অনলাইন ডেস্ক ঃ- ট্যানজিটিনিস সারা মুখে লাল কাদামাটি মেখেছেন। কেবল ঠোঁট ও চোখের কাছটা বাদ রয়েছে। সূর্যের তাপ থেকে বাঁচতেই এটা করেছেন তিনি। দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের এক প্রত্যন্ত গ্রামে বাস করেন তিনি। বয়স তার ৩০-এর মতো।সারা দিন কড়া রোদে সবজি বাগানে কাজ করেন ট্যানজিটিনিস। আর তাই এই কাদামাটির প্রলেপ। এক ধরনের সানক্রিম আর কি! নিজের হাত দেখিয়ে বলেন তিনি, দেখুন কত কালো। সূর্যের তাপে আরো কালো হয়ে যেতে পারে নাইজেরিয়ার মানুষদের মতো। আমি তা চাই না। আর এ জন্য বাজার থেকে গিরিমাটি কেনেন এই তরুণী। খানিকটা আমাদের দেশের মুলতানি মাটির মতো। তবে এই মাটিতে রয়েছে আকরিক লোহা। এটা তিনি পানির সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট করে রোদে কাজ করার সময় মুখে মাখেন। এই পদ্ধতিটি তিনি শিখেছেন মায়ের কাছে। কৃষ্ণাঙ্গ জুলু জাতির এক দরিদ্র পরিবারের মেয়ে ট্যানজিটিনিস।
দারিদ্র্য পীড়িত গ্রাম,কয়েকটি কাঠের কুড়েঘর ও সাদামাটা সিমেন্টের বাড়ি নিয়ে গড়ে উঠেছে তার গ্রামটি। এখানকার বাসিন্দাদের জীবনযাত্রা বড়ই কঠিন। মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করেন তারা। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিজেরাই তৈরি করেন। বিলাসিতার তো প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু তবু ট্যানজিটিনিসের কাছে দেখতে সুন্দর লাগাটা গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্যে সূর্যের তাপ থেকে মুখটা বাঁচাতে চান তিনি। তার মতে, মুখটাই পুরুষদের চোখে পড়ে প্রথমে। আর গায়ের রং ফরসা হলে পুরুষরাও পছন্দ করেন। বিবাহিত হলে স্বামী গর্ববোধ করেন সুন্দরী স্ত্রী পাশে থাকলে। আর বাবারা খুশি হন সুন্দরী কন্যা ঘরে থাকলে।দক্ষিণ আফ্রিকার লিমপোপো ইউনিভার্সিটির ফটোবায়োলজিকাল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেভার্লি সামার বলেন, এই মাটি সূর্যের তাপ থেকে ত্বককে রক্ষা করে। প্রতিদিন ব্যবহার করলেও এটি বিপজ্জন নয়।সন্তুষ্ট নন আফ্রিকার মেয়েরা,কিন্তু এতেও সন্তুষ্ট নন আফ্রিকার মেয়েরা। তারা কৌটার জিনিস, মানে কেনা জিনিস দিয়ে ফরসা হতে চান। দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তরাঞ্চলের এক শপিং সেন্টারে এলে বোঝা যায়, রূপচর্চার প্রতি আফ্রিকার মেয়েরা কীভাবে ঝুঁকে পড়েছেন। এক দোকানের জানালার শো- কেসে দেখা যাবে থরে থরে সাজানো ব্লিচিং ক্রিমের কৌটা। বিক্রিও হয় প্রচুর।প্যাকেটের ওপর লেখা আছে, এই ক্রিম মাখলে ত্বকের রং মিল্ক কফির মতো ফর্সা হবে। আর এসব বর্ণনার ফাঁদে পড়ে যান বহু মেয়ে। দোকানের বিক্রেতা বলেন, অনেক মেয়েই এই ক্রিম কিনছেন, গতকাল ১০টিরও বেশি বিক্রি করেছি।জাতিসঙ্ঘের তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রতি তিনজনে একজন মেয়ে এই ক্রিম কেনেন। নাইজেরিয়ায় তো এই সংখ্যা ৭৭ শতাংশ। এছাড়া এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন কোরিয়া, মালয়েশিয়া এবং ভারতেও এই ক্রিমের জয়জয়কার। অনেক মেয়ে ২০ বছর ধরে প্রতিদিন এই ক্রিম ব্যবহার করছেন।ব্লিচিং ক্রিমে রয়েছে হাইড্রোকুইনোন নামে একটি রাসায়নিক যৌগ, যা ব্যবহার করা হয় ফটোর ডেভেলপিং-এর জন্য। নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকও ফ্যাকাশে হয়।তবে এই ক্রিমের ক্ষতিকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও কম নয়। বলেন বনের চর্ম চিকিৎসক উভে রাইনহোল্ড। তার কথায়, এতে ত্বকের প্রথম স্তর পাতলা হয়ে যায়। বহুদিন ব্যবহার করলে বলিরেখা বেড়ে যেতে পারে। হতে পারে সংক্রমণ, জ্বালাপোড়া, চুলকানি ইত্যাদি।
ইন্টারনেটের বিভিন্ন খবরাখবরে জানা গিয়েছে, এই ক্রিম ব্যবহারের ফলে ফোসকা পড়তে পারে, হতে পারে তীব্র যন্ত্রণা। এর ফলে দাগ থেকে যায় অনেক সময়। এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও উড়িয়ে দেয়া যায় না।ইউরোপীয় ইউনিয়নে হাইড্রোকুইনোন মিশ্রিত ক্রিম নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে অন্যান্য দেশে ও ইন্টারনেটে এই ক্রিম কেনা যায়। চামড়ার রং বদলানো যায় না-ড. রাইনহোল্ড জানান, তার কাছে কাছে কৃষ্ণাঙ্গ রোগীদের কেউ কেউ অনুরোধ করেন চামড়া ফরসা করার জন্য। ডাক্তারদের জন্য এক কঠিন পরিস্থিতি। আমাদের কাছে ঝুঁকিহীন, সহজ কোনো পদ্ধতি নেই, যার মাধ্যমে তাদের এই ইচ্ছা পূরণ করা যায়, বলেন এই চিকিৎসক। অসুখবিস্খু বা কোনো সংক্রমণের কারণে কালো দাগ ওঠানোর জন্য এই ধরনের ওষুধ দিতে পারেন চিকিৎসকরা। তাও ব্যবহারের সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয় তিন মাস। ডা. রাইনহোল্ড জানান, আমরা এই সব রোগীকে বুঝিয়ে বলি যে, মানুষ এভাবেই পৃথিবীতে এসেছে। সূত্র : ডয়চে ভেল। তাঃ-২২ জানুয়ারি ২০১৪