আব্দুল হাকিম রাজ,মৌলভীবাজারঃ বেঁচে থাকার জন্য সারা বিশ্বে যখন শুরু হয়েছে পরিবেশ রক্ষার আন্দোলন, বাড়ানো হচ্ছে বনাঞ্চল। এর বিপরিতে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় রক্ষিত বন কেটে চা বাগান করার অনুমতি দিয়েছে ভুমি মন্ত্রনালয়। এতে করে বিলিন হতে বসেছে মনছড়া বন বিটটি। বন লিজ দিচ্ছে মাত্র ৫৫ লক্ষ টাকায়। যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির কয়েক কোটি টাকার গাছ রয়েছে। রয়েছে ১৩৪টি পরিবারের অংশিদারিত্ব ভিত্তিক সামাজিক বনায়ন। যা ১০ বছর পরে সেখান থেকে কমপক্ষে আরো আসবে ১০ কোটি টাকা। এ দিকে এ লিজ প্রদানের সংবাদ পেয়ে খুদ বন বিভাগের কর্মকর্তারা হতভম্ভ হয়ে পড়েন। সরকারের সমৃদ্ধ এই বন কেটে চা বাগান করতে না দেয়ার প্রতিবাদে রোববার সকালে বনের ভিতরেই মানবন্ধন করেছেন স্থানীয়রা।বন বিভাগ সুত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার জে এল নং ৬৬ মনছড়া মৌজার ৬৫, ৬৬, ৬৮, ৭০, ৭১ নং দাগে ২৮০.৫০ একর বনভূমি কালিটি চা বাগানের অনুকূলে সম্পূরক ইজারার চুক্তিনামা সম্পাদন করার জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব কর্তৃক স্বাক্ষরকৃত একপত্রে অনুরোধ করা হয়েছে।এ বিষয়ে সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন জানান, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর স্বাক্ষরিত পত্রের মাধ্যমে ১৯৬০ সালে মনছড়া মৌজায় ১৫২৫.০ একর ভূমি রক্ষিত বনভূমি হিসাবে ব্যবস্থাপনার জন্য বন বিভাগের নিকট হস্তান্তর করা হয়। অদ্যাবধি বন বিভাগ উক্ত বনভূমি ব্যবস্থাপনা করে আসছে। উল্লেখিত দাগ সমূহে দীর্ঘমেয়াদী বন বাগান, সেগুন বাগান, গর্জনসহ সামাজিক বনায়ন করা হয়েছে এবং এবনে ১৩৪জন উপকারভোগী নিযুক্ত আছে। বন বিভাগ অবগত হলে, সম্পূরক ইজারা প্রদানের বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট মহলকে কার্যকরী ভূমিকা রাখার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে। পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য একটি ভূখন্ডের শতকরা ২৫ভাগ বনভূমি আবশ্যক। বর্তমান পরিস্থিতি চলমান থাকলে, দেশের সুষ্ঠু পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষার জন্য বনভূমি কোথায় উপনীত হবে তা পরিবেশ সচেতনদের কাছে এক বিরাট প্রশ্ন!এই জমি সম্পর্কে জাবেদা টি কোম্পানীর লিমিটেডের কালিটি টি চা বাগানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জেলা প্রশাসকের কাছে ৭ জানুয়ারী ২০১৩ইং দাখিলকৃত লিজ প্রাপ্তির জন্য তার আবেদনে উল্লেখ করেন, তার সরকাররের কাছ থেকে লিজ নেয়া কালিটি চা বাগানের সীমানার আশে পাশে বেশ কিছু খাস জমি রয়েছে যার কিছুটা টিলাবাড়ী, টিলা জঙ্গল, সাইল এবং পুরোটাই তাদের দখলে। বাগান কর্তৃপক্ষ আরো উল্লেখ করেন দেশের চায়ের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানোর জন্য চা চাষ অনুপযোগী এই ভুমিটুকু তারা ইজারা পাওয়ার আশা রাখেন। কিন্তু বাস্তবিক সে ভুমি অনেকটা ঘন জঙ্গলে আবৃত, সেখানে রয়েছে মনছড়া বনবিট অফিস, মসজিদ ও কিছুভুমি হীনদের বাসস্থান (ভিলেজার) এবং অধিকাংশ অংশ বন বিভাগের নিয়ন্ত্রনে।