অনলাইন ডেস্ক:- সব মিলিয়ে পাঁচটি বিভাগে ‘নারী শিক্ষা কোর্স’ রয়েছে জার্মানিতে’আসলে গেনিয়া গেরাসিমোভা চেয়েছিলেন শিক্ষাবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে৷ বলা যায় একান্তই মেয়েলি বিভাগ৷ কম্পিউটার বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার কথা কয়েক বছর আগে চিন্তাতেও আসেনি তাঁর৷ কিন্তু ২০১২ সালে ইন্টারনেটে একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় রুশ বংশোদ্ভূত গেনিয়ার৷ বার্লিনের প্রযুক্তি ও অর্থনীতি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ করে মেয়েদের জন্য কম্পিউটার বিজ্ঞান ও অর্থনীতিতে ব্যাচেলর কোর্স চলছে৷ এই খবরে তাঁর মনে আশা জেগে ওঠে৷গেনিয়া বলেন, ‘‘আসলে কম্পিউটার সম্পর্কে আমার ভালোই ধারণা আছে৷ তাই ভাবলাম এই জ্ঞানকে আরো প্রসারিত করার সুযোগটা হাতছাড়া করা ঠিক হবে না৷ শুধু মেয়েদের সঙ্গে ক্লাস করলে জড়তাও থাকবে না৷ ভালো অনুভব করতে পারবো৷”পাঁচটি বিভাগে রয়েছে ‘নারী শিক্ষা কোর্স‘–সব মিলিয়ে পাঁচটি বিভাগে ‘নারী শিক্ষা কোর্স’ রয়েছে জার্মানিতে৷ সবগুলিই বিজ্ঞান বিষয়ক: গণিত, কম্পিউটার বিজ্ঞান, প্রাকৃতিক বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি বিদ্যা৷ চাকরির বাজারে এক্ষেত্রে নারী কর্মীর অভাব পূরণের জন্য এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়৷ ই কোর্সের ছাত্রীদের মধ্যে অর্ধেকই ছাত্রদের সঙ্গে একত্রে কম্পিউটার বিজ্ঞানে পড়াশোনা করতে সাহস পেতেন না৷ মনে করেন বার্লিনের ‘নারী কোর্সের’ পরিচালক প্রফেসর ইউলিয়ানে সিগেরিস৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘অনেক সহপাঠীকে বহু বছর ধরে সেই স্কুল জীবন থেকেই চেনেন এই সব ছাত্রী৷ তাঁদের মনে হতো এই সহপাঠীরা ১১ বছর বয়স থেকেই অবসর সময়ে কম্পিউটারের সামনে কাটানো ছাড়া আর কিছুই করে না৷ তাই বিষয়টিতেও নিশ্চয়ই তাঁরা অনেক দক্ষ৷”প্রযুক্তি ক্ষেত্রে মেধাবী ছাত্রীদের ভীতি দূর করা –প্রযুক্তি ক্ষেত্রে মেধাবী ছাত্রীদের ভীতিটা দূর করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাই বিশেষ কর্মসূচির উদ্ভাবন করেছেন৷ ইউলিয়া সিগেরিস বলেন, ‘‘আমরা একেবারে শূন্য থেকে শুরু করি৷ বিশেষ করে কম্পিউটারভিত্তিক বিষয়গুলিতে৷ ছাত্রীরা এখানে নির্দ্বিধায় নানা রকম প্রশ্ন করতে পারেন৷ অভিজ্ঞতা থেকে আমরা জানি যে, কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা প্রায়ই অনেক শব্দকে সংক্ষিপ্ত করে বলেন, যা অনেক সময় বোঝা যায় না৷”এছাড়া পরিবারবান্ধব পরিবেশ গড়ে তোলা হয়েছে এই কোর্সে৷ ক্লাসগুলি সাধারণত ৯.৩০ থেকে ১৫.৩০-এর মধ্যে হয়৷ বাচ্চাদের জন্য খেলনাসহ বিশ্রাম কক্ষ ঠিক করা হয়েছে৷ এই বিশেষ কোর্সে অংশ নেওয়া ছাত্রীদের মধ্যে তুলনামূলকভাবে মায়ের সংখ্যা বেশি৷ এবারের শীতকালীন সেমিস্টারে ভর্তি হওয়া ৪০ জন ছাত্রীর মধ্যে সাত জনই সন্তানের মা৷ ফাতিমা এল হাসানের কাছে বাচ্চা নিয়ে পড়াশোনা করাটা ছিল এই কোর্সে ভর্তি হওয়ার মূল আকর্ষণ৷ ২২ বছর বয়সি আরব বংশোদ্ভূত এই ছাত্রী মা-বাবার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কম্পিউটার ও অর্থনীতি নির্বাচন করেন৷ মা-বাবা চেয়েছিলেন মেয়ে ডাক্তারি পড়ুক৷ফাতিমা জানান, ‘‘আমার কম্পিউটারে আগ্রহ ছিল সবসময়, কিন্তু আগে কখনও এই বিষয়ে পড়াশোনার কথা ভাবতে পারিনি৷”খুব একটা পার্থক্য নেই–যেসব কম্পিউটার কোর্সে ছেলেমেয়েরা একসঙ্গে পড়াশোনা করেন তাদের পাঠ্যক্রমের সঙ্গে খুব একটা পার্থক্য লক্ষ্য করা যাবে না এই বিশেষ কোর্সে৷ কোর্স শেষ করার পর চাকরির বাজারও উজ্জ্বল ছাত্রীদের জন্য৷ একারণে এই কোর্সে ভর্তি হওয়ার জন্য আগ্রহীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷এই প্রসঙ্গে ইউলিয়ানে সিগেরিস বলেন, ‘‘এর ফলে স্পর্শের ভীতি অনেকটাই দূর হয়ে যায়৷ এছাড়া নানা ধরনের উদ্যোগ মেয়েদের প্রযুক্তি ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করতে প্রণোদিত করছে৷ আমার মনে হয় মনের বাধাটা এখন অনেকটাই কমে গিয়েছে৷”মাস্টার্স কোর্স বা চাকরি ক্ষেত্রে আবার যে পুরুষদের সঙ্গেই তাদের পড়াশোনা বা কাজকর্ম করতে হবে, সে ব্যাপারে চিন্তিত নন ফাতিমা ও গেনিয়া৷ ইতিমধ্যে তাঁরা সুস্থ একটা আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলেছেন৷ সূত্র-DW.DE