স্পোর্টস ডেস্ক ঃ– যে দলকে ৮০ রানের আগেই অলআউট করে দেয়া যেত, ক্যাচ ছাড়ার মহড়া দিয়ে তাদেরই কি-না সুযোগ করে দেয়া হলো ১৮০ করার। ওয়ানডেতে এ রানও তেমন বড় কোনো টার্গেটই না। কিন্তু দায়িত্ব নিয়ে ব্যাটিং তো করতে হবে। পারেনি বাংলাদেশ। একেবারে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করেছে। নিজেদের চেনা মাঠে বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের অচেনা বলে মনে হয়েছে। এ প্রতিবেদনটি রেডিও তেহরানএর, লো-স্কোরিং এমন ম্যাচে কিভাবে ব্যাটিং করে জিততে হয়, সেটা জানা থাকলেও নিজ মাঠেই কেমন যেন অচেনা হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। উইকেটগুলো একে একে বিসর্জন দিয়ে জয়ের স্বপ্ন মিলিয়ে দিলেন তারা। লঙ্কান ইনিংসের পাঁচ পাঁচটি ক্যাচ ড্রপ করে এরপর ব্যাট হাতেও ব্যর্থতার আগুনে পুড়ে হেরে যান তারা ১৩ রানে। অথচ এত সহজ একটা ম্যাচ হাতছাড়া হবে এটা কল্পনায়ও ভাবেনি কেউ। চট্টগ্রামে দু’টি টি-২০ ম্যাচে হারের পর প্রথম ওয়ানডেতে যা দেখা গেল তাতে আত্মবিশ্বাসের গ্রাফটাও যে এখন নিচে নামতে শুরু করল টিম বাংলাদেশের। না হয় জয়ের জন্য মাঠে নামা একটা দলের ফিল্ডিং, ব্যাটিং এতটা বাজে হয় কী করে? এ ম্যাচে জয়ের জন্য ১৮১ রানের টার্গেটে দ্বিতীয় বলেই স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার মধ্য দিয়ে বিপর্যয়ের সূচনা করেন বিজয়। এরপর শামসু ও মুমিনুল কিন্তু সেটা মনে করতে দেননি। ৭৯ রানের চমৎকার এক পার্টনারশিপ খেলে বাংলাদেশকে দারুণ এক অবস্থানে নিয়ে যান। ৪৪ করে মুমিনুল আউট হলেও শামসুর ও মুশফিক খেলেন আরো একটি পার্টনারশিপ। দলের রান তখন ১১৪। এমন অবস্থায় অ্যাটাকিং ব্যাটিং করে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করে আউট হন শামসুর রহমান। তবে তার রান আউট নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ থাকলেও টিভি আম্পায়ার আনিসুর রহমান আউটই দিয়ে দেন। এ আউটই শেষ করে দেয় সব! কারণ পরের কোনো ব্যাটসম্যানই সহজ টার্গেটেও সঠিক ব্যাটিং করতে পারেননি। সাকিব, নাসির, মাহমুদুল্লাহর মতো ব্যাটসম্যানদের নিদারুণ ব্যর্থতায় হতবাক সবাই। এভাবেও কেউ বিসর্জন দেয় উইকেট? কিন্তু দিলেন তারা। মুশফিক একা দাঁড়িয়ে শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেন। কিন্তু তাকেই যে শটস নিয়ে খেলতে হতো। কী করবেন। তার পার্টনার যখন রুবেল, আল আমিন। তখন তো আর কিছু করার থাকে না। তবুও আরেকটু দায়িত্ব নিতে তিনি পারতেন। কিন্তু একাই বা কতক্ষণ টানবেন। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের একটি বল অহেতুক খেলতে গিয়ে কিপারের গ্লাভসে ক্যাচ দিয়ে আউট। ম্যাচটা শেষ হয় তখনই। এরপর শেষ জুটিতে আল আমিন রুবেল কী পারেন মালিঙ্গা, ম্যাথুসদের মতো বোলারদের মোকাবেলা করতে হয়নি। ৪৩ ওভারে নির্ধারিত ম্যাচে ৩৯.