আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ- একজন ইরানি মা তার সন্তানের হত্যাকারীকে ফাঁসির মঞ্চে ক্ষমা করে দিয়েছেন। ইরানের প্রায় সবগুলো দৈনিকে গতকাল বৃহস্পতিবার খবরটি ছবিসহ প্রকাশিত হয়েছে। ২০০৭ সালে ১৯ বছর বয়সী বেলাল রাস্তায় কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে ছুরি মেরে তারই সমবয়সী তরুণ আব্দুল্লাহ হোসেইনযাদেহ’কে হত্যা করে। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে সম্প্রতি ইরানের সুপ্রিম কোর্ট বেলালকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যার চূড়ান্ত নির্দেশ দেয়। পবিত্র কুরআনের দিক নির্দেশনা-অনুযায়ী, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানে মারাত্মক কিছু অপরাধের রায় জনসম্মুখে কার্যকর করা হয় যাতে তা দেখে অন্যরা এসব অপরাধ করতে সাহস না পায়। ফাঁসির রায় সাধারণভাবে ভোরে সূর্যোদয়ের আগ মুহূর্তে কার্যকর করা হয় এবং এর ঘোষণা আগেই দিয়ে দেয়া হয়। গত মঙ্গলবার ভোরে ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় শহর নোশাহরে বেলালকে জনসম্মুখে স্থাপিত একটি ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে আসা হয়। এ সময় ফাঁসির দৃশ্য দেখতে সেখানে সমবেত হয় শত শত মানুষ। সমবেত জনতার মধ্যে ছিল বেলালের মা-বাবা’সহ ঘনিষ্ঠ আত্মীয়-স্বজন। কালো কাপড়ে বেলালের চোখ বেঁধে তার গলায় ফাঁসির দড়ি পরানো হয়। এ অবস্থায় নিহত আব্দুল্লাহ’র মা সামেরেহ আলীনেজাদ ফাঁসি মঞ্চের একেবারে কাছাকাছি চলে যান। দুই ছেলে এক মেয়ের মা সামেরেহ ২০১০ সালে মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় তার দ্বিতীয় ছেলেকেও হারিয়েছেন। তিনি সমবেত জনতার কাছে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনারা জানেন, সন্তানবিহীন খালি ঘরে বসবাস করা কতটা কঠিন? এরপর তিনি নিরাপত্তা কর্মীদের বলেন, “আমার সন্তানের ঘাতকের সঙ্গে আমার কথা আছে। আমাকে তার কাছে যেতে দিন।” সামেরেহ নিজ সন্তানের ঘাতকের সামনে গিয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকে একটি থাপ্পড় মারেন; বলেন, “তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম”। এরপর নিজ হাতে তার গলা থেকে ফাঁসির দড়ি খুলে দেন। এ কাজে তাকে সাহায্য করেন তার স্বামী আব্দুলগনি হোসেইনযাদেহ ও নিরাপত্তা কর্মীরা। আব্দুলগনি একজন অবসরপ্রাপ্ত পেশাদার ফুটবলার। তিনি সোমবার রাতেই তার সন্তানের ঘাতককে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু সামেরেহ এ কাজে সময় নেন ফাঁসির দণ্ড কার্যকর করার মুহূর্তে পর্যন্ত। ইরানের আইনে নিহত ব্যক্তির অভিভাবক ঘাতককে ক্ষমা করে দিলে রাষ্ট্র তার দণ্ড মওকুফ করে দেয়। আর অভিভাবক ক্ষমা না করলে রাষ্ট্রের পক্ষে দণ্ড মওকুফ করা সম্ভব নয়। নিহত আব্দুল্লাহ’র মা সামেরেহ আলীনেজাদ বলেছেন, “আমি আল্লাহতে বিশ্বাসী। আমি স্বপ্নে দেখেছি আমার সন্তান আমাকে বলছে, সে শান্তিতে আছে। এ ছাড়া, আমার সব আত্মীয়-স্বজন এমনকি আমার মা-ও ঘাতককে ক্ষমা করে দেয়ার জন্য আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন।” তিনি আরো বলেন, “ঘাতক কান্নাকাটি করে আমার কাছে ক্ষমা চায়। আমি তার গালে চড় মারি। ওই থাপ্পড় আমার ক্রোধ প্রশমিত করে। তাকে ক্ষমা করার পর আমি এখন প্রশান্তি বোধ করছি।নতুন জীবন লাভকারী ঘাতক বেলাল জানিয়েছে, প্রতিশোধ এবং ক্ষমার মাঝামাঝি অবস্থায় সে আব্দুল্লাহর মায়ের থাপ্পড় খেয়েছে। সে তার বন্ধুদের অনুরোধ করেছে, কেউ যেন চাকু হাতে ঘরের বাইরে বের না হয়। এ প্রতিবেদনটি রেডিও তেহরান এর, মানবতার মুক্তির দূত বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেছেন, প্রতিশোধের আনন্দ একদিন স্থায়ী হয়; আর ক্ষমার আনন্দ অন্তরকে প্রশান্তি দেয় চিরকাল।