যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য লাশের রাজনীতি বন্ধ করুন: প্রধানমন্ত্রী

gnewsস্টাফ রিপোটার ,জি নিউজঃ  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য লাশের রাজনীতি বন্ধ করুন। হত্যার রাজনীতি বন্ধ করুন। তা না হলে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার চেষ্টা করার জন্য আপনারও বিচার হবে। হরতাল দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচানো যাবে না। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিকালে পিরোজপুর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির পিতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় এ জন্য জাতির পিতাকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। ক্ষমতায় এসে জাতির জনকের হত্যাকারীদের বিচার করা হয়েছে। বিচার হয়েছে শিশু রাসেলের হত্যাকারীদের। জাতির জনকের খুনিদের রায় ঘোষণার দিনও বিরোধীদলীয় নেতা হরতাল ডেকেছিলেন। কিন্তু তাদের বাঁচাতে পারেননি। এখন যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য হরতাল দিচ্ছেন। কিন্তু তিনি যুদ্ধাপরাধীদেরও রক্ষা করতে পারবেন না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এই মাটিতেই হবে। কেউ তা বন্ধ করতে পারবে না।

তিনি বলেন, বিএনপি নেতা খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে চান। তাদেরকে বাঁচাতে জামায়াতকে দিয়ে মসজিদে আগুন দিয়েছেন। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা করছেন। পুলিশ বাহিনীকে পিটিয়ে হত্যা করছেন। খালেদা জিয়া বলেছেন, দেশে আরও লাশ পড়বে। অর্থাৎ তিনি আরও মানুষ হত্যা করবেন। কারণ তিনি একদিকে যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাবেন অপর দিকে তিনি ক্ষমতায় যাবেন রক্তের ওপর দিয়ে, লাশের ওপর দিয়ে।

যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর বিচারের বিষয় প্রধানমন্ত্রী জনতার উদ্দেশে বলেন, আপনারা সাঈদীর বিচার চান? জবাবে জনসভায় উপস্থিত প্রায় লক্ষাধিক মানুষ দুই হাত তুলে একসঙ্গে বলেন চাই। এরপর প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উদ্দেশে বলেন, আসুন দেখে যান সাঈদীর এলাকার মানুষ সাঈদীর বিচারের রায় দ্রুত কার্যকর চায়। আর বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া তার প্রিয় যুদ্ধাপরাধীকে বাঁচাতে চান।

এক যুগ পর প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চল পিরোজপুর সফরকে ঘিরে সর্বত্র ছিল উৎসবের আমেজ। ১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতাল উপেক্ষা করে দুপুর থেকে পিরোজপুর সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় মাঠে জড়ো হন লাখো মানুষ। মানুষের ঢল একপর্যায়ে স্কুল মাঠ ছাড়িয়ে পুরো শহরে পেঁৗছে যায়। জনসভা শুরুর অনেক আগে থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা ব্যানার, পোস্টার-ফেস্টুন হাতে নিয়ে মিছিল করে আসতে থাকেন। বিকাল ৪টার দিকে সভা মঞ্চে আসেন প্রধানমন্ত্রী। জনসভা মঞ্চে ওঠার আগে প্রধানমন্ত্রী পিরোজপুরে ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বলেশ্বর নদীর উপর নির্মিত শহীদ শেখ ফজলুল হক মনি সেতু, ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ইন্দুরকানী থানা ভবন, ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলা রেজিস্ট্রি অফিস, ১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলা সরকারি গণগ্রন্থাগারসহ অর্ধ শত কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৭টি প্রকল্পের ১২টি স্থাপনা, ৮৮ লাখ টাকার নেসারাবাদ ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ভবন, ১ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্বরূপকাঠি সাব- রেজিস্ট্রি অফিস ভবন, ১২ কোটি ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬টি স্কুল কাম সাইক্লোন শেল্টার ও নাজিরপুরে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব কলেজ একাডেমিক ভবন ও ছাত্রী নিবাস উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনসভায় খুলনা বরিশাল মহাসড়কে বেকুটিয়া পয়েন্টে কচা নদীর ওপর সেতু নির্মাণ, পিরোজপুরের সরকারি কলেজ সোহ্রাওয়ার্দী কলেজে মাস্টার্স কোর্স চালু ও সরকারি মহিলা কলেজে অনার্সর্ কোর্স চালুর ঘোষণা দেন। এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একেএমএ আউয়ালের পরিচালনায় সভায় বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, এমপি সাধনা রানী হালদার, এমপি ডা. আনোয়ার হোসেন ও এমপি অধ্যাপক শাহ আলম।

বিদেশের কাছে আর হাত পাততে চাই না : এদিকে পটুয়াখালী থেকে আমাদের প্রতিনিধি সঞ্জয় কুমার দাস জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আবার আমরা বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনাসহ পুরো দক্ষিণাঞ্চলকে দেশের খাদ্য শস্য ভাণ্ডার হিসেবে গড়ে তুলব। কোনো সরকার দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন করেনি, আমরা সরকারে এলেই দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন সাধিত হয়। পটুয়াখালীর দশমিনায় এশিয়ার বৃহত্তম বীজ বর্ধন খামার প্রকল্পের কাজ হাতে নিয়েছি। সব ধরনের সবজি উৎপাদন করে তা সংরক্ষণ করার জন্য এই বীজ বর্ধন এলাকায় হিমাগার নির্মাণ করা হবে। তিনি সকাল ১১টায় দশমিনার চর বাঁশ-বাড়িয়ায় নির্মিত এশিয়ার বৃহত্তম বীজ বর্ধন খামার প্রকল্প উদ্বোধন ও পটুয়াখালী কৃষি বিমান অবতরণ কেন্দ্রে পায়রা নদীর উপর লেবুখালী ব্রিজসহ ১২টি প্রকল্প উদ্বোধন করে দশমিনা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত দুটি জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। তিনি সকাল সাড়ে ১০টায় হেলিকপ্টার যোগে জেলার দশমিনা উপজেলার চর বাঁশবাড়িয়ায় পেঁৗছে ‘দক্ষিণ উপকূলীয় অঞ্চলে (বরিশাল ও পটুয়াখালী) বীজ বর্ধন খামার স্থাপন’ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন। দুপুর ১২টায় পটুয়াখালী জেলা সদরের খলিসাখালীর কৃষি বিমান অবতরণ ক্ষেত্রে নেমে সড়ক পথে দুমকির লেবুখালী ফেরিঘাটে গিয়ে পায়রা নদীতে ৪৬৬ কোটি টাকা ব্যয়ে চার লেন বিশিষ্ট লেবুখালী সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।

 

 

জি নিউজ /মতিয়ার / ২০-০৩-২০১৩

Exit mobile version