অনলাইন ডেস্ক ,জিনিউজঃ- ফিলিপাইন্সে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হাইয়ানের আঘাতে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ৷ উপকূলীয় এলাকার অনেক গ্রাম তলিয়ে গেছে৷ লন্ডভন্ড হয়ে গেছে টাকলোবান এলাকা৷ টাকলোবানে ভেঙে পড়া একটি বাড়ি -শুক্রবার ভোরে ফিলিপাইন্সের লেটে প্রদেশের রাজধানী টাকলোবানে ঘণ্টায় ৩১৩ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় হাইয়ান৷ পুলিশ কর্মকর্তা এলমার সোরিয়া রয়টার্সকে জানান, দুর্বল হয়ে ভিয়েতনাম যাওয়ার আগে ঝড়টি ঐ এলাকার ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ভবন বিধ্বস্ত করেছে৷
ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণ ভয়াবহ
তবে সরকার এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থাগুলো মৃতের সংখ্যা এখনো নিশ্চিত করেনি৷ কেননা শনিবার তারা বলেছিল নিহতের সংখ্যা ১,২০০৷ তবে সোরিয়া জানান, শনিবার রাতে স্থানীয় গর্ভনর ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে তাঁরা জানতে পেরেছেন ঝড়ে ১০ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছে৷ আর ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণটা ভয়াবহ বলে জানান তিনি৷ এদিকে, সামার প্রদেশে এখনো অন্তত ২ হাজার মানুষ নিখোঁজ বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা৷ সেখানে মৃতের সংখ্যা প্রায় ৩০০ বলে জানিয়েছেন স্থানীয় এক সরকারি কর্মকর্তা৷ টাকলোবানের এক স্কুল শিক্ষক বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছেন যে, শহরটি পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে৷ বেশিরভাগ মানুষ তাদের পরিবার ও ঘর-বাড়ি হারিয়ে মানসিক ভারসাম্য খুইয়েছেন, বলে জানান তিনি৷‘বেশিরভাগ মানুষ পরিবার ও ঘর-বাড়ি হারিয়ে মানসিক ভারসাম্য খুইয়েছেন’ জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র জানিয়েছে, ঝড়ে ৩৬টি প্রদেশের গৃহহীণ হয়েছে অন্তত ৪ লাখ ৮০ হাজার মানুষ আর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৪৫ লাখ৷ তবে উপকূলবর্তী এলাকাগুলো এতটাই লন্ডভন্ড হয়েছে যে, উদ্ধারকারীরা এখনও উদ্ধার তৎপরতা চালাতে ব্যর্থ হচ্ছেন৷ তাই প্রকৃত নিহতের সংখ্যা কত তা নিশ্চিত হওয়ার উপায় নেই৷ স্বজনদের খোঁজে এবং খাদ্যের জন্য ঘুরে ফিরছেন শত শত মানুষ৷ লেটের একজন মেডিকেল শিক্ষার্থী জানালেন, মানুষ খাদ্যের জন্য পাগলের মতো হেঁটে বেড়াচ্ছেন৷ টাকলোবানের অধিবাসীরা জানালেন, রাস্তায় রাস্তায় মানুষের মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে৷ চারিদিকে শুধু ধ্বংসের চিহ্ন৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ম্যানুয়েল রোক্সাস হেলিকপ্টারে করে টাকলোবানের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সাংবাদিকদের বলেন, একটি ভবনেরও কাঠামো নেই৷ সৈকতে যতদূরে চোখ যায় কেবল ধ্বংসের চিহ্ন, যেন কোনো সুনামি আঘাত হেনেছে৷ তিনি জানান, যা দেখেছেন, সেটা তার পক্ষে বর্ণনা করা সম্ভব নয়৷লেটে, সেবু আর সামার–সহ আটটি প্রধান দ্বীপ ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়েছে৷ কোনো কোনো হোটেলের দ্বিতীয় তলায় পানি উঠে গেছে৷ সেসব হোটেলে আটকা পড়েছেন অনেক পর্যটক৷ টাকলোবানের বিমানবন্দরে সাগরের পানি ঢুকে পড়ায় বন্ধ রয়েছে বিমানবন্দর৷ সেখানে পানির উচ্চতা ১৩ ফুটে পৌঁছেছে৷
দাতা দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি
আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাগুলো এরই মধ্যে ফিলিপাইন্স সরকারের ডাকে সাড়া দিয়েছে৷ জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি়-মুন সব ধরনের মানবিক সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন৷ মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, তারা ১ লাখ মার্কিন ডলার আর্থিক সহায়তা দেবে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্রাণকাজে সহায়তা হিসেবে ৩০ লাখ ইউরো দেয়ার কথা বলেছে৷ অস্ট্রেলিয়াও ৩ লাখ ৫৯ হাজার মার্কিন ডলার দিতে চেয়েছে৷ এদিকে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম বা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি প্রতিদিন ১ লাখ ২০ হাজার মানুষের খাদ্য সংস্থানের ব্যবস্থা করছে বলে জানিয়েছে৷
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে টাকলোবানের দোকানপাটে চলছে লুটপাট৷ এমনকি এটিএম মেশিন ভেঙে লুটপাট চালানো হয়েছে৷ ফিলিপাইন্স রেডক্রস–এর চেয়ারম্যান রিচার্ড গর্ডন জানালেন, খাবার, পানি ও তাবু বহনকারী ট্রাকগুলোতেও হামলা চালানো হয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট বেনিগনো অ্যাকুইনো জানিয়েছেন, পরিস্থিতি সামাল দিতে তাঁর সরকার ৩০০ সেনা এবং পুলিশ মোতায়েন করেছে৷ জাতিসংঘের ত্রাণ সহযোগিতা বিভাগ জানিয়েছে, ঝড়ের যেসব ছবি তারা দেখেছেন, তাতে দেখা গেছে বড় বড় জাহাজ কূলে আছড়ে পড়েছে, বিধ্বস্ত হয়েছে শত শত ঘর বাড়ি, কৃষিজমি পানিতে তলিয়ে গেছে৷ মিন্দোরো প্রদেশের বাকো শহরের ৮০ ভাগ পানির নীচে তলিয়ে গেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ৷ শুরু হয়েছে ত্রাণ তৎপরতা
চীন ও ভিয়েতনামে সতর্কতা
চীন সমুদ্রে একটি কার্গো নৌকা ডুবে ছয় আরোহী নিখোঁজ হওয়ার পর ঘূর্ণিঝড় হাইয়ানের কারণে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি করেছে চীনা সরকার৷ ঝড়ের প্রভাবে হাইনান প্রদেশে প্রবল বর্ষণ শুরু হয়েছে৷ বাতিল করা হয়েছে সেখানকার সব ফ্লাইট৷ একটি পর্যটন কেন্দ্র থেকে ১৩ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ এদিকে, ভিয়েতনামেও ঝড়ের প্রভাবে প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে, তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট৷ সরকারি ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ১১টি প্রদেশ থেকে ৮ লাখ ৮৩ হাজার মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ সোমবার ভোরে সেখানে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি৷ ১৯৭৬ সালে ফিলিপাইন্সে ভূমিকম্প ও সুনামির আঘাতে ৫ থেকে ৮ হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল৷ এবারের ঘূর্ণিঝড় সেই ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে গেল৷ খবর DW এর