অনলাইন ডেস্ক:- সারলান্ডের জন্য দ্বিতীয় ভাষা: ২০৪৩ সাল থেকে দাপ্তরিক কাজকর্ম ও স্কুল-কলেজে জার্মানের পাশাপাশি ফরাসি ভাষাও চালু করার পরিকল্পনা করছে সারলান্ড সরকার৷ তবে ফরাসি ভাষাকে কার্যকর করতে হলে এক প্রজন্ম লেগে যেতে পারে৷ একমাত্র দ্বিভাষিক রাজ্য-ফ্রান্সের সীমান্ত সংলগ্ন ছোট্ট রাজ্য সারলান্ডে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে এটিই হবে জার্মানির একমাত্র দ্বিভাষিক রাজ্য৷ ‘‘আমরা চাই যে সব বাচ্চা গত বছর বা এ বছর জন্মগ্রহণ করেছে, তারা এ দুটি ভাষার মধ্যে বড় হয়ে উঠুক৷” বলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সিডিইউ-র আনেগ্রেট ক্রাম্প-কারেনবাউয়ারের মুখপাত্র ক্রিস্টিয়ানে ক্লোস৷ এক্ষেত্রে নানা রকম প্রস্তাব উঠে আসছে৷ যেমন কিন্ডারগার্টেনে ফরাসি ভাষাভাষী শিক্ষক নিয়োগ করা, প্রাথমিক স্কুলে ক্লাস ওয়ান থেকেই ফরাসি শেখানো, হাইস্কুলেও ফরাসি ভাষার ওপর জোর দেওয়া ইত্যাদি৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী প্রশাসনিক কর্মীদের প্রশিক্ষণ কোর্সের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে৷ আর নতুন নিয়োগের ক্ষেত্রে দ্বিভাষিকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে৷ এখনই সীমান্ত সংলগ্ন ফ্রান্সের ল্যোথরিঙেন থেকে সারলান্ডে প্রতিদিন ১৮০০০ মানুষ চাকরি উপলক্ষ্যে যাওয়া আসা করছেন৷ রাজ্য সরকারের ইচ্ছা এই সংখ্যাটা আরো বাড়াতে৷বিত্তশালী পর্যটকদেরও আকৃষ্ট করতে চায় জার্মানির ক্ষুদ্রতম এই রাজ্যটি৷ ফ্রান্সের শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা ভাষাগত পরিকাঠামো পেলে সহজেই তাঁদের ব্যবসা-বাণিজ্য এই রাজ্যেও বিস্তৃত করতে পারবেন৷ এমনটাই আশা রাজ্য সরকারের৷আশা-নিরাশার দোলাচল-তবে এই সব প্রস্তাব বিরোধী দলকে তেমন উদ্দীপ্ত করতে পারছে না৷ সারলান্ড এমনিতেই ঋণভারে জর্জড়িত৷ প্রকৃতপক্ষে প্রশাসনকে সব দিক দিয়ে কাটছাঁট করতে হবে৷ কাটতে হবে ২.৪০০ পদ৷ ভাষার ব্যাপারে এই পদক্ষেপে খরচটা কিরকম হবে, তা এখনও অনুমান করা যাচ্ছে না, বলেন ক্লোস৷ আগামী গ্রীষ্মের মধ্যে বিভিন্ন সংগঠন ও সমিতির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালানো হবে সরকারের পক্ষ থেকে৷ কেবল তারপরই বোঝা যাবে কোন কোন পরিকল্পনার বাস্তবায়ন সম্ভব৷ তবে কিন্ডারগার্টেন ফরাসি ভাষাভাষী কর্মী নিয়োগ দেওয়াটা তেমন ব্যয়বহুল হবে না, বলেন ক্লোস৷অবশ্য লুডভিগসবুর্গের জার্মানি-ফ্রান্স সমিতির পরিচালক ফ্রাংক বাসনার মনে করেন, এই উদ্যোগের ফলে ক্ষুদ্র রাজ্যটির ওপর আরো চাপ সৃষ্টি হবে৷ ফরাসিকে প্রতিষ্ঠিত করা সহজ নয়–গোটা জার্মানিতে গড়ে ১৯ শতাংশ স্কুল শিক্ষার্থী ফরাসি ভাষা শেখে৷ কিন্তু সারলান্ডে এই হার ৫৮ শতাংশ৷ তবুও দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে ফরাসিকে প্রতিষ্ঠিত করার ব্যাপারে তা যথেষ্ট নয়৷কয়েক বছর আগে বাডেম-ভ্যুর্টেমব্যার্গেও প্রথম বিদেশি ভাষা হিসাবে স্কুলে ফরাসি চালু করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল৷ কিন্তু মা-বাবাদের প্রবল প্রতিরোধের মুখে তা ভেঙে যায়৷ এঁরা তাঁদের সন্তানদের জন্য ইংরেজিকেই প্রাধান্য দিতে চান৷ বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়৷ অবশেষে মামলায় হার হয়ে বাক্সবন্দি হয় এই পরিকল্পনা৷ফ্রাংক বাসনারের ধারণা,এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে আবার৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘রাজনৈতিক চাপ ও বলপ্রয়োগ করে কোনো কিছু সহজে অর্জন করা যায় না৷”বাধার মুখে পড়তে পারে-বাসনার মনে করেন এখানেও মা-বাবার বাধার মুখে পড়বে এই পরিকল্পনা৷ যদিও জার্মানির এই ক্ষুদ্রতম রাজ্যটি ঐতিহাসিক দিক দিয়ে ফ্রান্সের সঙ্গে যোগসূত্রে বাঁধা৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রথমে ফ্রান্সের আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয় সারলান্ড৷ ১৯৫৭ সালে এক গণভোটের মাধ্যমে সরকারিভাবে জার্মানির অঙ্গ রাজ্য হিসাবে স্বীকৃতি পায় এটি৷ তবু এখানেও আন্তর্জাতিক ভাষা হিসাবে ইংরেজিকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে, মনে করেন বাসনার৷ তাঁর কথায়, বিষয়টির একটি প্রতীকী চরিত্র রয়েছে৷সারলান্ডের চেয়ে ফ্রান্সের লোথরিঙেনে বেকার সমস্যা অনেক বেশি৷ তাই সীমানা অতিক্রম করা চাকরি বাকরির ক্ষেত্রে এক তরফা চিত্রই দেখা যাবে৷ ‘‘আসলে সারলান্ডকে তুলে ধরাই হলো এই পরিকল্পনার রাজনৈতিক লক্ষ্য৷ কেননা প্রায় ১০ লক্ষ বাসিন্দার এই ক্ষুদ্র রাজ্যটির টিকে থাকাই কঠিন৷ দ্বিতীয় একটি দাপ্তরিক ভাষার প্রবর্তন করে অন্তত বলা যেতে পারে, আমরা এখন বিশেষ কিছু৷” এই ধারণাই পোষণ করেন ফ্রাংক বাসনার৷ সূত্র:- DW.DE