আন্তর্জাতিক ডেক্সঃ-আমেরিকা ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের মধ্যে বাগযুদ্ধটা ইদানিং বেড়েই চলেছে। এটাকে লোকদেখানো বাগযুদ্ধ হিসেবে ধরে নেয়া হলেও পরস্পরের বক্তব্য থেকে কিছু সত্য ও বাস্তব কথা বেরিয়ে আসছে। সম্প্রতি ইসরাইলি যুদ্ধমন্ত্রী মোশে ইয়ালোন তেল আবিব বিশ্ববিদ্যালয়ে এক ভাষণে বলেছেন, আন্তর্জাতিক হুমকির মোকাবেলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাসহ দেশটির নেতারা দুর্বল ভূমিকা পালন করছেন। উল্লেখ্য, বিশ্বের যা কিছু দখলদার ইসরাইলের স্বার্থের অনুকূলে নয়, সে ধরনের সব কিছুকেই বিশ্বের জন্য হুমকি হিসেবে গণ্য করে তেল আবিব। যাইহোক, ইসরাইলি যুদ্ধমন্ত্রী মোশে ইয়ালোন আরো বলেছেন, আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতির কারণে মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন মিত্ররা হতাশ হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি ইহুদিবাদী প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনালাপের সময় বলেছেন, ইসরাইলি যুদ্ধমন্ত্রী মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছেন। জন কেরি সত্য কথাটিই বলেছেন। তবে তা আংশিক সত্যমাত্র। কারণ শুধু ইসরাইলি যুদ্ধমন্ত্রী নয় বরং ইসরাইলের পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রই শান্তির বিরোধী।এর চেয়েও বড় বিষয় হলো- খোদ আমেরিকাই চায় না মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হোক। জন কেরি বা তার সহকর্মীরা মুখে যা-ই বলুন না কেন,কার্যক্ষেত্রে তারা সব সময় দখলদার ইসরাইলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।ইসরাইলের সব ধরনের অন্যায় কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়েছেন। এ কারণে অভিজ্ঞ মহল কখনোই ইসরাইল ও আমেরিকার নেতাদের বাগযুদ্ধকে গুরুত্বের সঙ্গে নেন না। ফিলিস্তিনিদের কাছ থেকে দখল করা ভূখণ্ডে ইসরাইল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে- এ কথা কেউ-ই অস্বীকার করতে পারবে না। এখনও নতুন নতুন এলাকা দখল করে সেখানে ইহুদিবাদীদের জন্য নতুন নতুন আবাসন নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু এই অবৈধ ইসরাইলকে গত ৭০ বছর ধরে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে এসেছে আমেরিকা। যখন যা প্রয়োজন হয়েছে তখনি তা আমেরিকার কাছ থেকে পেয়েছে তেল আবিব। ইসরাইলি যুদ্ধমন্ত্রী মোশে ইয়ালোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তার সরকারকে দুর্বল হিসেবে আখ্যায়িত করলেও বাস্তবতা হলো- ইসরাইলের যেসব অন্যায্য দাবি পূরণ করতে সাবেক যুদ্ধবাজ প্রেসিডেন্ট জর্জ ডাব্লিউ বুশ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছিলেন, সেসব দাবিও পূরণ করে দিচ্ছেন বারাক ওবামা। কিন্তু গত কয়েক বছরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কিছু দৃশ্যমান পরিবর্তন ঘটে গেছে। এ কারণে বারাক ওবামা ইসরাইলের পক্ষে সব কিছু করার পরও উগ্র ইহুদিবাদীরা তাতে সন্তুষ্ট থাকতে পারছে না। বিশ্বে আমেরিকার একক আধিপত্য এখন পুরোপুরি প্রশ্নের মুখে পড়েছে। এর আগে শীতল যুদ্ধ এবং এর পরবর্তী কয়েক বছর ধরে দখলদার ইসরাইল আমেরিকার সমর্থনে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে দখলদারিত্ব ও আগ্রাসনের মাত্রা অনেক বাড়িয়ে দিয়েছিল। তারা নতুন নতুন এলাকা দখল করেছে এবং মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের বিরুদ্ধে ভয়াবহ যুদ্ধও চাপিয়ে দিয়েছে। এছাড়া দীর্ঘ দিন ধরে ইসরাইল নিজেদেরকে মজলুম হিসেবে তুলে ধরে পাশ্চাত্যের কাছ থেকে যে স্বার্থ হাসিল করে যাচ্ছিল, সেটারও অবসান ঘটেছে। কারণ ইউরোপ ও আমেরিকাসহ গোটা বিশ্বের মানুষই এখন দখলদার ইসরাইলের ভণ্ডামি বুঝতে পেরেছে। এ কারণে দখলদার ইসরাইলের প্রতি আগের মতো সমর্থন বজায় রাখতে পারছে না পাশ্চাত্যের সরকারগুলো। সবচেয়ে বড় বাস্তবতা হলো, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাশ্চাত্য বিশেষকরে আমেরিকার আধিপত্য আগের চেয়ে অনেকটাই কমে গেছে। এদিক থেকে ইসরাইলি যুদ্ধমন্ত্রী মোশে ইয়ালোনের বক্তব্য অনেকটাই বাস্তবসম্মত। বাস্তবে আমেরিকার আধিপত্যে ভাটা পড়ার পরও ওয়াশিংটনের কাছে ইসরাইলি নেতাদের প্রত্যাশায় ভাটা পড়েনি। ইসরাইলের যুদ্ধমন্ত্রী মোশে ইয়ালোন বলেছেন- “দেখুন, ইউক্রেনে কী ঘটছে। দুঃখজনকভাবে আমেরিকা সেখানে দুর্বলতা দেখিয়েছে।আসলে আমেরিকা নিজে থেকে সেখানে দুর্বলতা দেখায়নি, বাধ্য হয়েই সব কিছু মেনে নিচ্ছে। আন্তর্জাতিক বাস্তবতাকে উপেক্ষা করার উপায় এখন নেই।সূত্র-রেডিও তেহরান,আমেরিকার এ দুর্বল অবস্থা ইসরাইলকে নতুন শঙ্কার মাঝে ঠেলে দিয়েছে। ইসরাইলি নেতাদের সাম্প্রতিক নানা বক্তব্য ওই শঙ্কারই বহিঃপ্রকাশমাত্র।