অনলাইন ডেস্ক:- ঘুমের মধ্যে অনেক বিষয়ই আমাদের স্বপ্নে আসে যা সম্পর্কে আমরা এখনো স্পষ্টভাবে অবগত নই। ঘুমের সময় আমাদের মস্তিষ্কের মধ্যে যে পরিবর্তন হয় তার কিছুটা অনুমান সম্ভব হয়। সাধারণ ঘুম আর স্বপ্ন নিয়ে বেশ কিছু তত্ত্ব রয়েছে। অনেক গবেষণাতেই এটা উঠে এসেছে যে ঘুমের মধ্যে দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডের একটা বড় প্রভাব পড়ে। মস্তিষ্ককে দ্বিতীয় অন্ত্র হিসেবেই অভিহিত করেছেন এরিজোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুসংহত ঘুম এবং স্বপ্ন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ক্লিনিক্যাল মনোবৈজ্ঞানিক রুবিন নেইমান। তিনি জানান, রাতে মস্তিষ্ক দুইভাগে ভাগ হয়ে যায় যেখানে পরিপাকতন্ত্রের মতোই কার্যকরণ চলতে থাকে এবং তথ্য নিষ্কাশন হয়ে কল্পনাপ্রবণ বিষয়গুলো একটি অংশে জমা হতে থাকে। এই কার্যকরণ পরিপাকতন্ত্রের মতই বলে তিনি জানান। বিশেষজ্ঞদের জানানো তথ্য অনুসারে নিচে স্বপ্ন সম্পর্কেঅ কয়েকটি ভুল তুলে ধরা হলো-১,আমরা প্রতি রাতেই দীর্ঘ সময় স্বপ্ন দেখি-আপনি সম্ভবত শুনে থাকবেন যে যখন চোখের পাতা দ্রুত নড়ে তখনই মানুষ স্বপ্ন দেখে থাকে। কিন্তু নেইমান বলেন, আমরা সবসময়ই স্বপ্ন দেখছি। তবে বেশি স্বপ্ন দেখি চোখের পাতা দ্রুত নড়ার সময়। কিন্তু স্বপ্ন না দেখলেও চোখের পাতা নড়ে এটা জেনে রাখা দরকার। তিনি বলেন, রাতের শেষ তৃতীয়াংশেই স্বপ্ন দেখার ব্যাপারটা ঘটে থাকে।২, ঘুমের সময় পোকা মাকড়ের চোখের পাতা নড়ে না-কিছু স্বপ্ন চোখের পাতা নড়া ছাড়াই দেখা গেলেও REM বা দ্রুত চোখের পাতা নড়ার ঘটনা অন্য প্রজাতির প্রাণিদের মধ্যেও লক্ষ্য করা যায় বলে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন। পপুলার সায়েন্সের মতে, সব স্তন্যপায়ী ও সরীসৃপ এবং কিছু পাখির ঘুমের সময় চোখের পাতা নড়ে। তাই এদের মধ্যেও যথারীতি স্বপ্ন দেখার বিষয়টি ঘটে।৩,যদি এলার্মে শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তবে স্বপ্নের কথা মনে রাখা কঠিন- যদি আপনি এলার্মের শব্দে জেগে ওঠেন এবং ঠাহর করতে না পারেন আপনি কোথায় আছেন কিংবা ঘুম থেকে উঠে মুহূর্তের মধ্যেই মনে হবে আপনি ভেসে আছেন। নেইমান স্বপ্ন মনে রাখার উৎকৃষ্ট পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, খুব ধীরে ধীরে ঘুম থেকে উঠুন, এক মিনিটের ওপর সময় নিয়ে উঠুন, অলসতার সাথে উঠুন। দ্রুতগামী কোন ছবি সামনে রাখার খুব শক্ত চেষ্টা করবেন না। তিনি বলেন, আপনি যদি স্বপ্নকে তাড়া করেন তাহলে স্বপ্নই পালিয়ে যাবে।