রাষ্ট্রপতিকে শেষ শ্রদ্ধা : আজ দাফন

gnewsbd.netজি নিউজ ঃ রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানকে শেষবারের মতো এক নজর দেখতে দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে সবাই মিশেছেন এক কাতারে। কেউ লুঙ্গি পরে, কেউবা খালি পায়ে। সত্তর বছরের বৃদ্ধ থেকে সাত বছরের বালক। রিক্শা চালক-ফুটপাতের দোকানী থেকে কোটিপতি ব্যবসায়ী। সরকার প্রধান থেকে বিরোধী দলের নেতা, কুটনৈতিক- সব স্তরের মানুষ বঙ্গভবনে জড়ো হয়ে দেশের উনিশতম রাষ্ট্রপতিকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার মারা যান রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। তার মরদেহ দেশে আসার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে বঙ্গভবনে রাখা হয় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য। প্রথমে বঙ্গভবনের উত্তর অংশের শোক বেদীতে রাষ্ট্রপতির কফিনে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পরে সেখান থেকে কফিন নিয়ে যাওয়া হয় বঙ্গভবনের দরবার হলে। সেখানে বিরোধী দলীয় নেতা খালেদা জিয়া, প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক এবং বিশিষ্টজনেরা রাষ্ট্রপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বেলা বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে বঙ্গভবনের প্রধান ফটক সবার জন্য খুলে দেয়া হয়।
নিরাপত্তা নিয়ে বিশেষ কোনো কড়াকড়ি না থাকায় দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে বিভিন্ন স্তরের মানুষ শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতিকে। কেউ কেউ হাতে নিয়ে আসেন ফুল, কারো হাতে ফুলের ডালা, অনেকেই আসেন শোকের ব্যানার নিয়ে দলগতভাবে। সবার চোখে মুখেই ছিল বেদনার ছাপ।

বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া দলীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে রাষ্ট্রপতির কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর দলের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের চেয়ারপার্সন শ্রদ্ধা জানিয়েছেন। উনি বলেছেন, একজন বিজ্ঞ, প্রজ্ঞাবান রাজনীতিবীদ চলে গেলেন। এতে দেশের রাজনীতিতে যে শূণ্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ রাষ্ট্রপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, জিল্লুর রহমানের মৃত্যুতে জাতি অভিভাবকহীন হয়ে পড়ল।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, আমি গভীরভাবে শোকাহত। তার মৃত্যুতে বড় ধরনের শূণ্যতা সৃষ্টি হলো। শুধু সমসাময়িক ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে নয়, রাষ্ট্রীয় ভূমিকাতেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিলেন।
ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কুটনীতিবিদরা রাষ্ট্রপতির প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়ে শোক বইয়ে সই করেন।

জিল্লুর রহমানের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা বলেন, তার মৃত্যুতে জাতির অপূরনীয় ক্ষতি হলো। আমিও অভিভাবক হারালাম।
আর সত্তোরোর্ধ্ব অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা আব্দুস সোবহান বঙ্গভবনে এসেছিলেন রাষ্ট্রপতির পাশে দাঁড়িয়ে তার জন্য দোয়া করতে। তিনি বলেন, আল্লাহ যেন তাকে বেসেস্ত নসিব করেন, আমি এই দোয়া করেছি।
বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা দলগতভাবে রাষ্ট্রপতিকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন ব্যানার নিয়ে। ব্যক্তিগতভাবে এসে রাষ্ট্রপতির কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বিশিষ্টজনেরাও।
ফুলে ফুলে সাজানো সেনাবাহিনীর একটি পিকআপে করে বেলা ১টা ৪ মিনিটে বঙ্গভবনে পৌঁছায় রাষ্ট্রপতির কফিন। এরপর মেজর জেনারেল ও তদোর্ধ্ব পদ মর্যাদার দশজন সেনা কমকর্তা লাল গালিচার ওপর দিয়ে জাতীয় পতাকায় মোড়ানো কফিনিটি নিয়ে যান বঙ্গভবনের উত্তর অংশের শোক বেদীতে।
সেখানে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়ক ও রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের প্রতি সশস্ত্র সালাম জানানো হয়। এ সময় বেদীর বাম পাশে সেনা নৌ ও বিমানবাহিনীর উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং মন্ত্রিসভার সদস্য, রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা ও শীর্ষ রাজনীতিকরা বেদীর ডান দিকে অবস্থান করছিলেন।
জাতীয় পাতাকা, রাষ্ট্রপতির পতাকা, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পতাকা এবং তিন বাহিনীর পতাকা হাতে মাঝে দাঁড়ানো ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকশ দল।
দেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মো. জিল্লুর রহমানকে গার্ড অব অনার দেয়ার পর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী তার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান।
বঙ্গভবনের দরবার হলে নিয়ে যাওয়ার পর রাষ্ট্রপতির সাদা কফিরে ওপরে অংশ ঢেকে দেয়া হয় লাল-সবুজ পতাকায়। তবে সবার দেখার সুবিধার জন্য কফিনের ডালা তুলে রাখা হয়।
বিমানবন্দর থেকে বঙ্গভবনের শ্রদ্ধা নিবেদন- সবই চলে সশস্ত্র বাহিনীর তত্ত্বাবধানে। তবে হাজারো মানুষের চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে দেখা যায় নিরাপত্তা কর্মীদের। শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষে বিকাল ৫টায় রাষ্ট্রপতির মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের হিমঘরে। জন্মভূমি কিশোরগঞ্জের ভৈরবে শুক্রবার সকাল ৯টায় জিল্লুর রহমানের প্রথম জানাজা হবে। এরপর ঢাকার জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে জুমার পর হবে দ্বিতীয় জানাজা।
শুক্রবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে রাষ্ট্রপতিকে। সেখানে স্ত্রী আইভি রহমানের কবরেই সমাহিত হবেন তিনি।

 

জি নেওস/২২-০৩-২০১৩

Exit mobile version