স্পোর্টস ডেস্ক:– সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৭ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে স্বরূপে ফিরেছে বাংলাদেশ। দুই ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ ও প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ পথ হারানোর পর ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। কিন্তু প্রোটিয়াদের বিপক্ষে এমন দাপুটে জয়ের স্বপ্ন তিনি হয়ত কল্পনাও করেননি।
মিরপুর শেরে-বাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৪৬ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৬২ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে মাত্র ২৭.৪ ওভারে ১৬৭ রান তুলে নিয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে সমতা ফিরিয়েছে স্বাগতিকরা। পাশাপাশি ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করল বাংলাদেশ।
দক্ষিণ আফ্রিকার ছুঁড়ে দেয়া ১৬৩ রানের টার্গেটে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। অভিষেকে হ্যাটট্রিকসহ ৬ উইকেট নিয়ে হইচই ফেলে দেয়া কাগিসো রাবাদা নিজের প্রথম দুই ওভারে উইকেট নিয়ে চাপে ফেলেন স্বাগতিকদের। দ্বিতীয় ওভারেই ফিরে যান তামিম ইকবাল। তেড়ে ফুঁড়ে মারতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন তিনি। তামিম ইকবাল ফিরে গেলেও সৌম্য সরকার আর লিটন দাশ মিলে টাইগারদের রানের চাকা ঘুরাতে থাকেন। তবে, রাবাদার দ্বিতীয় শিকারে বিদায় নেন লিটন দাস। চতুর্থ ওভারে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১৭ রান। লিটন তার ইনিংসটি ১৪ বলে দুটি চার আর একটি ছয়ে সাজান।
দলীয় ২৪ রানের মাথায় তামিম-লিটনের বিদায়ের পর তিনি জুটি গড়ে তুলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের সঙ্গে। এ জুটি থেকে আসে ১৩৫ রান। যে জুটি আবার প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টাইগারদের যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে।
রিয়াদ তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৩তম অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৬৩ বলে ৫০ রান করে শেষ মুহূর্তে কাইল অ্যাবটের শিকার হয়ে বিদায় নেন। ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে জয় এনে দেয়া সৌম্য অপরাজিত থাকেন ৮৮ রানে। তার ৭৯ বলের ইনিংসে ছিল ১৩টি চার।
এর আগে স্বাগতিক বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শুরু থেকেই রানের জন্য লড়াই করতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে সব সময়ই চাপে রাখেন মুস্তাফিজ-নাসির-রুবেল হোসেনরা।
পঞ্চম ওভারে মুস্তাফিজের দারুণ এক বলে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সাব্বির রহমানকে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান কুইন্টন ডি কক। অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হাশিম আমলাকে ফেরান জুবায়ের হোসেনের বদলে দলে ফেরা রুবেল। তার চমৎকার এক বলে বোল্ড হয়ে যান দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক।
১৯তম ওভারে বোলিংয়ে এসেই আঘাত হানেন নাসির। নিজের প্রথম বলেই রাইলি রুশোকে বোল্ড করে অতিথিদের চাপে ফেলেন এই অফ স্পিনার। আক্রমণে এসে সাফল্য পান অন্য অফ স্পিনার মাহমুদুল্লাহও। ডেভিড ‘কিলার’ মিলারকে মাশরাফির ক্যাচে পরিণত করেন তিনি।
রানের গতি বাড়ানোর সংগ্রামের সঙ্গে উইকেটও ধরে রাখতে ঘাম ঝরাতে হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানদের। রানের গতি বাড়াতে নাসিরকে উড়িয়ে সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে বিদায় নেন বিপজ্জনক ফাফ দু প্লেসি। লং অনে কিছুটা দৌড়ে সর্বোচ্চ ৪১ রান করা এই ব্যাটসম্যানের ক্যাচ তালুবন্দি করেন সৌম্য।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে দক্ষিণ আফ্রিকার শেষ বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান জেপি দুমিনিকে বিদায় করেন মুস্তাফিজ। তার বলে আগেই শট খেলে শর্ট কাভারে সাব্বিরের তালুবন্দি হন দুমিনি।
এরপর রুবেল ফেরান ক্রিস মরিসকে। সাকিব আল হাসানের দুই ওভারে একটি করে চার হাঁকানো এই অলরাউন্ডারকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন রুবেল।
নিজের ষষ্ঠ আন্তর্জাতিক ম্যাচে প্রথমবারের মতো ব্যাটিংয়ে নামার সুযোগ মেলে রাবাদার। তৃতীয় স্পেলে ফিরে দারুণ এক অফ কাটারে এই তরুণকে বোল্ড করেন মুস্তাফিজ। শেষ পর্যন্ত ৩৮ রানে ৩ উইকেট নেন এই বাঁহাতি পেসার।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে নিজের তৃতীয় উইকেট নেন নাসির। ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মতো তৃতীয় উইকেট নিতে কাইল অ্যাবটকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি।
দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস দেড়শ’ পার হয় অলরাউন্ডার ফারহান বেহারদিনের দৃঢ়তায়। ৩৬ রান করা এই ব্যাটসম্যানকে সীমানায় নাসিরের ক্যাচে পরিণত করে অতিথিদের সব মিলিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অলআউট করতে অবদান রাখেন মাশরাফিও।
কোনো উইকেট না পেলেও ভালো বোলিং করেন সাকিব। ১০ ওভারে ৩০ রান দেন এই বাঁহাতি স্পিনার।
বোলিং ও ফিল্ডিংয়ে অসাধারণ নৈপুণ্যর স্বীকৃতস্বরূপ নাসির হোসেন জিতে নেন সেরা বাংলাদেশি পারফরমারের পুরস্কার। আর ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ হন সৌম্য সরকার।খবর:রেডিও তেহরান, আগামী বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হবে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।
দ. আফ্রিকাকে ৭ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে স্বরূপে ফিরেছে বাংলাদেশ
Share This