জি এম পাশা ,বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়,রংপুর ঃদেশের উত্তরাঞ্চল তথা রংপুর বিভাগ মঙ্গা-পিড়ীত এলাকা । খেয়ে না খেয়ে অর্ধাহারে এখানকার মানুষ জীবন যাপন করে । বছরের ৮-৯ মাসই তাদেরকে ঢাকা,সিলেট ,কুমিল্লার মতো জায়গায় কাজের সন্ধানে ঘুরতে হয় । কেউ রিকসা ভ্যান চালায়,কেউ গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে দৈনিক মজুরীভিত্তিক কাজ করে । সেই খেটে খাওয়া মানুষগুলোর দীর্ঘদিনের লালিত স্ব^প্ন রংপুরে একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার।
যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করে ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হয়ে গরীব বাবা মায়ের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করবে । উত্তরের জনপদকে একটি শিক্ষিত ,রুচিশীল, দক্ষ জনগোষ্ঠীতে পরিণত করবে । সেই উদ্দেশ্য নিয়েই তৈরী হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ।
বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ২১ টি বিভাগ রয়েছে যেখানে প্রায় ৫৮৫৮ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত । পরিতাপের বিষয় হলো প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত এই নবীন বিশ্ববিদ্যালয়টি । নতুন হিসাবে কিছু অবকাঠামোগত সমস্যা থাকাই স্বাভাবিক । কিন্তু দ্বিতীয় ভিসি অধ্যাপক আব্দুল জলিল মিয়ার সময় থেকে বর্তমান ভিসি অধ্যাপক এ কে এম নুর উন নবী পর্যন্ত বহুমুখী আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়টি মাসের পর মাস বন্ধ রয়েছে । অধ্যাপক জলির মিয়ার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠলে শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের যৌথ আন্দোলনে ক্যাম্পাস অচল হয়ে যায় এবং তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন । সেই যৌক্তিক আন্দোলনের কারনেও ছাত্র ছাত্রীদের সেশনজটের মধ্যে পড়তে হয় ।
গত ২নভেম্বর থেকে শিক্ষকদের পদোন্নতিসহ নানা দাবিতে ২৭ জন শিক্ষক বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ থেকে একযোগে পদত্যাগ করেন ফলে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য ভর্তিচ্ছু প্রায় ৯০ হাজার শিক্ষার্থীর ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি। যেখানে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ক্লাসও শুরু হয়ে গেছে । প্রথমদিকে শিক্ষকরা শিক্ষক সমিতির ব্যানারে এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বেতন ভাতাসহ চাকুরী স্থায়ীকরনের জন্য পৃথক পৃথক আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল । সর্বশেষ তারা সম্মিলিত অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের ব্যানারে প্রশাসনিক ভবনসহ সবকটি একাডেমিক ভবনে তালা লাগিয়ে আমরণ অনশন পালন করছে । এর ফলে শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন আরও দুর্বল হয়ে পড়ছে ।২০০৮-২০০৯শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীরা এখনো তাদের স্নাতক শেষ করতে পারেনি। এভাবে চলতে থাকলে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া কোনো শিক্ষার্থীর সরকারী চাকুরীতে প্রবেশের বয়সসীমা থাকবেনা । কোনো অধিকার বাস্তবায়ণের জন্য শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা শিক্ষাকার্যক্রম চালানোর পাশাপাশি তাদের যৌক্তিক আন্দোলন করতেই পারে । কিন্ত ভর্তিচ্ছুক ৯০ হাজার এবং অধ্যায়ণরত প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে তাদের অধিকার বাস্তবায়ণের আন্দোলন কতটা যৌক্তিক তা প্রশ্নস্বাপেক্ষ ।
তাই অনতিবিলম্বে^ সেশনজটসহ যাবতীয় সমস্যা দুরকরে ক্যাম্পাসে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে রংপুরের পূত্রবধু,বঙ্গবন্ধু কন্যা ,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ কামনা করছি ।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অচল অবস্থা আর কতদিন
Share This