ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে হত্যার কথা স্বীকার করে গতকাল রোববার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন

bbbbbbbbbbbbbbbbb ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দারকে হত্যার কথা স্বীকার করে গতকাল রোববার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ ছাত্র। তাঁরা বলেন, এক ‘বড় ভাইয়ের’ নির্দেশে রাজীবকে    হত্যা    করেছে। ওই বড় ভাই আগে ইসলামী ছাত্রশিবিরের  সঙ্গে যুক্ত ছিলেন।
আদালতের একটি সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে গ্রেপ্তার হওয়া ছাত্ররা খুনের ঘটনাটি ভুল হয়েছে বলে অনুতাপ প্রকাশ করেছেন।
পুলিশের ভাষ্য অনুযায়ী, ওই পাঁচ ছাত্র জিজ্ঞাসাবাদে তাদেরও একই কথা বলেছিলেন। রাজীব হত্যায় জড়িত সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়া এ পাঁচজন হলেন নর্থ সাউথের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ছাত্র ফয়সাল বিন নাঈম ওরফে দীপ ও মাকসুদুল হাসান ওরফে অনিক, ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগের এহসান রেজা ওরফে রুম্মন, নাঈম সিকদার ওরফে ইরাদ ও নাফিস ইমতিয়াজ। সাত দিনের রিমান্ড শেষে তাঁদেরকে গতকাল আদালতে হাজির করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মহানগর হাকিম হারুন-অর-রশিদ তাঁর খাস কামরায় পর্যায়ক্রমে পাঁচজনের ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করেন। জবানবন্দিতে তাঁরা রাজীবকে হত্যার আগে-পরের বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। পরে আদালত তাঁদের কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

‘বড় ভাইয়ের’ নির্দেশ: আদালত সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে পাঁচজনই হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তাঁরা জানান, একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তাঁদের ‘বড়ভাই’ ছাত্রশিবিরের সাবেক এক নেতার নির্দেশে তাঁরা রাজীবকে হত্যা করেন। ওই ‘বড় ভাই’ দেড় মাস আগে তাঁদের বলেন, ‘থাবা বাবা’ নামের এক ব্লগার ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে ফেসবুকের মাধ্যমে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। তাঁরা ‘থাবা বাবা’র ব্লগ পড়ে ধর্মের অবমাননামূলক লেখা দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। এর লেখককে খুন করাটা ‘ইমানি দায়িত্ব’ বলে তাঁদের বোঝানো হয়। এরপর ওই ‘বড় ভাইয়ের’ নেতৃত্বে তাঁরা বৈঠক করে হত্যার পরিকল্পনা করেন।
ফেসবুক থেকে শনাক্ত: জবানবন্দিতে পাঁচ ছাত্র বলেন, থাবা বাবা নামের ব্লগার যে রাজীব তা ফেসবুক থেকে নিশ্চিত হন। এরপর ফেসবুকের গ্রুপ ছবি থেকে রাজীবকে শনাক্ত করেন এবং শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চে গিয়ে ছবির সঙ্গে চেহারা মেলান। এরপর রাজীবকে অনুসরণ করে তাঁর পল্লবীর পলাশনগরের বাসা চিনে আসেন।
বাস্তবায়নে দুইটি গ্রুপ: আসামিরা জবানবন্দিতে বলেন, হত্যার পরিকল্পনার পর তাঁরা তথ্য সংগ্রহ ও গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য ‘ইনটেল গ্রুপ ’(গোয়েন্দা দল) এবং হত্যার জন্য ‘এক্সিকিউশন গ্রুপ’ গঠন করেন। ‘ইনটেল’ গ্রুপের সদস্যরা হলেন এহসান রেজা, মাকসুদুল হাসান, নাঈম সিকদার ও আরও দুজন। ‘এক্সিকিউশন’ গ্রুপের সদস্যরা হলেন ফয়সাল বিন নাঈম ও মাকসুদুল হাসান। খুনের কয়েক দিন আগে তাঁরা পর্যবেক্ষণের জন্য রাজীবদের বাসার সামনে ক্রিকেটও খেলেন।
এহসান রেজা জবানবন্দিতে বলেন, তাঁদের কাছে তথ্য ছিল, ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজীব শাহবাগে যাবেন না। তাই তিনি ও মাকসুদ সকাল থেকে তাঁর বাসার কাছে বসে থাকেন। জবানবন্দিতে রেজা বলেন, ‘রাত নয়টার দিকে দেখি রাজীব তাঁর বান্ধবীকে নিয়ে বাইশটেকির দিকে যাচ্ছেন। ফয়সালকে মোবাইল ফোনে জানাই। ফয়সাল তখন নাঈম সিকদার, নাফিস ও আরও দুজনকে নিয়ে রাজীবের বাসার আশপাশে অবস্থান নেয়।’
ওঁত পেতে হামলা: ফয়সাল তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, ‘রাত সাড়ে নয়টার দিকে রাজীব বাসায় ফিরছিলেন। তিনি বাসার কাছে পৌঁছামাত্র ফয়সাল প্রথমে পেছন থেকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করে। রাজীব ঘুরে গেলে কোপটি তাঁর গলায় লাগে এবং তিনি পাশের দেয়ালের ওপর পড়ে যান। এরপর ফয়সাল ও অনিক এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। রাজীব লুটিয়ে পড়লে সবাই দৌড়ে চলে যাই।’মাকসুদুর হাসান বলেন, রাজীবকে মারার সময় নাঈমের একটি কোপ তাঁর পায়ে লাগে। এতে তাঁর জুতা কেটে আঙুলে কোপ লাগে। রাজিবকে হত্যার পর রেজার সঙ্গে তিনি কাকরাইল এলাকায় যান। সেখানে জুতাজোড়া খুলে চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তরের পুকুরপাড়ে ফেলে দেন।
ফয়সাল বলেন, ঘটনা শেষে তাঁরা একটি চাপাতি রাস্তার মোড়ের পানের দোকানের সামনে এবং আরেকটি চাপাতি ও চারটি ছুরি শেরেবাংলা নগর বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের রাস্তার পাশের ড্রেনে ফেলে দেন।
আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে আসামিরা হত্যাকাণ্ডে আটজন অংশ নেন বলে জানান। গত ১ মার্চ রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে এই পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে ডিবি। এরপর তাঁদের সবাইকে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহিষ্কার করে।

Exit mobile version