২ ওভারে রান আউটের মধ্যে শেষ ইনিংসের। বাংলাদেশ ১৬৭ রানে অলআউট হয়ে হেরে যায় ১৩ রানে। ম্যাথুস তিনটি ও সেনানায়েকে নেন দুই উইকেট। ম্যাচে টসের গুরুত্ব ছিল, যার অ্যাডভান্টেজ নেয় বাংলাদেশই। কিন্তু ব্যাট হাতে শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানদের যেন চেনাই যাচ্ছিল না। অবশ্য চেষ্টা করছিলেন তারা। কিন্তু বাংলাদেশের বোলারদের অসাধারণ বোলিংয়ের মুখে অসহায় হয়ে যান তারা। বৃষ্টিতে মাঠ খেলার উপযোগী করতে যেয়ে দেরিতে শুরু করতে হয়। যাতে ৪৩ ওভারে নির্ধারিত হয় ম্যাচ। প্রথম ব্যাটিং করতে নামা শ্রীলঙ্কা এই একটু তাড়া ছিল বৈকি রান তোলার। কিন্তু তার সাথে উইকেটের আর্দ্রতার সহায়তা নিয়ে যেন ভয়ঙ্কর হয়ে গিয়েছিলেন রুবেল আল আমিনরা। দুই পেসার প্রথম যে ১১ ওভার করেন তাতেই শ্রীলঙ্কার মূল তিন ব্যাটসম্যান সাজঘরে। তারা ছিলেন, দুই ওপেনার কুশল পেরেরা, তিলকরত্নে দিলশান, কুমার সাঙ্গাকারা। ১২তম ওভারে এসে যোগ দেন সাকিব। তিনিও প্রথম ওভারে লেগ বিফোর করেন প্রিয়ঞ্জনকে। শ্রীলঙ্কান ইনিংসে কে হাল ধরবেন সেটাই যেন ঠিক করা যাচ্ছিল না। পেস অ্যাটাকের সাথে স্পিন বল নিয়ে সাকিব, আরাফাত সানিও অব্যাহত রাখেন উইকেট পতনের ধারা। ফলে এক সময় মনে হচ্ছিল শ্রীলঙ্কাকে বুঝি ১০০ রানের মধ্যেই অলআউট করা যাবে। অবশ্য উইকেটের ধরন অনুসারে ক্রিজে পড়ে থেকে রান তুলতে হবে। শ্রীলঙ্কা এমন উইকেটে খেলে অভ্যস্ত হলেও ছোটখাটো কিছু ভুলের সুযোগে বাংলাদেশের বোলাররা যেভাবে চেপে বসেন, সেটা থেকে বের হতে পারেননি তারা। এক সময় তাদের উইকেটের পতন হয় ৮টি। দলের রান মাত্র ৬৭। এ আটজনের মধ্যে সাতজন ব্যাটসম্যান। কুলাসেকেরাও আছেন এর মধ্যে। তিনিও ব্যাটসম্যানদের মতোই করতে অভ্যস্ত ব্যাটিংয়ে। এরপর শুধু অলআউটের ক্ষণ গোনা এই আর কী! কিন্তু সব হিসাব যেন পাল্টে দিতে বসলেন নবম উইকেট জুটিতে ব্যাটিং করতে থাকা তিশারা পেরেরা ও সেনানায়েকে। তবে তাদের ওই বিশাল জুটির পেছনে তাদের চেয়েও বড় অবদান বাংলাদেশের ফিল্ডারদের। পাঁচ পাঁচটি ক্যাচ ড্রপ করে ওই সুযোগ করে দিয়েছেন। যার পুরোটাই নিয়েছেন তিশারা পেরেরা। তিনবার লাইফ পেয়ে ক্যারিয়ার সেরা ৮০ রান করে অপরাজিতও থাকেন। আর পার্টনারশিপ ৮২ রানের। যা কি না বাংলাদেশের বিপক্ষে নবম উইকেট জুটিতে সর্বোচ্চও। অথচ এ পেরেরা ব্যক্তিগত ৭, ৩০ ও ৭৬ রানে পেয়েছিলেন লাইফ। ছয়টি ছক্কা ও চারটি বাউন্ডারি দিয়ে সাজানো ছিল তার ৫৭ বলের ওই ইনিংসটি। সেনানায়েকে করেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩০। ইনিংসে আর দু’জন ডাবল ফিগারে গিয়েছিলেন। কুশল ২০ ও চান্দিমাল ১৩। বল হাতে রুবেল, সাকিব ও আরাফাত সানি দু’টি করে। এ ছাড়া আল আমিন নেন একটি।তাঃ-১৮ ফেব্রুয়ারী২০১৪।