৪,তাদের স্বপ্নই মনে থাকে যারা মস্তিষ্কের বিভিন্ন ক্রিয়া প্রদর্শনে অভ্যস্ত-এটিও ভুল বলে প্রমাণিত হয়েছে। মস্তিষ্কের বেশকিছু স্বতঃস্ফূর্ত কার্যকরণের কারণে স্বপ্ন মনে পড়ে। ৫, স্বপ্ন দেখার সময় জেগে ওঠার শারীরিক ভঙ্গিমা-যারা স্বপ্নের মধ্যেই ঘুম থেকে পাগলের মত জেগে ওঠেন কিছু করা শুরু করেন তাদের সঙ্গে প্রকৃতিস্থ মানুষের পক্ষে কথা বলা সম্ভব হয় না। কিন্তু জীববিজ্ঞান মতে যারা ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলতে সময় নেন তাদের ইন্দ্রিয় সক্রিয় হয় বলে নেইমান জানান। তিনি বলেন, আমাদের অভিজ্ঞতা হলো, “আমাদের প্রায় হুবহু একই ভাবে শরীরে এবং মস্তিষ্কে স্বপ্ন নিবন্ধনের বিষয়টা চলে।৬, আমরা বাস্তব সময়েই স্বপ্ন দেখি-প্রচলিত আছে আমাদের স্বপ্ন দেখাটা সেকেন্ডে ভেঙে ভেঙে আসে। আদতে বাস্তবতা হচ্ছে স্বপ্ন টানা ২০ মিনিট ৩০ মিনিট এমনকি ঘণ্টাব্যাপী চলতে পারে।৭,দুঃস্বপ্ন সবসময় ভয় থেকে হয় না-খারাপ স্বপ্ন নিশ্চয়ই ভীতিকর। কিন্তু অন্যান্য কর্মক্ষত্রের আবেগ থেকেও এটা হতে পারে। ২০১৪ সালে ৩৩৩ জন মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, অনেক দুঃস্বপ্ন এবং খারাপ স্বপ্ন, বিভ্রান্তি, নিরানন্দ এবং অপরাধবোধ, ব্যর্থতার অনুভূতি, জনপ্রিয়তা হারানোর ভয় থেকে দেখা হয়। গবেষকরা এটাও জানান যে, নারীদের খারাপ স্বপ্ন সম্পর্কের দ্বন্দ্ব থেকে এবং পুরুষরা অধিকাংশ দুঃস্বপ্ন সহিংসতা বা শারীরিক আগ্রাসন থেকে দেখে থাকে।৮, আপনি অদ্ভুত না বলা পর্যন্ত স্বপ্নটা অদ্ভুত নয়-আপনি স্বপ্ন দেখছেন, এটা কোন বিষয় না যে আপনি কতটা অদ্ভুত স্বপ্ন দেখছেন। আপনি একটি সবুজ দৈত্য ও কুইন মেরির সঙ্গে তাস খেলছেন, এটাও অদ্ভুত না। আপনি ঘুম থেকে উঠে কোন স্বপ্নটা দেখেছেন এবং সেটা কতটা অদ্ভুত সেটা নির্ণয় করুন। তার সম্পর্কে আপনার অভিমতের ওপরই নির্ভর করবে সেটা কতটা অদ্ভুত ছিল। আপনি জাগ্রত অবস্থাতেই দুই ভিন্ন কোণ থেকে স্বপ্নকে ব্যাখ্যা করুন।৯, স্বপ্নেই মারা যান-মানুষের বিশাল একটা অংশ মনে করে যে স্বপ্নে মারা যাওয়া অর্থ সে মরে যাবে। কিন্তু নেইমান বলেন, এর কোন সত্যতা নেই। তিনি বলেন, আপনি যদি স্বপ্নে দীর্ঘ সময় মারা যাওয়ার সুযোগ পান তবে সেই সুযোগ গ্রহণ করুন। সূত্র- ইন্টারনেট তাঃ-২৬-০২-২০১৪