দিনাজপুর প্রতিনিধি , জি নিউজ : খনির জেলা দিনাজপুর। কয়লার খনি, পাথর খনি দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র দিনাজপুরেই অবস্থিত। এরমধ্যে সবচেয়ে আলোচিত হল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও ৮ বছরেও কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রায় আজও পৌঁছাতে পারেনি। যান্ত্রিক ত্রুটি ও সাফ ডাউনের জন্য বছরের অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে একটি ইউনিট।
দিনাজপুর পার্বতীপুর অবস্থিত দেশের একমাত্র ২৫০ মেগাওয়ার্ট কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি ৮ বছরেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। শুরু থেকে দেখা দেয় যান্ত্রিক ক্রটির ফলে একটি বেশির ভাগ তিনটি ইউনিটের মধ্যে একটি করে ইউনিট বন্ধ থাকে। এখান থেকে বিদ্যুৎ পাওয়া যায় ১০০ থেকে ১৫০ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ। আরও কখনও নেমে আসে ৬৫ থেকে ৭০ মেগাওয়ার্টে। তখন জাতীয় গ্রীডে দেখা যায় বিপর্যয়। অন্যদিকে শ্রমিক কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব, ঠিকাদারপ্রীতি, দুর্নীতি ও বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মূল্যবান যন্ত্রপাতি চুরি কিংবা পাচারসহ নানা কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পৌঁছানোর পথে বাধার সৃষ্টি হয়েছে।
বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুত অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে ডিসেম্বর মাসে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির প্রাপ্ত কয়লা দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রটি যাত্রা শুরু করে। তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মৌলিক গঠন অনুযায়ী ১২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন ৩টি ইউনিটে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। নিয়মিত সাফ ডাউন দেয়ার জন্য একটি ইউনিটকে বন্ধ রাখতে হচ্ছে।
অপরদিকে ইউনিট তিনটি স্থাপনকালে চীনা ঠিকাদারী কোম্পানি নিম্নমানের যন্ত্র ব্যবহার করে ইউনিট তিনটি স্থাপন করায় যান্ত্রিক ত্রুটি লেগেই আছে। এদিকে গত ২০০৮ সালে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়লা উৎপাদন বন্ধ থাকায় তাপ বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে স্থানীয় ঠিকাদার দ্বারা ভারতীয় কয়লা আমদানি করতে হয়েছিল। সেই সময় স্থানীয় ঠিকাদার ভারতীয় পাথর মিশ্রিত নিম্নমানের কয়লা সরবরাহ করায় সেই কয়লা ব্যবহারে তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের যন্ত্রাংশের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়।
এ কারণে গত ২০১১ সালে ইউনিট দুটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হলে অবশেষে চীনা বিশেষজ্ঞ দল এসে ইউনিট দুইটি পুনরায় মেরামত করে চালু করেন। এতে করে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৫০ মেগাওয়াটে পৌঁছাতে পারেনি বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র। উৎপাদন রেগুলেটর রেকর্ড অনুযায়ী সর্বনিম্ন ৪৫ মেগাওয়াট থেকে সর্বোচ্চ ১৯৫ মেগাওয়াট পর্যন্ত উৎপাদন হয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ এ তিনটি ইউনিট থেকে অদ্যাবধি ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে সক্ষম হয়নি।
অথচ ৩য় ইউনিটটি স্থাপন ভালভাবে পরিচালনা করলে ৭০ থেকে ৮০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সহজেই উৎপাদন করা যেত। এদিকে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী বিদ্যুত উৎপাদন না হওয়ায় লোডশেডিং এর মুখে পড়েছে দিনাজপুর, রংপুরসহ রংপুর বিভাগের আটটি জেলা। আসন্ন মৌসুমী ফসলগুলো বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন বৃদ্ধি না পেলে বিদ্যুত সঙ্কটে পড়বে কৃষকেরা।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলীর অদক্ষতা ও অর্থ হাতিয়ে নেয়ার প্রবণতার কারণেই এ অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বড় ধরনের প্রতিরোধের মুখে পড়তে পারে বিদ্যুত কেন্দ্রটি। তেমনটি হলে দেশের একমাত্র কয়লা ভিত্তিক এ বিদ্যুত কেন্দ্রটির ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন শত শত কোটি টাকা খরচ করে কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ অথবা তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন না করে স্বল্প খরচে বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ক্রটি ও দুর্নীতি মুক্ত করতে পারলে এখান থেকে পাওয়া যাবে আরও ৯০ থেকে ১০০ মেগাওয়ার্ট বিদ্যুৎ। যা লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে। তেল দ্বারা বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ইউনিট প্রতি খরচ হয় প্রায় ২৩টা ৫০ পয়সা যেখানে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হবে ইউনিট প্রতি মাত্র ৩ টাকা ৪০ পয়সা।
এদিকে বড়পুকুরিয়া কয়লার খনির কয়লা উৎপাদন অব্যাহত থাকলে দেশের বিদ্যুৎ ঘাটতি সহনশীল পর্যায়ে থাকবে বলে অনেকেই মনে করেন।
উল্লেখ্য, ২৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার তিনটি ইউনিট রয়েছে কেন্দ্রটিতে। তিনটি ইউনিটেরই ইন্সট্রাকটর, কম্পিউটার রুমের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ও আইডি ফ্যানসহ কম্পিউটার রুম, যান্ত্রিক রুম, রিলে রুম, ব্যাটারি চার্জিং রুম, টারবাইন ডিসিএস এবং কম্পিউটার মনিটর অপারেটিং সিস্টেমে ত্রুটি রয়েছে। প্রতিবার মেরামতের সময় অরিজিনাল যন্ত্রাংশ কেনার নামে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ কিনে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাত করা হয়। এতে করে দফায় দফায় মেরামত করেও স্থায়ী ফল পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্টরা।
বড়পকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র :দুর্নীতি
Share This