শেরপুর জেলা প্রতিনিধি ঃ শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতীতে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৌরাত্বে গ্রাহকরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। বিভিন্ন অনু-সন্ধানে জানা যায়, পবিত্র মাহে রমজানের প্রথম দিন থেকেই প্রতিদিন তারাবী নামাযের ঠিক পূর্ব মূহুর্তে হঠাৎ করে বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। এ সময় তারাবীর নামায পড়তে আসা মুসল্লিরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রমজান মাসে এভাবে লোডশেডিংয়ের নামে সংযোগ বন্ধ করে দেয়ায় মসজিদসহ বিভিন্ন বাসাবাড়িতে তারাবীর নামায পড়া মুসলমানদের মারাত্মক ভাবে বিঘœ ঘটছে। প্রতিদিন কারণে-অকারণে ১০-১৫ বার বিদ্যুৎ আসা যাওয়া করছে এবং লোড সেডিংও থাকে দীর্ঘ সময় ধরে। ফলে এ উপজেলার মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। বর্তমান মহাজোট সরকার পবিত্র মাহে রমজান উপলক্ষ্যে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থার কথা বললেও এখানের বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি মোটেই আমলে নিচ্ছেন না। তারা রমজানের প্রথম দিনেই সরকারের সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে লোডশেডিংয়ের নামে বিদ্যুৎ চুরির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে। এখানের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৌরাত্বের কাছে বিদ্যুৎ গ্রাহকরা জিম্মি হয়ে পরেছে। দৈনিক ৭-৮ ঘন্টা লোডশেডিং ধরে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১০ দিন বিদ্যুৎ ব্যবহৃত না হলেও যথারীতি বিল গুনতে হচ্ছে গ্রাহকদের। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি ভৌতিক বিলের বিষয়টিও গ্রাহকদের অতিষ্ঠ করে তুলেছে দীর্ঘদিন ধরে। বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের রক্তচক্ষুর কাছে গ্রাহকরা অনেকটা অসহায় হলেও এসব ভৌতিক বিল পরিশোধ করতে বাধ্য হচ্ছে। অন্যথায় বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্নের ক্ষমতা তো তাদের কাছে রয়েই গেছে। এদিকে প্রচন্ড তাপ-দাহ ও বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে বিপর্যস্ত সাধারণ মানুষ এখন নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থার দাবি তুলেছে। কোন কারণ ছাড়াই ঘন্টার পর ঘন্টা লোডশেডিংয়ের নামে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ না করার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ নেয়ার দাবিও জানিয়েছেন ভূক্ত-ভোগী গ্রাহকগণ।অনেক সময় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নের বিষয়টিও গ্রাহকদের জানার উপায় থাকে না। বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধের সঙ্গে সঙ্গে একযোগে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মুঠোফোনটিও বন্ধ করে দেয়া হয়। অভিযোগ রয়েছে, ঝিনাইগাতীর আবাসিক প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রায় সময়ই অফিসে পাওয়া যায় না। দাফতরিক কাজের অজুহাতে তারা স্টেশনের বাইরেই থাকেন বেশি সময়। অফিস টাইমের পর তাদের মোবাইল ফোনটিও বন্ধ করে রাখেন। তাদের মোবাইল ফোনটি বন্ধ রেখে ঘুষ-বাণিজ্যের পথ সচল রাখতে গোপন মোবাইল ন¤^রও ব্যবহার করে থাকেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, আবাসিক এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রেখে উৎকোচের বিনিময়ে মিলগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ সচল রাখতে