কাজী নাসির উদ্দীন, সাতক্ষীরাঃভর্তি হওয়ার তিন বছর আগেই অষ্টম শ্রেনী পাশ করে গেলেন পাটকেলঘাটার ঝড়গাছা-দৌলতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পিয়ন কাম নৈশপ্রহরী সুব্রত বিশ্বাস। সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে তিনি এই চাকরী বাগিয়ে নিয়েছেন বলে ভুক্তভোগিদের অভিযোগ। কথিত সুব্রত বিশ্বাস ঝড়গাছা গ্রামের আনন্দ বিশ্বাসের ছেলে। মোটা অংকের আর্থিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে সহযোগীতা করেছেন উক্ত বিদ্যালয়ের সভাপতি, প্রধান শিক্ষক ও তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ একটি সিন্ডিকেট। একই সাথে সার্টিফিকেট প্রদানকারী সরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও জাল সার্টিফিকেট দেয়ার একটি চক্র গড়ে তুলেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, পঞ্চম শ্রেনী পাশ সুব্রত বিশ্বাস অষ্টম শ্রেনীর ভূয়া সার্টিফিকেট দেখিয়ে ঝড়গাছা-দৌলতপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পিয়ন কাম নৈশপ্রহরী পদে সম্প্রতি নিয়োগ লাভ করেন। মানিকহার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেল বছরের অক্টোবর মাসে নিয়োগ বোর্ড অনুষ্ঠিত হয়। বোর্ডে ঝড়গাছা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি দুলাল চন্দ্র ঘোষ, প্রধান শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম ও তালা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ মনির“ল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। ভূয়া সার্টিফিকেটের কথা জেনেও এই চক্রটি চার লাখ টাকা দফারফা করেই তাকে চাকরি দেয়া হয়েছে বলে জানাগেছে। এদিকে ভূয়া সার্টিফিকেটের উপর ভর করে প্রাপ্ত চাকুরি থেকে তিনি বর্তমানে নিয়মিত বেতন ভাতা উত্তোলন করে চলেছেন। এছাড়া ঝড়গাছা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনোয়ার“ল ইসলামের বির“দ্ধে অভিযোগ রয়েছে, তিনি সেনেরগাতী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বিধান চন্দ্র ঘোষের কাছ থেকে নিয়মিত মাসোহারা নিয়ে ওই বিদ্যালয়ে কোচিং বানিজ্যের সুযোগ করে দিয়েছেন। কোচিংয়ের নামে সেখানে চলছে নানা অসামাজিক কাজ। এলাকার উঠতি বয়সের ছেলেরা খুব ভোরে কোচিংয়ে আসা মেয়েদের উত্যক্ত করাসহ নানাবিধ অভিযোগ রয়েছে।স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত ক্লাস করানোর সরকারি বিধির তোয়াক্কা না করে এই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক শ্রেনীর শিক্ষার্থীদের কোচিং করানো হচ্ছে। এদিকে সরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আমিরুল ইসলাম অষ্টম শ্রেনীর ভূয়া সার্টিফিকেট দেয়ার জমজমাট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। জানা গেছে, এক একটি সার্টিফিকেট দিয়ে তিনি কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন। আর একাজে সহযোগীতা করেন ওই বিদ্যালয়েরই জনৈক শিক্ষক। সুব্রত বিশ্বাসের সার্টিফিকেটের বিষয়ে তথ্যানুসন্ধ্যানে জানা গেছে, সরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভর্তি রেজিস্ট্রার অনুযায়ী তিনি ২০০১ সালে সরুলিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সপ্তম শ্রেনীতে উর্ত্তীর্ণ হননি। অথছ সার্টিফিকেট অনুযায়ী ১৯৯৯ সালে তিনি অষ্টম শ্রেনী পাশ করেন। প্রকৃতপক্ষে তিনি ১৯৯৫ সালে সৈয়দপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেনী পাশ করেন।
এবিষয়ে তথ্যানুসন্ধানে ঝড়গাছা-দৌলতপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গেলে এপ্রতিবেদককে কোন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানান প্রধান শি¶ক আনোয়ারুল ইসলাম। তবে সেলফোনে তিনি জানান, গত বছরের অক্টোবর মাসে সুব্রতকে নিয়োগ বোর্ডের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তার নিয়োগ বা যোগদানের ক্ষেত্রে আর্থিক সুযোগ সুবিধা নেয়ার কথা অস্বীকার করে তিনি বলেন তার সার্টিফিকেট জালিয়াতি করা হয়েছে কি না সেটা আমি বলতে পারবো না। তবে বিতর্কিত নিয়োগ গ্রহণকারি সুব্রত বিশ্বাসের অষ্টম শ্রেণির সার্টিফিকেট প্রদানকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সর“লিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শি¶ক আমির“ল ইসলাম জানান, সে সর“লিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেছে। ২০০৩ সালে অষ্টম শ্রেণী পাশ করে। পরে তার সার্বাঙ্গীন মঙ্গল কামনা করে সে বিষয়ে প্রত্যয়ন বা সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়েছে। এবিষয়ে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) কিশোরী মোহন সরকার জানান, ভর্তির আগেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অভিজ্ঞতার সার্টিফিকেট প্রদান করেছে এমন তথ্য আমার জানা নেই। যদি তেমন ঘটনা ঘটে থাকে তাহলে সেটি দুঃখ জনক। তিনি আরও বলেন, রিপোর্ট প্রকাশের পর তদন্ত করে অবশ্যই যথাযথ ভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।