প্রথমত জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদনের পর জেলা প্রশাসক কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে তদন্ত রির্পোট প্রদানের নির্দেশ দেন। কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটি সরকারের খাস জমি এবং এর ৬৯.১৬ একর স্বপ্ল মেয়াদী বনায়ন কর্মসূচী উল্লেখ করেন এবং সহকারী কমিশনার ভুমির সুপারিশকৃত চা বাগান সম্পসারন ও রাজস্ব বৃদ্ধির লক্ষে এটি লিজ দেয়া যেতে পারে বলে মন্তব্যটুকু উল্লেখ করে জেলা প্রশাসককে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেন। একই সাথে সেখানে উল্লেখ করেন সামাজিক বনায়নের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ৬৯.১৬ একর এর লিজ সম্পাদন করার। এ পত্রের অনুকুলে তৎকালিন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাজস্ব এর সুপারিশে জেলা প্রশাসক লিজ প্রাপ্তির নৈমিত্তে তা ভুমি মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করেন। ২৯ আগষ্ট ২০১৩ ইংরেজী ( দ্রুততম সময়ে) ভুমি মন্ত্রনালয়ের উপ সচিব একে এম সামছুল আরেফিন ৩০৯.৬৬ একর জমি মাত্র ২৭ লক্ষ ৭১ হাজার, ৪শত ৫৮ টাকা ক্ষতি পুরণ আদায় সাপেক্ষে জেলা প্রশাসককে লিজ দেয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তিতে প্রায় ৬ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর তা সম্পাদন না হওয়া এবং বন বিভাগের আপত্তির মূখে পুর্নবার ভুমি মন্ত্রনালয়ের উপ সচিব আব্দুল ওহাব খান গত ২৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ ইং সনে ৩০৯.৬৬ একর এর স্থলে ২৮০.৫০ একর এবং ইজারা মুল্য পূর্বের দ্বিগুন হারে নিয়ে (৫৫লক্ষ ৪২ হাজার ৯শত ১৬ টাকা) নিয়ে ইজারা প্রদানের নির্দেশ দেন ।রোববার সকালে কুলাউড়া মন ছড়া বিটের আসে পাশের এলাকাবাসী বন বিটের সেগুন বাগানে লিজ না দেয়ার দাবীতে এ মানববন্ধন করেন। এ সময় বক্তব্যদেন মনছড়া বনে সামাজিক বনায়নকারী উপকারভোগী সংগঠনের সভাপতি আছিদ মিয়া, সম্পাদক আব্দুল আজিজ, সদস্য অনুপ সাংমা, ইউছুপ আলী ও ইদ্রিছ আলী । তারা বলেন, এ বনের ভিতরে সরকারের কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে। যেখান থেকে সরকার ইতিমধ্যে শত কোটি টাকার রাজস্ব পেয়েছে। আর এই মুল্যবান সম্পদ মাত্র ৫৫ লক্ষ টাকায় কিভাবে লিজ দেয়া হয়। তা ছাড়া লিজের আবেদনকারী কালিটি চা বাগান এর আগে সরকারের কাছ থেকে যে জমি লিজ নিয়েছে চা বাগানের জন্য তার অর্ধেকও এখন পর্যন্ত চা আবাদ করতে পারেনি। তারা প্রধান মন্ত্রীর দৃষ্টি আর্কশন করে এই দুষ্ট ভুমি খেকো চক্রের হাত থেকে এলাকার পরিবেশ তথা সরকারের কোটি কোটি টাকা সম্পদ রক্ষার আবেদন জানান।