জি নিউজ ডেস্কঃ- ইদানীং জার্মানিতে অনেক শিক্ষার্থী তুর্কি ভাষা শেখায় আগ্রহ দেখাচ্ছে৷ ভবিষ্যতে শুধু তুর্কি বংশোদ্ভূতরা নয়, যে কেউ স্কুলে দ্বিতীয় বিদেশি ভাষা হিসাবে তুর্কি নির্বাচন করতে পারবে৷ বহু জার্মান স্কুলেই তাই শিখানো হচ্ছে এ ভাষা৷ গেলসেনকিয়ার্শেন শহরের রিকার্ডা হুখ গিমনাসিয়ুম বা হাই স্কুলের থার্ড পিরিয়ড চলছে৷ একাদশ শ্রেণির ১৫ জন ছাত্রছাত্রী একটি তুর্কি কবিতা বিশ্লেষণ করছে৷ ‘‘কবি নারীদের নরম প্রকৃতির বলে অভিহিত করেছেন৷ যারা পৃথিবীকে সুন্দর করতে পারেন৷” ছাত্রী এনেস সেটিনার ব্যাখ্যা করে বলে৷ এটি একটি ক্রেডিট কোর্স৷ যারা এখানে বসে আছে, তারা আবিটুয়র বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার একটি বিষয় হিসাবে তুর্কি ভাষা নির্বাচন করেছে৷পাঠ্যবিষয় হিসাবে তুর্কি ভাষা-এই স্কুলটি ৩০ বছরেরও আগে পাঠ্যবিষয় হিসাবে তুর্কি ভাষার প্রবর্তন করে৷ সে সময় অভিবাসী শ্রমিকদের সন্তানদের স্কুলশিক্ষা সহজ করার জন্য এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল৷ ৬০-এর দশকে তুরস্ক থেকে খনি ও শিল্প কলকারখানায় কাজ করার জন্য এইসব শ্রমিককে আনা হয়৷ তাদের সন্তানদের অনেকে গিমনাসিয়ুমে পড়ার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ভাষার কারণে তা সম্ভব হতো না৷ স্কুলটি এই সব ছেলেমেয়েকে আবিটুয়র পরীক্ষার সুযোগ দেওয়ার জন্য তাদের ভর্তি করে নেয়৷ফ্রেঞ্চ বা ল্যাটিন ভাষার বদলে শিক্ষার্থীরা দ্বিতীয় বিদেশি ভাষা হিসাবে তুর্কি নির্বাচন করতে পারে৷ তবে যারা একেবারে তুর্কি জানে না, তাদের জন্য এই বিষয় উপযোগী নয়৷ এমনকি তুর্কি বংশোদ্ভূত সেরেনাই উল্কার মতো ছাত্রীদের পক্ষেও সহজ নয় এই ভাষা৷ ‘‘অনেকটা জার্মান ক্লাসের মতো৷ ভাষাটা জানা থাকতে হয়, ক্লাসে মুদ্রিত পাঠ নিয়ে কাজকর্ম করা হয়৷” জানায় ১৬ বছর বয়স্ক সেরেনাই৷নর্থরাইন ওয়েস্টফালিয়া রাজ্যের তথ্য অনুযায়ী গত বছর ৮,৫০০ ছাত্রছাত্রী পাঠ্যবিষয় হিসাবে তুর্কি ভাষা নির্বাচন করে আগের চেয়ে বেশি৷ এ কারণে এখন এমন একটি পাঠ্যসূচি তৈরি করা হয়েছে, যাতে শুধু তুর্কি বংশোদ্ভূতরা নয়, যে কেউ দ্বিতীয় ভাষা হিসাবে তুর্কি নির্বাচন করতে পারে৷ এই বিষয়টি নেওয়ার ব্যাপারে যেন এখন ধুম পড়ে গিয়েছে৷বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও তুর্কি ভাষার জনপ্রিয়তা বাড়ছে-এই অভিজ্ঞতা ডুইসবুর্গ-এসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তুর্কি ভাষা ইন্সটিটিউটের পিনার ও ওগুজকানেরও৷ তিনি এই ইন্সটিটিউটের গবেষণা সহকারী৷ এই ইন্সটিটিউটে তুর্কি ভাষার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়৷ ‘‘১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ৩০ জন্য শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু হয় ইন্সটিটিউটটির৷ আজ সব মিলিয়ে ৬২০ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন এই প্রতিষ্ঠানে৷” জানান পিনার৷এ কারণে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ তুর্কি ভাষা বিভাগের জন্য নুমেরুস ক্লাউসুস বা ভর্তির সীমারেখা প্রবর্তন করেছে৷ তুর্কি ভাষার এই জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি একটা কারণও ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা৷তুরস্ককে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে শক্তিশালী দেশ হিসাবে দেখা হচ্ছে জার্মানিতে৷ আর এই জন্যই পালিত হচ্ছে ‘জার্মান-তুরস্ক বিজ্ঞানের বছর’৷বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মান শিক্ষার্থীদের মধ্যেও দেশ হিসাবে তুরস্ক জনপ্রিয়৷ বিদেশে কোনো সেমেস্টার করার সুযোগ পেলে ইস্তানবুলকে নির্বাচন করেন অনেকে৷ বহু সহযোগিতামূলক কর্মসূচি রয়েছে-জার্মান-তুর্কি বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে সহযোগিতামূলক কর্মসূচি বা প্রকল্প রয়েছে হাজার খানেক৷ এর মধ্যে প্রায় অর্ধেকই ইস্তানবুলের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ডুইসবুর্গ-এসেন ইউনিভার্সিটির পিনার ওগুজকান এই প্রবণতাটা লক্ষ্য করেছেন৷ ‘‘আমাদের ইন্সটিটিউটের সব ছাত্রছাত্রীকে বিদেশে এক সেমেস্টার পড়াশোনা করতে হয়৷ এদের ৯০ শতাংশই ইস্তানবুলে যান৷”এতো উচ্ছ্বাস সত্ত্বেও রিকার্ডা হুখ গিমনাসিয়ুমের পরিচালক উর্সুলা ক্লে কিছুটা হতাশার বাণীও শোনান৷ তাঁর স্কুলে তুর্কি ভাষা শেখার আগ্রহ হ্রাস পাচ্ছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের প্রাথমিক কোর্সের শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ১৫ জন৷ এমনও হতে পারে আগামী বছর একজন ছাত্রও এই বিভাগে থাকবে না৷”পড়ার পাট চুকিয়ে তুরস্কে কাজ করার ইচ্ছা-সেরেনাই উল্কার সামনের বছর হাই স্কুল ফাইনাল পরীক্ষা বা আবিটুয়র পাশ করলে ব্যবস্থাপনা বিভাগে পড়াশোনা করতে আগ্রহী৷ তারপর তুরস্কে চাকরি ও বসবাস করতে চায় সে৷ ‘‘সেখানে সূর্য, সাগর, সৈকত সবকিছুই আছে৷” হেসে জানায় এই কিশোরী৷ পরে কিছুটা গম্ভীর হয়ে বলে, ‘‘জার্মানিতে ইন্টিগ্রেশন শুধু একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত৷ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের সুযোগ সুবিধা চমৎকার৷ কিন্তু চাকরির বাজারে তুর্কি বংশোদ্ভূত মেয়ে হিসাবে বৈষম্যের শিকার হতে হয়৷” এ প্রতিবেদনটি ডিডাব্লিউ এর,সেরেনাই শুধু তার ক্লাসে একাই নয়, আরো অনেকে স্কুল ও ইউনিভার্সিটির পড়াশোনা শেষ করে তুরস্কে যেতে আগ্রহী৷এটা দুঃখজনক, মনে করেন গবেষণাবিদ পিনার ওগুজকান৷ এইভাবে জার্মানি সুশিক্ষিত কর্মী হারাচ্ছে৷ ‘জার্মান-তুরস্ক বিজ্ঞানের বছর’ পালনের মাধ্যমে এই ক্ষেত্রে পরিবর্তন হবে বলে আশা করেন তিনি৷