জি নিউজ অনলাইনঃ- ভারতের বিগত কংগ্রেস নেতৃত্বাধীনসরকারকে আওয়ামী লীগ নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। দুই দেশের অমীমাংসিতবিষয়গুলোর নিষ্পত্তি না হওয়ার জন্য ভারত নয়, আওয়ামী লীগ দায়ী বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপিচেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের ঢাকা সফরের পরপরই ভারতীয় দৈনিক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের এই মত প্রকাশ করেন তিনি।খালেদা মনে করেন, বাংলাদেশের জনগণ আন্তরিকভাবেই ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চায়।বিএনপি চেয়ারপারসন বলেছেন, ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দুই দফায় চিঠি দিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন তিনি, তাকে টেলিফোনও করেছেন।“কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তির স্বার্থকে গুরুত্ব দিয়ে নয়, দুই দেশের জনগণের স্বার্থের ভিত্তিতে এই সম্পর্ক হওয়া উচিত। এর জন্য আমি কাউকে দায়ী করছি না, তবে আওয়ামী লীগ এটা করতে তাদের বাধ্য করেছে। এবং ভারত সরকার তাদের সমর্থন দিয়েছে,” বলেন তিনি।খালেদা জিয়া বলেন, “এরশাদ এখনো বলছেন যে, তিনি নির্বাচনে যাননি। তাকে জোর করে নির্বাচনে রাখা হয়েছে। তিনি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের আবেদন করেছিলেন, যা গ্রহণ করা হয়নি।“তাই জনমনে ধারণা রয়েছে যে, ভারত সরকারের একটি ভূমিকা ছিল (৫ জানুয়ারির নির্বাচনে)।” নির্বাচনের আগে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব সুজাতা সিংয়ের ঢাকা সফরের কথাও তুলে ধরেন খালেদা জিয়া।“তিনি এইচএম এরশাদকে নির্বাচনে অংশ নিতে আহ্বান জানিয়ে বলেছিলেন, অন্যথায় নির্বাচন হবে না এবং মৌলবাদীরা ক্ষমতায় আসবে,” ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন খালেদা।“আমরা কেন নির্বাচনে অংশ নিতে পারছিলাম না তা আমরা তাকে বলেছিলাম। আমরা একটি রাজনৈতিক দল, কোনো গোপন সংগঠন নই। নির্বাচন স্বচ্ছ না হলে তাতে অংশ নেয়ার কোনো মানে নেই।” ভারতের বিগত কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকারের সঙ্গে নতুন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের নীতিতে কোনো তফাৎ আছে কি না- সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে আসার মতো সময় এখনো হয়নি বলে মনে করেন বিএনপি চেয়ারপারসন।“অবশ্য, কিছুটা পরিবর্তনই ভালো কিছুর আশার সঞ্চার করেছে। আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো-আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে কী ঘটলো এবং সর্বোপরি এ অঞ্চলে কী হল?” “তার (মোদি) সরকার কোনো বিশেষ রাজনৈতিক দল নয়, প্রতিবেশী দেশের জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে, এটা একটা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন,” বলেন তিনি।কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন সরকার আমলে বাংলাদেশের স্বার্থ সুরক্ষায় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ‘ব্যর্থ’ হয়েছে এবং এর জন্য সরকারের ‘সদিচ্ছার অভাব’ দায়ী বলে মনে করেন খালেদা জিয়া।“এটাই বাংলাদেশের জনগণের ধারণা। প্রকৃতপক্ষে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর নিষ্পত্তির মাধ্যমে বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থরক্ষায় আমাদের সরকারের ব্যর্থতা বা সদিচ্ছার অভাব দায়ী, যা বড় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে।” দুই দফায় প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ভারতের সাবেক তিন প্রধানমন্ত্রী পি ভি নরসিমা রাও, অটল বিহারি বাজপাই ও মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে কাজ করেছেন খালেদা জিয়া।কিন্তু অমীমাংসিত বিভিন্ন বিষয় বিশেষত ১৯৭৪ সালে স্বাক্ষরিত স্থল সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি সে সময় দেখা যায়নি।অবশ্য খালেদা জিয়া মনে করেন, পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় মোদি সরকার সেটা পারবে, যা আগের সরকার পারেনি।বিএনপি ক্ষমতায় এলে ভারতবিরোধী সন্ত্রাসী তৎপরতা বাড়বে বলে যে আশঙ্কা রয়েছে তাকে ‘ভ্রান্ত ধারণা’ বলে উড়িয়ে দেন খালেদা।“বিএনপি সম্পর্কে নেতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করতে এটা পরিকল্পিত অপপ্রচার।ভারত বা অন্য কোনো প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সীমান্ত ব্যবহার না করতে দেয়ার ব্যাপারে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।” ভারতে নির্বাচনী প্রচারে ‘অবৈধ অভিবাসী’ নিয়ে কথা হয়েছে বলে শুনলেও তার সঙ্গে সুষমা স্বরাজের বৈঠকে এ বিষয়ে কোনো কথা হয়নি বলে জানান খালেদা জিয়া।তিনি বলেন, “ভোটে জিততে নির্বাচনের সময় মানুষ অনেক কথা বলেন-আমরাও অনেক কিছু বলি-কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, সব কিছুই বাস্তবায়িত হবে।“আমি মনে করি না, অনেক বাংলাদেশি ভারতে গেছেন, বরং তারা এখানে বেশ ভালোই আছেন।” জোটসঙ্গী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক নিয়েও কথা বলেন দলটির চেয়ারপারসন।“তাদের সঙ্গে আদর্শিক কোনো ঐক্য নেই। এটা নির্বাচনী জোট। তারা কিছু এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে, আমরা কিছু এলাকা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করি। এর বাইরে কিছু নেই। তারা তাদের আদর্শ অনুযায়ী চলে, আমরা আমাদের আদর্শ অনুযায়ী চলি।” ভারতের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর তার বৈঠক ‘খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ’ ছিল বলে মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।“তারা এখনো সব কিছু ঠিক করে পারেনি,” মোদি সরকার নিয়ে এভাবে নিজের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন বিএনপি চেয়ারপারসন।দুই বছর আগে বাংলাদেশের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে ভারত সফর করে আসা খালেদা বলেন, মোদি তাকে সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।ভারত সফরের পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে খালেদা বলেন, “আপনারা তো জানেন এখন দেশের কী পরিস্থিতি। আমি বেশ ব্যস্ত।“এখন দেশে কোনো গণতন্ত্র নেই। দেশের পঁচানব্বই ভাগ মানুষ আমাদের সঙ্গে এবং তারা অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন চায়।” সাক্ষাৎকারে রাজনীতিতে পরিবারের প্রভাবের বিষয়টি উঠলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূমিকাও মেনে নেন খালেদা।সূত্র -ওয়েবসাইট, “বঙ্গবন্ধুর একটি ভূমিকা ছিল, জিয়াউর রহমানেরও ভূমিকা ছিল, সেজন্য তাদের পরিবারকে জনগণ শ্রদ্ধার দৃষ্টিতে দেখে, তাদের ওপর জনগণের আস্থা রাখে।