দেখা গেছে। এ জন্য উপজেলাবাসীকে পোহাতে হচ্ছে চরম ভোগান্তি। গ্রাহকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ঝিনাইগাতী বিদ্যুত অফিসের বিরুদ্ধে ভৌতিক বিলের অভিযোগ উঠে এসেছে। ডিজিটাল মিটার সংযোগ নিয়েও বিলের চাপ থেকে রেহাই পাচ্ছেন না গ্রাহকরা। অফিসের দেয়া বিলের সঙ্গে মোটেও মিল নেই মিটার রিডিংয়ের। রিডিং না দেখেই তৈরি করা হচ্ছে অনুমান নির্ভর মোটা অংকের বিদ্যুৎ বিল। অবাস্তব বিল দিয়ে গ্রাহকদের সঙ্গে রীতিমতো তামাশা শুরু করেছে এই বিদ্যুৎ অফিস। প্রতিদিন গ্রাহকরা এসব অবাস্তব বিলের কপি সংশোধনের জন্য বিদ্যুৎ অফিসে রীতিমত লাইন ধরে থাকে। এতে গুটি কয়েক গ্রাহকের সমস্যার সমাধান হলেও অধিকাংশ গ্রাহকদের মনগড়া বিলেই পরিশোধ করতে হচ্ছে বিদ্যুৎ বিল। মিটারের রিডিং না দেখে বিল করা বিদ্যুৎ বিভাগের এ যেন ডিজিটাল হয়রানী। এছাড়া রামেরকুড়া, খৈলকুড়া, তামাগাঁও, দিঘীরপাড়, কলেজরোড, থানারোড, ঝিনাইগাতী গ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্চুক বিদ্যুৎ গ্রাহকগণ এ প্রতিনিধিকে কষ্টের সাথে জানান, জুন/১৩ মাসে আমরা যে বিদ্যুৎ বিল হাতে পেয়েছি ঐ বিলের মাঝে সীলের মাধ্যমে ১০ দিনের সময় বেধে দিয়ে নোটিশ দিয়েছে, পুরাতন/নতুন এনালগ মিটার পরিবর্তন করে ডিজিটাল মিটার গ্রহন করার জন্য। অন্যথায় , বিধি মোতাবেক গড় বিল প্রদান করা হবে বলেও উল্লেখ করেছে উক্ত নোটিশ নামের শীলে। এ নোটিশ প্রাপ্তির পর অনেক গ্রাহক ডিজিটাল মিটার নেওয়ার আগ্রহ করলেও বাধা হয়ে দাড়িয়েছে মিটারে থাকা পূর্বের রিডিং। কারণ অনেক গ্রাহক তাদের মিটারে থাকা রিডিংয়ের চাইতে ২০০-১০০০ বা তারও বেশী রিডিংয়ের বিল সরকারকে ইতি মধ্যে প্রদান করেছেন। এক্ষেত্রে গ্রাহকদের পাওনা রিডিংয়ের কোন সমাধান নেই কর্তৃপক্ষের কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগ যদি কোন গ্রাহকের নিকট পাওনা পেয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে ঐ গ্রাহক সমুদয় বিল জমাদান পূর্বক ডিজিটাল মিটারের সংযোগ নিতে পারবেন। তাছাড়া গ্রাহকদের পুরাতন মিটার বিনে টাকায় অফিসে জমা নিয়ে কৌশল করে বেশী দামে তাদের মনোনীত দোকান থেকে ডিজিটাল মিটার ক্রয় করাচ্ছেন। এ বিষয় গুলোকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন যাবৎ গ্রাহকদের মধ্যে বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। এ বিষয়কে কেন্দ্র করে যে কোন সময় গ্রাহক বনাম বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাও রয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা আবাসিক প্রকৌশলী আহম্মেদ আলীর ০১৫৫২-৪৮১৪৫৯ নং না¤^ারে মুঠুফোনে কথা হলে তিনি এ প্রতিনিধিকে জানান, ডিজিটাল মিটার সংযোগের ক্ষেত্রে গ্রাহকদের পূর্বের পাওনা রিডিংয়ের পরিমান বেশী থাকলে সে ব্যাপারে আমাদের কোন করণীয় নেই, কারণ এর জন্য দায়ী ঐ সকল গ্রাহক। কেননা আমাদের জনবল কম এছাড়া দীর্ঘ দিন যাবৎ আমাদের মিটারম্যান নেই। গরমিল বিলের ব্যাপারে তারা সময় মতো মিটার দেখে অফিসে অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নিতাম। অন্যদিকে যাদের নিকট বিদ্যুৎ বিভাগ বকেয়া পাওনা রয়েছেন, তারা সমুদয় বিল ব্যাংকে জমা পূর্বক ডিজিটাল মিটারের সংযোগ নিতে পারবে। এছাড়া আমাদের করার আর কিছু নেই বলেও তিনি জানান। কাজেই এ বিষয়কে কেন্দ্র করে কানসাটের মতো কোন গটনার যেন সৃষ্টি না হয়, সে জন্যে সংশ্লিষ্ঠ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন ঝিনাইগাতী উপজেলার শান্তি প্রিয় বিদ্যুৎ গ্রাহকগণ।
জাহিদুল ইসলাম, , ঝিনাইগাতী, শেরপুর