু উত্তোলন ড্রেজার সৈকত-২ উপজেলার বসুন্ধরা এলাকায় বেড়িবাঁধ থেকে প্রায় এক হাজার ফুট দূরে সাগরে আটজন শ্রমিক নিয়ে নোঙর করেছে।
মিরসরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: কবির হোসেন জানান, সোমবার রাত ১০টার দিকে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং-এর কারণে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বেড়ে গেলে তা ডুবে যায়।
ওসি আরো জানান, মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে মিরসরাই পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিরা ডুবে যাওয়া ড্রেজার থেকে লাশ উদ্ধার করে।
কুমিরা নৌপুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মাহবুব জানান, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে মঙ্গলবার সকালে কদমরসুল এলাকার কাছে বঙ্গোপসাগরের একটি শিপইয়ার্ড থেকে সাত মাস বয়সী এক মেয়ে শিশুর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
তিনি আরো জানান, সাগরের প্রবল জোয়ারে শিশুটির লাশ শিপইয়ার্ডে ভেসে এসেছে।
পরে লাশ চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে বলে জানান এসআই।
মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কনকসারে গ্রামে সোমবার রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় বিশাল গাছ ভেঙ্গে পড়ায় ২৮ বছর বয়সী এক নারী ও তার চার বছরের মেয়ের মৃত্যু হয়েছে।
নিহতরা হলেন- আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী আসমা আক্তার ও সুমাইয়া আক্তার।
মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াসমিন ফেরদৌস জানান, এ সময় নিহতের স্বামী রাজ্জাকও আহত হন। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায় নেয়া হয়েছে।
নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার হাবিবিয়া গ্রামে মঙ্গলবার ভোরে গাছ ধসে এক বছরের এক মেয়ে শিশু নিহত ও তার মা আহত হয়েছেন।
নিহত আমেনা বেগম (২৫) ওই গ্রামের আব্দুল্লাহর স্ত্রী এবং স্নেহা ওই দম্পতির মেয়ে।
চরজব্বার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেবপ্রিয় দাস জানান, মঙ্গলবার ভোর ৩টার দিকে ঝড়ের আঘাতে বিশাল একটি গাছ আমেনা-আব্দুল্লাহর বাড়ির ওপর ভেঙে পড়ে। এসময় ঘটনাস্থলেই ঘুমন্ত আমেনা ও স্নেহার মৃত্যু হয়।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটের হেসাখাল এলাকায় সোমবার রাতে বাড়ির ওপর বিশাল গাছ পড়ে এক দম্পতি ও তাদের চার বছরের মেয়ের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় তারা ঘুমিয়ে ছিল।
এমডি নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রায়হান মেহবুব জানান, এ ঘটনায় নিজাম উদ্দিন, তার স্ত্রী শারমিন আক্তার সাথী ও তাদের মেয়ে নুসরাত আক্তার লিজার মৃত্যু হয়েছে।
তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কুমিল্লায় বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার ছিল। সোমবার রাত ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
অন্যদিকে, সোমবার সকাল ১১টার দিকে নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলা কমপ্লেক্সে মাথায় গাছ পড়ে মর্জিনা বেগম নামে ৩৫ বছর বয়সী এক নারীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গেছে।
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো: নাসির উদ্দিন জানান, বাগেরহাটের বাসিন্দা মর্জিনা উপজেলার রাজপুর গ্রামে গৃহকর্মীর কাজ করত।
ঘটনার সময় তার ১১ বছরের ছেলে তার সাথে ছিল, তবে সে বেঁচে যায় বলে ওসি জানান।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলায় সোমবার রাতে যমুনা নদীর খালে নৌকা ডুবে মা ও তার ছেলের মৃত্যু হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসাদ্দেক হোসেন জানান, নিহতরা হলেন পূর্বমোহনপুর গ্রামের খোকন শেখের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা (৩০) ও তার ছেলে আরাফাত রহমান (৫)।
দুর্ঘটনাস্থল থেকে আয়েশার স্বামী ও অপর দুই সন্তানকে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সোমবার রাত ৮টার দিকে তারা একটি নৌকায় করে খাল দিয়ে বাড়ি যাওয়ার সময় খারাপ আবহাওয়ার কারণে তাদের নৌকাটি ডুবে যায়। ঘটনাস্থলেই আরাফাত মারা যায় এবং হাসপাতালে নেয়ার পর আয়শাকে মৃত ঘোষণা করা হয় বলে ওসি জানান।
ভোলায় সদর, দৌলতখান, লালমোহন ও চরফ্যাসনে গাছের নিচে চাপা পড়ে পানিতে ডুবে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, নিহতরা হলেন- সদর উপজেলার মফিজুল ইসলাম (৬৫), দৌলতখান উপজেলার বিবি খাদিজা (৮০), চরফ্যাসন উপজেলার মনির স্বর্ণকার (৪০), আয়েশা বেগম (২৫) ও নাছির।
সোমবার রাতে সদর উপজেলার ধনিয়া ইউনিয়নের পাকার মাথা এলাকার মফিজুল ইসলাম এবং দৌলতখান পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ডের বিবি খাদিজা নিজ বসত ঘরের ওপর গাছ ভেঙে পড়ায় এতে চাপা পড়ে মারা যান।
অন্যদিকে, মনির মোটরসাইকেলে যাওয়ার সময় গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এবং ভোর রাতের দিকে জোয়ারের পানিতে বাড়িঘর তলিয়ে গেলে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার সময় পানিতে ডুবে আয়শা বেগমের মৃত্যু হয়। লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহাবুবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এছাড়া ভোলা সদর উপজেলার আলীনগর এলাকায় ঝড়ে রাস্তার ওপর ভেঙ্গে পড়া গাছ কেটে সরাতে গিয়ে নাছির নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন পুলিশ সুপার মো: সাইফুল ইসলাম।সূত্র : ইউএনবি

Exit mobile version