জামায়াত ইস্যুতে মুখ বন্ধ বিএনপির

জিনিউজ: মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার রায় ঘোষণার পর থেকে ভীষণভাবে মনস্তাত্তি্বক চাপে রয়েছে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি। এই রায় নিয়ে প্রকাশ্যে বা গোপনে কোথাও কোন কথা বলতে পারছেন না দলের সিনিয়র নেতারা। এ রকম একটি পরিস্থিতিতে মঙ্গলবার বিবৃতি দিয়ে কিছু প্রশ্ন রেখে শাহবাগ আন্দোলকে স্বাগত জানানো হয়েছে। এই প্রতিক্রিয়া স্বাভাবিক ভাবেই জামায়াত-শিবিরের বিপক্ষে গিয়েছে। এই নতুন মাত্রা যোগ হবার পর স্বাভাবিক ভাবেই আন্দোরনের সাথে জামায়াত ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে চলমান মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে বিএনপির সামনে নতুন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ইতোমধ্যে দুটি রায় ঘোষিত হয়েছে। বিশেষ করে কাদের মোল্লার রায়ের পর বিএনপি ও জামায়াতের স্বাভাবিক সম্পর্কের দুরত্ব অনেকটা বেড়ে গেছে। রায়ের পর থেকে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত কে নিয়ে

হচ্ছে। দলের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা বলছে এ রায়ে সরকার ও জামায়াতের মধ্যে আগামী সংসদ নির্বাচন নিয়ে একটি গোপন আঁতাতের গন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তারা এখন জামায়াতকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে বলেন, জামায়াতের নিজস্ব আন্দোলন ও মানবতাবিরোধী অপরাধের রায়ে সরকারের কৌশলের আলামত পাওয়া যাচ্ছে। তাই জামায়াতকে নিয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে বিএনপির। নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে ১৮ দলের সরকারবিরোধী আন্দোলন চলমান অবস্থায় জামায়াত গত বছরের ডিসেম্বর থেকে নিজস্ব কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছে। বিএনপির প্রধান ইস্যু নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনর্বহাল। আর জামায়াতের ইস্যু আটককৃত দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্তি ও ট্রাইব্যুনাল বাতিল। সমপ্রতি দলটি নেতাদের মুক্তি ও ট্রাইব্যুনাল বাতিলের দাবিতে আন্দোলনের নামে দেশব্যাপী ব্যাপক তা ব ও নাশকতা চালাচ্ছে জামায়াত-শিবির। অতি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়। রায়ের দিন ও পরের দিন দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল করে জামায়াত। তবে বিএনপি আগের দুটি হরতালে নৈতিক সমর্থন দিলেও এবারের হরতালে সমর্থন দেয়নি। তাই বিএনপির বর্তমানে ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জামায়াতও। দলটির আচরণে প্রচ ক্ষুব্ধ জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। বিশ্বাসের অভাবে দলদুটি এখন ভিতরে ভিতরে পরস্পরবিরোধী অবস্থানে রয়েছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির মিটিং-এর সিদ্ধান্ত মোতাবেক লিখিত বিবৃতি দিয়ে শাহবাগ আন্দোলনকে সংহতি জানানোতে জামায়াত ও বিএনপির দুরত্ব বহুদুরে চলে গিয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। এমন দুরত্ব থেকে পুনরায় একত্রিক হওয়াটা বেশ খানিকটা কঠিন হবে বলে তারা মনে করছেন। শাহবাজ আন্দোলনের সাথে বিএনপির একাত্মতা ঘোষণার কোন বিকল্পও ছিলোনা বলেও মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কারণ তরুণদের এই আন্দোলনের সাথে গোটা জাতি একাট্রা হয়ে গিয়েছে। শুধু দেশ কেন, বিদেশেও এটা নিয়ে রীতিমতো তীব্র মুভমেন্ট চলছে। সারা বিশ্বের নজর এখন শাহবাগের দিকে। এমন পরিস্থিতিতে জাতি ছেড়ে দিয়ে জামায়াতকে সাথে রাখার কোন যুক্তিসঙ্গত কারণ নেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকমহল। এমন ক্রিটিক্যাল মোমেন্টে জামায়াত-শিবিরের কয়েকজন নেতার সাথে আলাপ করে জানা গেছে, আটক শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে জামায়াত-শিবির নিজস্ব কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এতে জোটের ওপর প্রভাব পড়বে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তারা জানান, আমাদের এখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এই মুহুর্তে কে কী মনে করল, কী ভাবল- তা আমাদের কাছে মুখ্য বিষয় নয়। আমরা ধারাবাহিকভাবে শক্ত অবস্থান নিয়ে নিজস্ব আন্দোলনে মাঠে থাকবো। এর কোন বিকল্প আছে বলে মনে হচ্ছেনা। বিএনপি দুরে সরে গেলে নিজেদের অস্তিত্ব বাঁচাতে নিজেদেরকেই চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। জামায়াত ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রসঙ্গে বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা নাম না প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, ‘রায় নিয়ে কৌশলে বিতর্ক ও ধুম্রজাল সৃষ্টি করছে সরকার।’ জামায়াতের আদর্শের সাথে বিএনপির আদর্শের কোনও মিল নেই। তাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভাঙার পক্ষে নয় বিএনপি। বরাবরই বিএনপি স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের বিচার চায়। কাউকে হয়রানি করার জন্য যেন এ বিচার না করা হয়। অতি সম্প্রতি নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দলের তৎকালীন সমন্বয়ক তরিকুল ইসলাম বলেছিলেন, ট্রাইব্যুনাল বাতিল, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাতিলের সাথে বিএনপির কোনও আদর্শিক মিল নেই। ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দেওয়ার ব্যাপারে জামায়াতের যে দাবি, তার সাথে বিএনপি একমত কি না জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, প্রশ্নই ওঠে না। আমরাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। তবে সে বিচার নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে। সে বিচার কোনও দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নের বিচার হলে বিরোধী তার বিরোধী। বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে যুবদলের বিক্ষোভ সমাবেশে দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একটি রায় নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি করা হচ্ছে। সরকারের ব্যর্থতা আড়াল করতেই এই রায় নিয়ে বিতর্ক ও বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বিএনপির আন্দোলনকে থামিয়ে রাখার অপচেষ্টা করছে। কিন্তু সরকারের এই ষড়যন্ত্র জনগণ ইতোমধ্যে ধরে ফেলেছে। নিজ অফিসে বসে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র্র রায় সাম্প্রতিক রায় প্রসঙ্গে দৈনিক করতোয়াকে বলেন, ‘কাদের মোল্লার রায়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় প্রকৃত অর্থে সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচার করতে চায় না।’

Exit mobile version