বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর এখন রিকশাচালক

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি : সোনার বাংলাকে স্বাধীন করার জন্য যারা অস্ত্র হাতে যুদ্ধে নেমেছিলেন তাদের অনেকেই আজ লড়ছেন দু’বেলা দু’মুঠো খাবারের জন্য। কোন রকমে জীবন যাপনের জন্য তারা কখনও ভ্যান চালান, কখনও ইটভাটায় মজুরি দেন, কখনও বা অন্যের বাড়িতে কামলা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এদের মধ্যে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর। দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে আনতে পারলেও তিনি জীবন সংগ্রামে আজ পরাজিত সৈনিকের কাতারে শামিল হতে চলেছেন। বীর মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীর আলম (৬০) শরীফের হাট এলাকার মৃত. হাসেন উদ্দিন ও মৃত. জায়দা বেগমের ছেলে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ১১নং সেক্টরের আওতায় রৌমারী, কামারজানী, গাইবান্ধা, রসুলপুর এলাকাসমূহে কোম্পানী কমান্ডার খায়রুল আলম, ওস্তাদ ওয়াজেদ আলীসহ অনেকের সাথে যুদ্ধ করেছেন বলে জানান তিনি। যুদ্ধের পরে তিনি বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলে পিতার সংসারে অর্থনৈতিক অভাবের কারণে স্ত্রীকে নিয়ে শ্বশুরালয় নাগেশ্বরীতে দীর্ঘদিন শ্রমিকের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। পরবর্তীতে তিনি স্ত্রী ও ২ সন্তান নিয়ে নিজ এলাকায় ফিরে আসেন। অভাবকে জয় করার জন্য তিনি রিকশা চালান। সারা দিন রিকশা চালিয়ে ১শ থেকো দেড় শ টাকা উপার্জন করে কোন রকমে স্ত্রী-সন্তানদের মুখে দু’মুঠো ভাত দিতে পারলেও সন্তানদের অন্যান্য মৌলিক চাহিদা পূরণ করা তার পক্ষে অসম্ভব। অতি কষ্টে মেয়েকে বিবাহ দিতে পারলেও ছেলে আশরাফুলের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে পারছেন না তিনি। মুক্তিযোদ্ধা জাহাঙ্গীরের সাথে কথা হলে তিনি জানান, গত ১৬ বছর রিকশা চালিয়ে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে অতি কষ্টে জীবন যাপন করছি। বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতাকে সম্মানজনক করায় এই ভাতা ও আমার রিকশা চালানো আয় মিলে কোন রকমে চলছি। ছেলের একটি চাকরির ব্যবস্থা হলে এই বৃদ্ধ বয়সে আমার স্বাধীন দেশে একটু আয়েস করে মরে যেতে পারতাম।
সম্পাদনা/শাবানা মন্ডল /০২.১৩ঘ /১মার্চ

Exit mobile version